কারাগার তুমি কার!


প্রকাশিত: ০৯:১৫ এএম, ০৭ আগস্ট ২০১৬

পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের লাল দালানখ্যাত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রতি কেরানীগঞ্জে স্থানান্তরিত হওয়ায় ১৭ একর আয়তনের বিশাল জমি বর্তমানে ফাঁকা পড়ে আছে। আর্থিক মূল্য বিবেচনায় লালবাগ ও চকবাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কারাগারটির জমির মূল্য হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, ঢাকা কেন্দ্রীয়সহ দেশের সব কারাগার কারা অধিদফতরের অধীনে আবার কারা অধিদফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন। ফলে ফাঁকা এ জমির মালিক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি সংগঠন ওই জমি থেকে তাদের নামে কিছু জমি বরাদ্দের দাবি জানাতে শুরু করেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে তাদের আবাসিক ভবন নির্মাণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন।

জানা গেছে, গত বছরের ২৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে জায়গাটি স্থায়ীভাবে লিজ প্রদানের জন্য স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন করলেও সাড়া পায়নি।

এছাড়া ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জায়গায় খেলার মাঠ, পার্ক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির দাবিতে গত সপ্তাহে চারুকলার সামনে মানববন্ধন করে ১৩টি পরিবেশবাদী সংগঠন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনও ফাঁকা জেলখানার জমি লিজ নিয়ে নগরবাসীর জন্য ‘চমকপ্রদ’ কিছু একটা করে দেখাবেন বলে তার ঘনিষ্ঠদের বলেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এ এলাকার এক কাঠা জমির মূল্যে সর্বনিম্ন ৭০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। তাই জেলখানার জমির ওপর অনেকের লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। অবস্থাদৃষ্টে কবির ভাষায় ‘কারাগার তুমি কার’ বলতে ইচ্ছে করছে বলে তারা মন্তব্য করেন।

এককালের মোগল দুর্গ ও পরবর্তীতে ১৯ শতকের শুরুর দিকে সংস্কারের মাধ্যমে জেলখানায় রূপান্তরিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি বহুল স্মৃতিবিজড়িত। রাজনীতি, ইতিহাস ঐতিহ্য ও প্রত্মতত্ত্বসমূহকে ধরে রেখে কীভাবে জমির সদ্ব্যবহার করা যায় সে ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা চলছে।

কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক ও কারা অধিদফতরের আইজিকে (প্রিজন) সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে কমিটি গঠিত হয়েছে। অপর তিন সদস্য হিসেবে রয়েছেন একজন ইতিহাসবিদ, স্থাপত্যবিদ ও একজন প্রত্মতত্ত্ববিদ। পাঁচ সদস্যের এ কমিটি ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা প্রস্তাব আকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার পৃথক দুটি স্মৃতি জাদুঘর, কারাকল্যাণ ভবন ও কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। কারা ভবনে থাকবে সুইমিংপুল, ব্যায়ামাগার, বহুতল পার্কিং, আধুনিক শপিং কমপ্লেক্স ও সিনেপ্লেক্স। এছাড়া বাইরের অংশে থাকবে সবুজ উদ্যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই কারাগারের তিনটি কক্ষে বন্দি করে রাখা অবস্থায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই সেলগুলো ঘিরেই মূলত চার নেতার জাদুঘরটি তৈরি করা হবে।

এছাড়া কারাগারের সঙ্গে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের পাশে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ করা হবে। বাকি জমিতে নির্মাণ করা হবে কারা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

কারা অধিদফতরের এআইজি (প্রশাসন) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন সম্প্রতি জাগো নিউজকে বলেন, ফাঁকা কারাগারের জমিতে কী হবে সে ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, কারাগারের ফাঁকা জমিতে কী হবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করবে।

এমইউ/বিএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।