মিতু হত্যা: গোয়েন্দা সতর্কতার পরও ছিল না ব্যবস্থা


প্রকাশিত: ০৬:০৭ এএম, ০৯ জুন ২০১৬

পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের জঙ্গিবিরোধী ভূমিকায় ক্ষিপ্ত ছিল জঙ্গি ও উগ্রবাদী গোষ্ঠী। যেকোনো মূল্যে এ সৎ ও নির্ভীক পুলিশ সদস্যকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা ও পরিকল্পনা হচ্ছিল মর্মে গোয়েন্দা সতর্কতা ছিল।

বাবুল আক্তারের স্ত্রীকে যেদিন হত্যা করা হয় তার আগের দিন সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে জোর সতর্ক বার্তা দেয়া সত্ত্বেও শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় খুন হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু। গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সূত্র এমনটাই মনে করছে।  
 
নিজের ও পরিবারের উপর জঙ্গিদের আক্রোশের কথা নিজেও জানতেন বাবুল আক্তার। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে না ভাবলেও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন তিনি। সে কারণে কখন, কোথায় থাকতেন তা জানাতে নিষেধ করেছিলেন। মিতু নিজের ফেসবুকের কোনো পোস্টেও নিজের অবস্থানের জানান দিতেন না। সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি যে একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী তাও কাউকে বলতেন না স্বামীর নির্দেশনার কারণে।
 
পদোন্নতির কারণে ঢাকায় ছিলেন বাবুল আক্তার। রোববার সকালে স্ত্রী মাহমুদার মৃত্যুর খবর শুনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ছুটে যান তিনি। সেদিন বেলা পৌনে ১১টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসকের কক্ষে তিনি পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘আমার পরিবারকে কেন দেখে রাখা হয়নি? আমি তো আগেই বলেছিলাম, তারা আমার পিছু ছাড়বে না।’
 
একই অভিযোগ পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদেরও। নিরাপত্তায় ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।
 
তারা বলছেন, গত রোববার সকালে এই পুলিশ কর্মকর্তার চট্টগ্রামের বাসায় নিরাপত্তার দায়িত্বে কেউ ছিলেন না।
 
বাবুল আক্তারের ফুফাতো ভাই মো. ওয়াহিদ বলেন, ‘ঘটনার দিন সকাল থেকে বাসায় কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম হোসেন প্রতিদিন সকালে এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতেন। ভাবি তাকে ঘটনার দিন আসতে বলেননি। কিন্তু তিনি না আসলেও বাসায় আর কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না।’
 
একই অভিযোগ তুলে জাগো নিউজকে মিতুর ছোট বোন শায়লা মোশাররফ নিনজা বলেন, আপুর খুনের খবরে আব্বুর সঙ্গে আমিও গিয়েছিলাম চট্টগ্রামে। সেখানে গিয়ে শুনেছি সেদিন সকালে কোনো পুলিশ সদস্য তার সঙ্গে ছিলেন না। সেদিন কেন কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না, সে বিষয়টি পুলিশ কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা করেননি এখনো।
 
অন্যদিকে গত বুধবার সন্ধ্যায় কোস্টগার্ডের ইফতার মাহফিল শেষে ঊর্ধ্বতন সরকারি এক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনার আগের দিন শনিবার বিকেলে বাবুল আক্তারকে জানানো হয়, তার স্ত্রী ও সন্তানকে টার্গেটে নিয়েছে জঙ্গিরা। যেকোনো মূল্যে, যে কোনো মুহূর্তে তাদের উপর আক্রমণ হতে পারে। সে জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের সহযোগিতাও নিতে পরামর্শ দেয়া হয়। একই তথ্য জানানো হয় চট্টগ্রামে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষকেও।
 
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাবুল আক্তার বলেন, আমি প্রটেকশনে থাকলেও নিজের জীবন নিয়ে ভয় পাই না। তবে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত। চট্টগ্রামে ফিরে ওদের ঢাকায় নিয়ে আসবো। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কথা বলার পর ওই রাতে নিজেই স্ত্রীকে সাবধানে থাকতে বলেন। কিন্তু এরপরেও পরদিন সকালে পুলিশ প্রটেকশন না থাকার সুযোগ নিয়ে মিতুর উপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এখানে পুলিশি নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল বলে দাবি ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার।
 
ঘটনার পর থেকে এখনো পর্যন্ত এসপি বাবুলের স্ত্রী মিতু হত্যার তদন্তে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি। এ হত্যার রহস্যের জট খুলতে প্রাথমিকভাবে তিনটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

তদন্তের এ পর্যায়ে গোয়েন্দাদের সামনে মূলত যে তিনটি প্রশ্ন বড় হয়ে উঠেছে তা হলো- কেন পুলিশের একজন কর্মকর্তার স্ত্রীকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, খুনিদের মোটরসাইকেলের পেছনে যাওয়া কালো মাইক্রোবাসটি ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না এবং ঘটনাস্থলের কিছু দূরে থাকা দুটি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ভিডিওচিত্র ধারণ হয়নি কেন?   
 
ইতোমধ্যে চালকসহ আলোচিত মাইক্রোবাসটি আটকের দাবি করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। একই কিলিং মিশনে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল উদ্ধারেরও দাবি করেছে নগর ডিবি পুলিশ। জড়িত সন্দেহে শিবিরের সাবেক কর্মী আবু নছর ওরফে গুন্নুকে (৪৫) চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. ইকবাল বাহার বলেন, মাইক্রোবাস চালকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার দিন খুনিদের সহযোগী হিসেবে বা সাহায্যকারী হিসেবে কারা ছিলেন তা আগে খোঁজা হচ্ছে।
 
উল্লেখ্য, রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। বাংলাদেশ পুলিশের ২৪তম ব্যাচের বিসিএস কর্মকর্তা বাবুল আক্তার ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ২০১৫ সালে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে ব্যাপক প্রশংসিত হন তৎকালীন এডিসি বাবুল আক্তার।

জেইউ/এনএফ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।