খালেদার জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা বাতিলের পরও কেক কেটে উল্লাস!
আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুসারীরা কেক কেটেছেন, উল্লাস করেছেন। খালেদা জিয়ার এমন সিদ্ধান্তে খোদ দলের অনেক নেতা সাধুবাদ জানালেও নেতাকর্মীরা জন্মদিন উদযাপন করায় নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে।
সূত্রমতে, গত ২৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কেক কেটে উৎসব করে জন্মদিন পালন করেননি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমনকি নেতাকর্মীদেরও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে নিষেধ করেছেন তিনি। জন্মদিনে উল্লাস না করে দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
কিন্তু পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জন্মদিনের কেক কেটে উৎসব না করলেও দলটির নেতাকর্মীরা ঠিকই কেক কেটে উল্লাস করেছেন। অনেকে কেট কেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দিয়েছেন।
বিশেষ করে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের এমন উৎসব করতে দেখা গেছে। এমনকি অনেক ছাত্রদল নেতাকর্মীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিতর্কিত পোস্টও দিতে দেখা গেছে। অনেকে লিখেছেন, ‘আজ মহান স্বাধীনতা দিবস বা বিজয় দিবস হলে কেমন হতো’?
এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটওয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকা মহানগর পূর্ব ছাত্রদল-দক্ষিণ ছাত্রদলসহ প্রায় সবগুলো ইউনিট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন করেছে। কেউ কেউ আবার কেক না কেটে মিলাদের আয়োজনও করেছেন।
এদিকে জন্মদিন কেক কেটে উৎসব না করলেও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি। সোমবার বাদ আসর নয়াপল্টন দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সদ্য ঘোষিত বিএনপির নতুন কমিটিতে প্রায় ৬০০ জনকে পদ দেয়া হলেও পদস্থ ১৫/২০ নেতা এ আয়ােজনে অংশ নিয়েছেন।
অন্যদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার চেয়ারপারসন তার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসলেও কেক না কেটে নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক কাজ করেছেন। এমনকি সোমবার জন্মদিন নিয়ে তিনি কোনো আয়োজন না করলেও একান্ত নিজের মতোই বাসভবন ফিরোজায় থেকেছেন তিনি।
তবে দেশের ‘চলমান সংকট, বন্যা পরিস্থিতি ও নেতাকর্মীদের জেল-গুম-খুনের’ কারণে খালেদা জিয়ার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
দুপুরে বায়তুল মোকাররম ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নয়, দলের পলাতক নেতাকর্মীরা আসতে পারবে না তাই এবার খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করবেন না।
তিনি বলেন, কয়লা ধুইলে যেমন ময়লা যায় না তেমনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বভাবও দ্রুত বদলাবে না।
তবে এ বছর ১৫ আগস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তার দলের অনেক নেতাও। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর দিনে ঘটা করে খালেদার জন্মদিন পালনে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ বিরক্তও ছিলেন।
গত বছর জন্মদিনের প্রথম প্রহরে খালেদা জিয়া কেক না কাটলেও ১৫ আগস্ট রাত ৯টার দিকে ঘটা করে কেক কেটেছিলেন। এবার জন্মদিনের কেক না কাটা বা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্তে খুশি বিএনপির নেতাদের অনেকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু দিবস। তিনি জাতিসত্ত্বার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন। অত্যন্ত নির্মমভাবে তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। এদিন জাতীয় শোক দিবস। এই দিনের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বার্তা বহন করে। তিনি দলের চেয়ারপারসনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান।
দলীয় প্রধান যেখানে জন্মদিনের উৎসব বাতিল করেছেন সেখানে কেক কেটে কেউ উৎসব করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করেন নেতাকর্মীরা। আগে উনাকে নিয়ে উৎসব করার সুযোগ ছিল কিন্তু এবার তা হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদেরও সেই বিবেচনা আছে, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে পালন না করে ঘরোয়া পরিবেশে উদযাপন করেছি। জন্মদিন তো সবসময় হয় না, তাই আবেগের অবস্থান থেকে উৎসব করেছে নেতাকর্মীরা।
একান্ত মনের ভালো লাগা থেকে নেতাকর্মীরা আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন বলেও মন্তব্য করেন এই ছাত্রনেতা।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ঘরোয়া পরিবেশে ভালোলাগা থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কেক কেটে উৎসব করা হয়েছে। বলা যায় অনাড়ম্বর পরিবেশে।
এই সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে খোলা আকাশের নিচে তো আনন্দ উল্লাস করার সুযোগ নেই; তাই ঘরোয়া পরিবেশে উৎসব করা হয়েছে।
তবে অজ্ঞাত কারণে মিডিয়া থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখা সভাপতি রাজিব আহসানকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন। তবে তা ছিল ঘরোয়াভাবে ও অনাড়ম্বরভাবে। বিএনপি ক্ষমতা হারিয়ে বিরোধী দলে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে এ দিনটিতে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন শুরু হয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জন্মদিন উদযপন করা শুরু করেন।
সেই থেকে প্রতি বছর বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা নেওয়া কেক ১৫ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে কাটেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এবারই তার ব্যতিক্রম হলো।
এমএম/এসএইচএস/এবিএস