জিহাদে উদ্বুদ্ধ করতেই কল্যাণপুরে আসতো ‘জঙ্গিরা’


প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৬

কল্যাণপুরে যে বাসাটিতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছিল সেখানে নিয়মিত যাতায়াত ছিল অন্য জঙ্গি সদস্যদের। তারা নিজেরা জিহাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতো। জেএমবির দেয়া গোলাবারুদ, অর্থ ও অস্ত্র সরবরাহ করতো। প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের জন্যও মিলিত হতো তারা। সোমবার রাতে কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এখান থেকে পলাতকদেরও আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। ঘটনার আদ্যোপান্ত খতিয়ে দেখতে তাদের হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ।

সোমবার রাতে কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ৫নং রোডের ৫৩নং ওই জাহাজ বিল্ডিংয়ে (তাজ মঞ্জিল) জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে। যেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপারেশন স্টর্ম-২৬ এ ৯ জঙ্গি নিহত হয়। তবে পালিয়ে যায় ইকবাল নামে একজন। আহতাবস্থায় ধরা পড়ে মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান। তার বাড়ি বগুড়া সদরের জামিলনগরে।

আহতাবস্থায় আটক হাসান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, পুলিশের অপারেশনের আগে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট করা হয়েছে। যাতে করে পুরো নেটওয়ার্কটি ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যায়। তবে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট কিছু ছবিসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত হাতে পেয়েছে। যাতে করে তদন্তে অগ্রগতি আসবে বলে দাবি পুলিশের।

আটক হাসান পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে ওই রাতের ঘটনায় পলাতক ইকবাল, তামিম চৌধুরী, রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজের।

কল্যাণপুরের ওই বাসাটির বাসিন্দারা বেভিরভাগই ব্যাচেলর হওয়ায় তাদের যাওয়া ও আসা ছিল প্রায় প্রশ্নাতীত। সঙ্গত কারণে তারা জাহাজ বিল্ডিং নামে পরিচিত ওই বাসায় মিলিত হয়ে নিহত আবু হাকিম নাইম ছাড়া, আব্দুল্লাহ, তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান খান, সাজাদ রউফ ওরফে অর্ক, মো. মতিয়ার রহমান, ও মো. জোবায়ের হোসেনকে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করতো। তবে অপারেশনের ওই রাতে হাসান ছাড়া অন্যদের ধরতে পারেনি পুলিশ। বাকিরা ওই রাতেই পালিয়েছিল নাকি কেউ উপস্থিত ছিল না এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাসানের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ পলাতকদের নাম জেনে মামলার আসামি করেছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র জানায়, কল্যাণপুরের ওই আস্তানায় পুলিশের অভিযানের আগে জঙ্গিরা কথিত আইএসের বেশে কালো পোশাক পরে ছবিও তুলেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ওই আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত আলামতের মধ্যে কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে এসব উদ্ধার করে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্র আরও জানায়, জঙ্গিরা ওই আস্তানায় জড়ো হয়েছিল বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা নিয়ে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি ঘটনার পর আইএসের আমাক এজেন্সি যে ছবি প্রকাশ করেছিল এসব ছবিও একই।

জঙ্গিরা জেএমবির সদস্য হলেও তারা আইএসের আদর্শের অনুসারী। এ কারণে তারা আইএসের পতাকা পেছনে রেখে ছবিগুলো তুলেছিল। তবে অভিযানের পর উদ্ধার করা দুটি পেনড্রাইভ থেকে অস্ত্র পোজ দিয়ে ছবিও তুলেছিল।

কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তাদের ধারণা, ছবিগুলো কয়েক দিন আগে তারা তুলেছিল। সেগুলো পেনড্রাইভে সংরক্ষিত করে কোনো মাধ্যমে তা আইএসের আমাক ম্যাগাজিনের কোনো প্রতিনিধির কাছে পাঠানো হতো।

কল্যাণপুরের ওই বাসা থেকে অভিযানের পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। যেখানে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী চক্র। তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি এই নেটওয়ার্কের অর্থদাতা, অস্ত্রের যোগানদাতা কারা তা জানার চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছি। যে গুলো যাচাই-বাছাই চলছে। ওই সব তথ্য ধরেই অর্থদাতা, অস্ত্রের যোগানদাতাসহ মাস্টারমাইন্ড কারা তা জানা যাবে।

জেইউ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।