বদলে যাবে ময়লার গল্প


প্রকাশিত: ০৮:৩৫ এএম, ১৮ জুন ২০১৬

বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে শেষ পর্ব: বদলে যাবে ময়লার গল্প

ময়লার ভাগাড় মানেই দুর্গন্ধের গল্প। এই দুর্গন্ধ সহ্য করা যে কারো জন্যই কঠিন এক কাজ। নাকে-মুখে হাত চেপে, নিঃশ্বাস বন্ধ করেও সে দুর্গন্ধ এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব।  

অন্যদিকে বিনোদন কেন্দ্র মানেই হাসি-আনন্দের গল্প। ব্যস্ত নাগরিক জীবনের কাঠখোট্টা বাস্তবতা থেকে দু’দণ্ড রেহাই পাওয়ার অবকাশ দেয় বিনোদন কেন্দ্রগুলো।

রাজধানীর মাতুয়াইলের ময়লার ভাগাড়কে মাটিচাপা দিয়ে পিরামিড আকৃতির একটি অত্যাধুনিক বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই বিনোদন কেন্দ্রে থাকবে শিশুদের জন্য মনকাড়া একেকটি রাইড, ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট।

ময়লার ভাগাড়ে বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের এ পরিকল্পনা শুনতে কল্পনাপ্রসূত মনে হলেও তা বাস্তবায়ন এখন সময়ের অপেক্ষা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ইতোমধ্যে এ নিয়ে আলাপ তুলে প্রাথমিক কাজে অগ্রসরও হয়েছে। ৫৫৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকার এ প্রকল্প এখন অনুমোদনের অপেক্ষায়।  

সূত্র জানায়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ১৯৯০ সালে ডেমরার মাতুয়াইলে প্রায় ১৫৩ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে তৎকালীন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। এরপর সেখানে ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করে ময়লা ফেলা শুরু হয়। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় ২০০৫ সালে আরো ১৫০ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করা হয়।

Millat

মাতুয়াইলের এই ডাম্পিং স্টেশনের ধারণক্ষমতা ৬৫ লাখ টন আবর্জনা। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে মাতুয়াইলের ভাগাড়ের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ভূমি থেকে ৮৮ ফুট। এ বছরই এর ধারণক্ষমতা শেষ হওয়ার কথা। জাপানি পরামর্শকরা তেমনটাই বলেছেন।

এ কারণেই ডাম্পিং স্টেশনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হচ্ছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে। বিকল্প ভাগাড়ের কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ভাগাড় সম্প্রসারণের জন্য নতুন করে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

সম্প্রসারণের পাশাপাশি প্রকল্পে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ৯৩ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন ভাগাড়ে ময়লা ফেলা শুরু হলেই পুরনো ভাগাড় মাটি চাপা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। আর তার উপরই নির্মিত হবে বিনোদন কেন্দ্র।

ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতা এসেছে। গোটা ঢাকার চিত্র পাল্টে যাচ্ছে। আগামীতে আরো পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেয়া হবে। এরই ধারাবাহিকতায় মাতুইয়ালের ডাম্পিং স্টেশনের সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নতুন স্টেশনটি বিশ্বমানের হবে এবং সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। আধুনিক এই বর্জ্য স্তূপ থেকে কোনো গন্ধও বের হবে না। আর পুরনো ভাগাড়টি মাটি দিয়ে ঢেকে দিয়ে আধুনিক মানের বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।’  

ডিএসসিসির প্রকৌশলী এ এইচ এম আবদুল্লাহ হারুন বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে এবার ময়লার ভাগাড় তৈরি করা হবে। বর্জ্য পুড়িয়ে ছাই করতে দহন-চুল্লি স্থাপন, উদ্ভূত জ্বালানি বা আরডিএফসহ অন্যান্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। আগের ভাগাড়টিও আধুনিক ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সংরক্ষণ করা হবে।

তিনি আরো বলেন, ৩০৩ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয় মাতুয়াইলের এই ভাগাড়টি। পাহাড়সম এই ভাগাড়ের উপযুক্ত ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এএসএস/এএস/এনএফ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।