ইউপি নির্বাচন সব শেষ করে দিয়েছে


প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ১৫ জুন ২০১৬

দেশে প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে হত্যা ও গুপ্তহত্যা। এসব দমনে চলছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। তবে হত্যা, গুপ্তহত্যা ও অভিযান নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। এছাড়া দেশের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্বমহলেও। দেশের এমন পরিস্থিতিসহ নিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাগো নিউজ মুখোমুখি হয়েছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের।

সাক্ষাৎকারে সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের নানা অসঙ্গতি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সায়েম সাবু। আজ থাকছে শেষ পর্ব।

sakhwat

জাগো নিউজ : সম্প্রতি ইউপি নির্বাচন শেষ হলো। ব্যাপক রক্তপাতে অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে এবারের নির্বাচন। সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এই নির্বাচনকে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

সাখাওয়াত হোসেন : স্থানীয় নির্বাচনে যে ক্ষতি হলো তা কেউ সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করছে না। এই ক্ষতি কখনই পূরণ হবার নয়। পুরোহিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সবাই অস্থির। কিন্তু ইউপি নির্বাচনে ১৩৫ জন মানুষ মারা গেলেও তার কোনো খবর নেই। এগুলোও তো জীবন। এর দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশন কেউ নিচ্ছে না।

Sakhawat-hossain-Insert

জাগো নিউজ : কি দাঁড়ালো নির্বাচন ব্যবস্থায়?  

সাখাওয়াত হোসেন : নির্বাচনে কোনো ব্যবস্থাই নেই, যা ধরে আপনি মূল্যায়ন করতে পারেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সব শেষ করে দিয়েছে। জোর যার মুল্লুক তার, এই নীতিতেই এখন সব চলছে। জানি না পরবর্তী নির্বাচনে কি ঘটবে।

জাগো নিউজ : আপনারা একটি কাঠামো দাঁড় করালেন। মানুষ ভরসা রাখতেও শুরু করলো। এখন তা ভেঙে গেল।

সাখাওয়াত হোসেন : মুক্তিযুদ্ধের সময়ও একটি কাঠামো দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার ত্যাগের মধ্য দিয়ে সবার আস্থা অর্জন করেছিলেন। তার আন্দোলনই ছিল অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তি। কিন্তু এখন সেই চেতনা, কাঠামো কি আছে?
আমরা একটি কাঠামো দাঁড় করিয়েছিলাম। কেন ভেঙে গেল তা হয়ত দুই বা দশ বছর পর গবেষণা করে বের হবে। কিন্তু সব যে ভেঙে পড়েছে, তা তো অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে কি হলো, তা সবারই জানা। কিন্তু এর পরের যে নির্বাচনগুলো সেখানেও তো একই ধারা অব্যাহত রাখল নির্বাচন কমিশন।

Sakhawat-hossain

জাগো নিউজ : মিশন এক থাকলে তো ধারা একই থাকার কথা?

সাখাওয়াত হোসেন : আমরাও এই সরকারের অধীনে কাজ করেছিলাম। কিন্তু এভাবে বিশেষ মিশন নিয়ে নিজেদের অন্ধ রাখা যায় না। এই কমিশন শুরু থেকেই সামর্থ্যহারা ছিল। এদের কোনো চেষ্টাও নেই। প্রধানমন্ত্রী বার্তা দিলেও তাতেও সহিংসতা দমাতে পারেনি, ভোট সুষ্ঠু করতে পারেনি।

জাগো নিউজ : প্রধানমন্ত্রীর বলাতেও কাজ হলো না। তাহলে কি শুধু বলার জন্যই বলা?

সাখাওয়াত হোসেন : প্রধানমন্ত্রী যেভাবেই বলুক, তা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এভাবে নির্বাচন নিয়ে কখনই বলেননি। এটিকে গুরুত্ব দেয়া কমিশনের নৈতিক দায়িত্ব ছিল।

জাগো নিউজ : সরকার শক্তি না দিলে কমিশনেরই বা কী করার আছে?

সাখাওয়াত হোসেন : শক্তি না দিলে নির্বাচন বন্ধ করে দেবে। এর দায় তো এড়াতে পারে না। বাঁশখালীতে নির্বাচন কেন বন্ধ করে দিল। নির্বাচন কর্মকর্তাকে মারধর করেছে বলে বন্ধ হলো আর শত মানুষ মারা গেল, তাতে নির্বাচন বন্ধ হলো না। এগুলো একজন সাধারণ মানুষও এখন বিশ্লেষণ করতে পারে।

Sakhawat-hossain

নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপ থাকবেই। এই চাপ মেনে নিয়েই তো দায়িত্ব নেয়। কমিশনের চেয়ারে বসলে সবাই শত্রু। সামনে বসে চা খেয়ে, বাইরে গিয়ে গালি দেয়। এটি তো জেনেই চেয়ারে বসেছিলাম।

জাগো নিউজ : নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ কী?

সাখাওয়াত হোসেন : রাষ্ট্র, সমাজের জন্য নির্বাচন কমিশনকে তার নিজের রূপে ফিরে আনতেই হবে। নইলে কেউ রক্ষা পাবো না।

জাগো নিউজ : যে অবস্থানে সরকার, চাইলেই কি ফেরা সম্ভব?

সাখাওয়াত হোসেন : সরকার চাইলে দুই মিনিটেই সমাধান দিতে পারবে। সরকারের চেয়ে তো কোনো শক্তিশালী পক্ষ নেই। উপরে আল্লাহ, নিচে সরকার। রাজনীতিতে শেষ বলতে কোনো কথা নেই। যে কোনো সময়ই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারে।
অনেকেই সরকারকে হার্ডলাইনে নিয়ে যেতেই পারে। সুশীল সমাজ বা পুলিশের প্রধান সরকারকে যে কোনো পরামর্শ দিতেই পারেন। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে এবং তা হতে হবে নিজেদের সমাজ বাস্তবতায়। কারণ এক দেশের ফর্মুলা আরেক দেশে খাটে না। দেশের মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিয়েই সমাধানে আসতে হবে।

এএসএস/এএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।