২৫ মামলায় নাকাল খালেদা
মামলায় জর্জরিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তার দলের নেতাকর্মীরা। খোদ বেগম জিয়ার বিরুদ্ধেই রয়েছে পাঁচটি দুর্নীতির মামলাসহ ২৫টি মামলা। সবগুলোই বর্তমানে বিচারাধীন আছে। এরমধ্যে দুর্নীতির মামলা পাঁচটি। বাকিগুলো হত্যা- সহিংসতা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা। বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এসব তথ্য দিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ২৫টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দুদকের করা মামলা, বাকি মামলাগুলোর মধ্যে হত্যা, নাশকতা ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়াসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিয়োগর রয়েছে। তিনি বলেন, ঊনার বিরুদ্ধে যত মামলা রয়েছে সবগুলোই এখন বিচারাধীন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের করা মামলাগুলোর মধ্যে চারটি সেনা সমর্থিত ২০০৭ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। বাকি দুর্নীতির মামলাসহ অপরগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা।
দুদকের করা মামলাগুলো হচ্ছে- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা, বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি মামলা।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি :
এ বিষয়ে বিএনপির অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, মামলাগুলোর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষী গ্রহণ শেষ হয়েছে। আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে মামলায় যুক্তিতর্ক শুনানি হবে। এরপরই মামলার রায় ঘোষণার পালা।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলাটি করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি :
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন; সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। একই আদালতে চলছে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বিচার কার্যক্রম।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, গ্যাটকো ও নাইকো দুর্নীতি মামলা :
এই তিন মামলার মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঠিকাদারি কাজে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থানায় মামলাটি করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য গ্যাটকো লিমিটেডকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়া ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক।
অপরদিকে, নাইকো রিসোর্স কোম্পানিকে অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলা করে দুদক। বিচারিক আদালতে (জজকোর্টে) এই মামলার অভিযোগপত্র গঠনের শুনানির জন্য রয়েছে।
এই তিন মামলার বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান জানান, হাইকোর্ট মামলাগুলির বিরুদ্ধে করা রিট খারিজ করায় লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে। রিট খারিজের রায় প্রকাশের পর খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আপিল করা হয়েছে। এখন আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
হত্যা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতাসহ অন্যান্য মামলা :
নাশকতা ও হত্যার অভিযোগে করা যাত্রাবাড়ী থানার দুটি মামলায় চার্জ দাখিল এবং গঠন করার জন্য রয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে দারুস সালাম থানার দায়ের করা দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ ৫১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। চার্জশিটে খালেদা জিয়াকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর হাকিম এমদাদুল হকের আদালতে দারুস সালাম থানার এসআই শঙ্খবালাসহ মামলার দুই তদন্তকারী কর্মকর্তা এ দুটি চার্জশিট দাখিল করেন। এর একটিতে আসামি রয়েছেন ২৮ জন, অন্যটিতে ২৩ জন। ২০১৫ সালে হরতাল-অবরোধ চলাকালে ফ্রেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে এ মামলা দুটি দায়ের করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো ৫টি মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলায় নাশকতা, গাড়ি পোড়ানো এবং হত্যার অভিযোগ আনা হয়।
এছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সহিংসতা ও নাশকতার অভিযোগে ঢাকাসহ দেশের থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর গুলশান ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থানায় ২টি, খুলনা সদর থানায় একটি এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার তিনটি মামলা উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে গুলশান, কুমিল্লা ও খুলনার মামলাগুলো তদন্তাধীন।
তবে যাত্রাবাড়ী থানার মামলাগুলোর অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির অভিযোগে চারটি পিটিশন মামলা রয়েছে। এসব মামলাও তদন্তাধীন আছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৭টিতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানও স্বামীর সঙ্গে দুদকের একটি মামলার আসামি। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মৃত আরাফাত রহমান কোকোও সাত মামলার আসামি ছিলেন।
আইনজীবী এহসানুর রহমান বলেন, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ১২ নেতার বিরুদ্ধে ২৮৮টি, আট ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১৩১টি, চেয়ারপার্সনের সাত উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ১২৪টি, সাত যুগ্ম-মহাসচিবের বিরুদ্ধে ২৫৪টি এবং চার সিটি মেয়রের বিরুদ্ধে ৩৮টি মামলা রয়েছে।
এফএইচ/এমএমজেড/এবিএস