মানব হয়ে উঠছেন ‘বৃক্ষমানব’


প্রকাশিত: ১১:০৫ এএম, ০৮ আগস্ট ২০১৬

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পঞ্চম তলার কেবিনে বসে কম্পিউটারের মনিটরে বাংলায় ডাবিং করা জনপ্রিয় হিন্দি কার্টুন সিরিয়াল ‘মটু-পাতলু’ দেখছিল বিরল রোগে আক্রান্ত ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজানদারের শিশুকন্যা।

আবুল বাজানদার ধীরে ধীরে রোগমুক্ত হচ্ছেন এ খবর সংগ্রহে ওই সময় একটি বেসরকারি টেলিভিশনের প্রতিবেদক সেখানে অবস্থান করছিলেন। এই মুহূর্তে টিভি ক্যামেরায় রেকর্ডিং শুরুর আগে যেইনা মনিটরের সুইচ বন্ধ করা হলো তখনই ক্ষুদে শিশুটি কান্না জুড়ে দিল।

এক গাল হেসে মেয়েকে আদর করে কাছে ডাকেন আবুল বাজানদার। আন্টিকে ইন্টারভিউ দিয়েই আবার ‘মটু-পাতলু’ চালু করে দেবেন সান্ত্বনা দিয়ে স্ত্রীকে রিমোট কন্ট্রোল মেয়ের হাতে দেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। বাবা-মেয়ের কথা শুনে মুচকি হাসেন বাজানদারের স্ত্রী। সোমবার বেলা পৌনে ১টায় সরেজমিন ঢামেকে আবুলের কেবিন পরিদর্শনকালে এ দৃশ্য দেখা যায়।

tree

ছয় মাস আগেও আবুল বাজানদার ও তার স্ত্রীর দিন কাটতো চোখের জলে। খুলনার পাইকগাছার ২৫ বছর বয়সী দরিদ্র এই ভ্যানচালক গত সাত বছর ধরে ত্বকের বিরল ‘ইপিডারমোসিপ্লাসিয়া ভেরুসিফরমিস’ রোগে ভুগছিলেন। গাছের শিকড়ের মতো বড় বড় মাংসপিণ্ডের শ্বাসমূল গজিয়ে উঠেছিল তার দুহাত জুড়ে। প্রায় ১০ কেজি ওজনের দুহাত নিয়ে চলাফেরায় জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তার।

কিন্তু সরকারি ঢামেক বার্ন ইউনিটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে এখন আবুল বাজানদারের হাত ভারমুক্ত। এখন তিনি সহজেই হাত উপরে-নিচে তুলত পারেন, নাড়াচাড়া করতে পারেন। নিজের হাতের দুরবস্থার পরিবর্তন হবে এমনটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তিনি।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আবুল বাজানদার জানান, হাসপাতালের ছোট্ট কেবিনটি এখন তার ঘরবাড়ি। সারাদিন স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলে, কম্পিউটার মনিটরে নাটক, সিনেমা, গান ও কার্টুন দেখে সময় কাটে তার। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তিনি খুব সুখী ও খুশি বলে জানান।

Tree

কয়েক বছর যাবত অসুস্থ থাকার পরও স্ত্রী সর্বদা তার পাশে থাকায় তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, সে আমাকে ভালোবাসে। স্ত্রীকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চান বলেও জানান তিনি।

আবুল জানান, তিনি নতুন করে জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখছেন। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কবীর চৌধুরী তাকে জমি দান করেছেন অবহিত করে জানান, স্যাররা আগে এক বছরের কথা বললেও এখন বলছে আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ সুস্থ হয়ে উঠবো। বাড়ি ফিরে গিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করবে বলে জানান তিনি।

সারাদেশে বার্ন ইউনিট স্থাপন প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন জানান, ৯ বার অস্ত্রোপচারের পর আবুল বাজানদার এখন অনেকটাই সুস্থ। বিরল রোগে আক্রান্ত আবুল আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তার সুস্থ হওয়ার মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য সেক্টরে সাফল্যের নতুন মাইলফলক রচিত হতে চলেছে। এ সাফল্যের পেছনে ঢামেক হাসপাতালের বার্নসহ বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Tree

এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।