যারা ট্রাফিক আইন তৈরি করেন তারাই ভাঙেন


প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ২২ জুন ২০১৬

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য বাক্য ছুড়ে দেন মধ্য বয়সী এক রিকশাচালক। ‘অই... ট্রাফিক। ২০ মিনিট ধইরা খাঁড়ায়া রইছি, সিগন্যাল কি ছাড়বি নাকি ছাড়বি না।’ প্রচণ্ড গরমে শরীর বেয়ে দর দর করে ঘাম ঝরছিল তার। দীর্ঘক্ষণ সিগন্যালে আটকে থেকে ধৈর্য হারিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে গালমন্দ করছিলেন তিনি।

দুপুর তখন ঠিক পৌনে ১টা। নীলক্ষেত চার রাস্তার মোড়ে প্রচণ্ড যানজট। অতিরিক্ত যানজট ঠেকাতে ইডেন কলেজ থেকে মিরপুর রোডমুখী রাস্তাটি একমুখী করে দেয়া হয়। চারদিক থেকে চলাচলরত অজস্র যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

car

ঠিক ওই মুহূর্তে নিউমার্কেট থেকে নীলক্ষেত মোড়ে যাওয়ার বিপরীত দিক থেকে ইর্মাজেন্সি সাইরেন বাজিয়ে ছুটে আসলো ডাক ও টেলিযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেট কার। ফলে ওই স্থানটিতে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। নীলক্ষেত মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ রিকশাচালকদের কারণে গাড়িটি এগুতে পারছিল না। তবু মন্ত্রণালয়ের চালক ঘন ঘন সাইরেন বাজিয়ে চলেছেন।

এ সময় তার কাছে ছুটে যান কর্তব্যরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মুহিব। তিনি গাড়িচালককে পাশে সাইড করিয়ে ভদ্রভাবে জানতে চাইলেন, ‘ড্রাইভার ভাই, উল্টো পথে আসলেন কেন?’

car

ফয়েজ আহমেদ নামের ওই গাড়ি চালক ইতস্তত করে আঙুল দিয়ে অদূরের একটি ভবন দেখিয়ে বললেন, ‘স্যার ওই ভবনের সব সরকারি গাড়ি এ পথেই চলে।’ এমন কথায় হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সার্জেন্ট মুহিব এবার ফয়েজের ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ইন্স্যুরেন্সের কাগজপত্র দেখতে চাইলেন।

জবাবে গাড়িচালক বলেন, ‘স্যার, গাড়ির মালিক মাহবুব রশীদ, উনি পোস্টমাস্টার জেনারেল, কেন্দ্রীয় সার্কেল।’ এবার ধৈর্য হারিয়ে সার্জেন্ট মুহিব ধমক দিয়ে তাকে বললেন, ‘যে কোনো একটা কিছু তো দেখাবেন! উল্টো পথে গাড়ি যাবে না। যান, ঘুরে আসুন।’

cer

সার্জেন্ট মুহিব যখন সাদা রংয়ের প্রাইভেট কারটি পেছনে যেতে বাধ্য করেন, ঠিক তখনই উল্টো পথে লাল রংয়ের একটি জিপ গাড়িকে (ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৪-১৩৮৪) ছুটে আসতে দেখা যায়। হাত উঁচু করে থামাতে গিয়ে সার্জেন্ট মুহিব লক্ষ্য করলেন গাড়িটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তবু তিনি দমলেন না।

গাড়ি পাশে থামিয়ে সার্জেন্ট গাড়ির মালিক কে জানতে চাইলে ড্রাইভার জানালেন, গাড়িটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তীর। ডাক বিভাগের গাড়িটিকে ফেরত যেতে বাধ্য করতে পারলেও এ গাড়িটি কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি।

car

কেন গাড়িটি ছেড়ে দিলেন এ প্রশ্নের জবাবে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে সার্জেন্ট মুহিব বলেন, সাংবাদিক ভাই, সবই তো বোঝেন?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নীলক্ষেত এলাকায় দায়িত্বরত একাধিক ট্রাফিক সার্জেন্ট ও কনস্টেবল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা আইন তৈরি করেন তারাই ভাঙেন। আর যানজট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার দোষ চাপে ট্রাফিক পুলিশের ঘাড়ে। ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলে আবার তারা ব্যস্ত হয়ে পড়েন যানবাহন নিয়ন্ত্রণের কাজে।    

এমইউ/এএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।