ময়লার পাহাড়ে গন্ধমাখা জীবন


প্রকাশিত: ০৮:৩৪ এএম, ১৪ জুন ২০১৬

বর্জ্য। রাজধানী ঢাকার নিত্যদিনের এক সমস্যা। এ সমস্যায় নাগরিক জীবন যেন ওষ্ঠাগত। নগরের দায়িত্বে যিনিই এসেছেন, তিনিই নগরকে পরিচ্ছন্ন রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু উদ্যোগ-উদ্দীপনা ঘোষণাতেই আটকে থেকেছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চিত্র বদলেছে রাজধানীরও। তবে বর্জ্য সমস্যা থেকেছে আগের মতোই। বিভক্ত নগরীর দুই মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন এসেছেও বটে। কিন্তু মানুষ তাতে ভরসা রাখতে পারছে না। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বর্জ্য অপসারণ এখনও এই শহরের মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি। বর্জ্য, বর্জ্য অপসারণ, অপসারণে অব্যবস্থাপনা, বর্জ্য থেকে জীবিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু, নিজস্ব প্রতিবেদক আবু সালেহ সায়াদাত ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সুব্রত মণ্ডল। আজ থাকছে চতুর্থ পর্ব: ময়লার পাহাড়ে গন্ধমাখা জীবন

মাথার উপরে শত শত কাক উড়ছে। খাবার পেয়ে কাড়াকাড়িও করছে কাকের দলের একটি অংশ। মাছি ভন ভন করছে চারদিকে। দুর্গন্ধে বমি বের হওয়ার মতো অবস্থা। খানিকটা দূর দিয়েই চলে গেছে ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়ক। বাসযাত্রীরা গন্ধ এড়াতে নাকে কাপড় গুঁজে দিচ্ছেন। কেউ হাত দিয়ে নাক-মুখ ঢাকছেন।

ঢাকা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের পাশের এই ময়লার ভাগাড়ে বেঁচে থাকা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও সেই ময়লার পাহাড়ে দিব্যি কেটে যাচ্ছে কত মানুষের জীবন। ময়লা! গন্ধ! তা কোনো সমস্যা নয়। জন্মই তো ময়লার ভাগাড়ে। তাই ওদের বেড়ে ওঠাও ময়লা-আবর্জনা আর এর গন্ধকে সঙ্গী করেই।

Nurul

এই ভাগাড়ে ময়লার স্তূপের ওপর ঘর গড়েছেন ভোলার শহীদ। একটি মাত্র ঘরেই ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও মেয়েদের নিয়ে থাকেন তিনি।  

শহীদের ছেলে-মেয়েদের একজনের নাম নুরুল ইসলাম। নুরুল ইসলামের বয়স কত তা ঠিকঠাক বলতে পারেন না বাবা শহীদ। আট বা দশ হবে, ছেলের বয়স সম্পর্কে এটুকুই জানেন তিনি।  

স্কুলের বারান্দায় পা দেয়া হয়নি নুরুল ইসলামের। ওর যখন জন্ম, বাবা-মা তখন বনানীর একটি ডাস্টবিনে ময়লা টোকাতেন। নুরুলের বয়স যখন ২২ দিন, তাকে নিয়ে তখন রাজধানীর অদূরে আমিনবাজার ডাম্পিং স্টেশনে পাড়ি জমান শহীদ।

২০ বছর আগে ভোলা থেকে ঢাকায় এসে ময়লা ঘিরেই জীবন শুরু করেন শহীদ। এরপর দিন অনেক কেটেছে। এখন আর অন্য পেশায় যাওয়ার ইচ্ছাও নেই শহীদের।  

Nurul

এখন বাবা-মায়ের সঙ্গে ময়লা টোকায় ছেলে নুরুল ইসলামও। তিনজনের মাসিক উপার্জন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। চার মেয়ের তিনজনকেই বিয়ে দিয়েছেন শহীদ। বড় দুই ছেলে ময়লার গাড়ির হেলপার।

কথা হচ্ছিল শিশু নুরুল ইসলামের সঙ্গে। সে বলছিল, এখানেই তো থাকি। আমাগো নাকে গন্ধ লাগে না। আব্বার লগে ময়লা টোকাই। কামাই না করলে খামু কী? আমার লগে অনেক পোলাপান কাগজ টোকায়।

স্কুলে যেতে মন চায় না- এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল বলে, ‘স্কুল তো চিনিই না। তয় বাবায় কয়ছে ফের বছর আমারে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করবো। তহন আর ময়লা টোকাইয়া খাওন লাগবো না।

ছেলের কথায় সায় দিয়ে বাবা শহীদ বলেন, ‘হ, এবার নিয়ত করছি ছাওয়ালডারে মাদ্রাসায় দিমু। বড় দুইডা তো ময়লার কাজেই আটকে গেল। ছোটডারে যদি মানুষ করতে পারি, তাও ভালো লাগবো।’  
 
এএসএস/এএস/এনএফ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।