পুলিশের আচরণকে অপেশাদার বললেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর


প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ২৬ জুন ২০১৬

জামাতা বাবুল আক্তার মেয়ে মাহবুবা আক্তার মিতু হত্যা মামলার বাদী। বাদী হিসেবে তদন্তকারী সংস্থা কিংবা তদন্ত কর্মকর্তারা চাইলে তার সঙ্গে কথা বলতেই পারেন কিংবা ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই পারেন। কিন্তু হুটহাট মধ্যরাতে ডেকে নিয়ে যাওয়া, দীর্ঘ সময় কোনো খোঁজ না দেয়া, কোথায় আছে না আছে এমন তথ্য না দিয়ে মৌনতা দেখানো ঠিক হয়নি। এটা এক ধরনের অপেশাদার আচরণ বলে মন্তব্য করেছেন এসপি বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

তিনি বলেন, পুলিশের মৌনতা দুটি পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। দীর্ঘ উৎকণ্ঠার মধ্যেই গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যম চটকদার খবর প্রকাশ করে, যা অত্যন্ত গর্হিত ও বিবেক বিবর্জিত মনে হয়েছে।

Babul

পুলিশ মৌনতা ভঙ্গ করে যদি শুধু বলতো, ‘বাবুল আক্তার ওমুক কর্মকর্তার হেফাজতে আছে অথবা ডিবি কিংবা ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে অবস্থান করছে। তাহলেই এতো সব গুজব কিংবা উৎকণ্ঠা দেখা দিত না। সংবাদকর্মীদেরও দিনভর ছুটোছুটি করতে হতো না।’

রোববার দুপুরে একান্ত আলাপচারিতায় জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন এসপি বাবুলে আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন।

স্ত্রী হত্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার গভীর রাতে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে সাড়ে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। পরে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়।
 
Babul

পুলিশ সুপার পদের একজন কর্মকর্তাকে এভাবে গভীর রাতে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাদের মাঝেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
 
আবার বাবুলকে নিয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে স্বজনদের মধ্যে তৈরি হয় সন্দেহ আর উদ্বেগ। রাত পেরিয়ে দিনভর সংবাদমাধ্যমে খবর আসায় গুঞ্জন ডালপালা মেলতে শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিশেষ করে দুপুর পর্যন্ত পুলিশের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি না হওয়ায় বেশি সমালোচনা ও উদ্বেগ দেখা দেয়। তাকে কেন নেয়া হয়েছে, কোথায় নেয়া হয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি না এসব প্রশ্নে পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা নীরব ছিলেন।
 
যদিও পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মামলার বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারকে ডেকে নেয়া হয়েছিল। কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের বাবুল চেনে কিনা ও তাদের দেয়া বক্তব্য ঠিক আছে কিনা তা যাচাই করতেই বাবুলকে ডাকা।

অন্যদিকে, রোববার এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আইন মেনেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমরা তাকে কল করেছিলাম (ডেকেছিলাম), তুলে নিয়ে যাইনি। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। আমরা তো আর তাকে সিএনজি বা রিকশায় আসতে বলতে পারি না। সেজন্য পুলিশের গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। মামলার বাদী, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতেই পারে।
 
রোববার দুপুরে ঢাকার খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ার (বাসা নং ২২০/এ) বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, বারান্দায় বসে আছেন বাবুল আক্তারের শ্বশুর। বাবুল আক্তারের দুই সন্তান খেলাধুলা করছে। নিহত মিতুর ছোট বোন শায়লা মোশাররফ নিনজা তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছিলেন।
 
পুলিশে বাবুল আক্তারকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর কেন লুকোচুরি করেছে দিনভর জানতে চাইলে জাগো নিউজেকে মোশাররফ হোসেন বলেন, পুলিশ বাবুলকে ডেকেছে এটা কোনো অপরাধ নয়। বরং মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা কিংবা কোনো তথ্য জানতে চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, মধ্য রাতে ডেকে নিয়ে যাবেন। কোথায় নিয়ে গেলেন কেন নিয়ে গেলেন সে ব্যাপারে আবার কোনো তথ্য না দিয়ে মুখে তালা মারবেন।
 
পুলিশের এমন আচরণ অপেশাদার মন্তব্য করে বাবুল আক্তারের শ্বশুর আরো বলেন, পুলিশের এমন মৌনতার সুযোগেই চটকদার খবর বেরিয়েছে। এ সুযোগে একটি চক্র এসব ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পুলিশ যদি শুধু এতোটুকু তথ্য দিতো যে বাবুল ডিবি কিংবা কমিশনারের কার্যালয়ে রয়েছে, তাহলে এতো উদ্বেগ দেখা দিতো না কিংবা বাজে খবরও বের হতো না।

বাবুল কেন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান না জানতে চাইলে তার শ্বশুর বলেন, হয়তো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে কথা না বলার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। ও মাইগ্রেনের ব্যথায় ভুগছে।
 
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন বাবুলের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার মিতু।
 
স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকছেন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। বাবা আবদুল ওয়াদুদ মিয়াও পুলিশে চাকরি করেছেন।
 
খুনের ঘটনায় নয়জনের একটি দল জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে চারজন খুনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। পুলিশ এ চারজনের মধ্যে মুসা, নবী ও ওয়াসিম নামের তিনজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এদের একজন বাবুলের সোর্স ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পারেন।

জেইউ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।