যে কারণে মেডিকেল ও ডেন্টালে পৃথক ভর্তি পরীক্ষা
ছয় বছর পর এবার সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে পৃথক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুসারে আগামী ৭ অক্টোবর মেডিকেল ও ৪ নভেম্বর ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, একত্রে পরীক্ষা গ্রহণের ফলে ডেন্টাল কলেজের অনেক আসন খালি থাকে তাই ডেন্টালের সব আসন পূরণে এবার পৃথক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
শুধু পৃথক পরীক্ষা গ্রহণেই নয়, এবার ভর্তি পরীক্ষার নম্বর ও ন্যূনতম জিপিএ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন এসেছে। অন্যান্য বছর এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে (এসএসসির ৪০ ভাগ ও এইচএসসির ৬০ ভাগ) ১০০ নম্বর ও ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে পরীক্ষা গ্রহণ করা হলেও এবার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ওপর ২০০ ও ভর্তি পরীক্ষার ১০০সহ মোট ৩০০ নম্বরের ওপর ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারিত হবে।
এছাড়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা গত বছর পর্যন্ত জিপিএ ৮ থাকলেও এখন থেকে জিপিএ ৯ না পেলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। উপজাতীদের ক্ষেত্রে জিপিএ ৭ এর স্থলে ৮ থাকতে হবে।
রোববার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে নতুন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সভায় স্বাস্থ্যসচিব, বিএমএ, বিএমডিসি, বিএমআরসি, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনরা উপস্থিত ছিলেন।
ছয় বছর পর কি কারণে এই পরিবর্তন তা জানতে চাইলে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৫ অনুসারে দেশে বর্তমানে ১০০টি মেডিকেল (সরকারি ৩০, বেসরকারি ৬৪ ও আমর্ড ফোর্সেস ৬টি) ও ৩৩টি ডেন্টাল (৯টি সরকারি ও ২৪টি বেসরকারি) রয়েছে। এমবিবিএসে মোট আসন ৯ হাজার ৬৭৯ ও বিডিএসে ১ হাজার ৮৩২টি।
তারা আরো বলেন, সর্বশেষ ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের পৃথক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় এতো বেশি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছিল না। বিগত কয়েক বছরের গৃহিত ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে একত্রে পরীক্ষা গ্রহণের ফলে মেডিকেল কলেজের আসন পূরণ হলেও ডেন্টাল কলেজে মোট আসন সংখ্যার সিংহভাগই শূন্য থেকে যায়। ডেন্টাল কলেজের উদ্যোক্তরা হতাশ হয়ে পৃথক পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে এ খরা কেটে যাবে বলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান। ডেন্টাল বিশেষজ্ঞদের আবেদনক্রমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা চায়। তাদের পরামর্শক্রমে পৃথক পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
ফলাফল নির্ধারণে ২০০ এর পরিবর্তে ৩০০ নম্বর করার কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, বিগত কয়েক বছর যাবত এসএসসি ও এইচএসসিতে ১২ বছর পড়াশুনার মূল্যায়ন মাত্র ১০০ নম্বর আর ভর্তি পরীক্ষার ১ ঘণ্টায় ১২ বছরের পড়াশোনার মূল্যায়নের সমপরিমান ১০০ নম্বরের পরীক্ষার নম্বর রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর কর্মকর্তারাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরাও বিষয়টিকে আমলে নিয়ে ১২ বছরের পড়াশুনার মূল্যায়ন করতে ১০০ থেকে ২০০ নম্বরে বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা জিপিএ ৮ থেকে ৯ করার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, বর্তমানে এইচএসসি পরীক্ষায় পাশের হার তথা জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চলতি বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ও পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২ হাজার থাকলেও এবার এ সংখ্যা ৫৮ হাজারেরও বেশি।
বিএমডিসির রেজিষ্ট্রার ডা. জাহেদুল হক বসুনিয়া জাগো নিউজকে বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা গ্রহণ পদ্ধতির (বুয়েটে নির্ধারিত শিক্ষার্থীর বেশী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারে না ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার পরীক্ষা দেয়া যায় না) প্রসঙ্গ টেনে বলেন, চিকিৎসা শিক্ষার মান বজায় রাখতে হলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর ন্যূনতম যোগ্যতা ও অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা হ্রাস করতে হবে। চিকিৎসা সেবার সার্বিক মানোন্নয়নে এ সকল সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এমইউ/এআরএস/এমএস