কর ফাঁকি দিচ্ছে দুই লক্ষাধিক বিদেশি নাগরিক


প্রকাশিত: ১০:৩১ এএম, ০৮ জুন ২০১৬

বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের সঠিক তথ্য সরকারের কোনো বিভাগের হাতেই নেই। তবে পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ৫৫৯ জন। আর অবৈধ বিদেশির সংখ্যা এর চেয়েও কয়েকগুণ বেশি।
 
এদের মধ্যে মাত্র ১০ হাজার ৮৫ জন সরকারি কোষাগারে আয়কর জমা দেন। অর্থাৎ লক্ষাধিক বিদেশি নাগরিক দিনের পর দিন বেপরোয়াভাবে কর ফাঁকি দিচ্ছেন। তবে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কর ফাঁকি শূন্যে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। কর ফাঁকি ঠেকাতে গঠন করা হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বসানো হচ্ছে দুটি আয়কর গোয়েন্দা সেল। স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এর বাইরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে সভাপতি করে তিনটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ, এফবিসিসিআই, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিও রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় এ কমিটিগুলোর দ্বিতীয় সমন্বিত সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দেয়, তাদের এবং যেসব বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে কর্মরত, তাদেরও যথেষ্ট দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশি নাগরিকরা যাতে কর ফাঁকি দিতে না পারেন সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের কর ফাঁকিতে জরিমানার পরিমাণও বেশি। আর এসব বাস্তবায়নে প্রস্তুত এনবিআর। সুতরাং শিগগিরই বিদেশিদের কর ফাঁকি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ যেমন- নাইজেরিয়া, উগান্ডা, ঘানা, আলজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সেনেগাল, ক্যামেরুন ও লাইবেরিয়া থেকে আসা অবৈধ নাগরিকদের অনেকেই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন।

এনবিআর সূত্র আরো জানায়, ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড, পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চ, এফবিসিসিআই, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (বেপজা) ও এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে এনবিআর। এসব প্রতিষ্ঠানে থাকা বিদেশি নাগরিকদের বিষয় তথ্যও নেয়া হয়েছে।

সেই সঙ্গে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে কর্মরত নাগরিকের সংখ্যা, দেশ, বেতন, প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সময়সহ বিস্তারিত জানতে চেয়ে চিঠি দেয় এনবিআর। এছাড়া কর ফাঁকি দেয়া বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন এনবিআরের কমিশনাররা। এতে বেশ কিছু নতুন বিদেশি নাগরিকের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। এসব তথ্য যাচাই-বাচাই করে বিদেশি নাগরিকদের একটি তালিকা তৈরি করবে স্টিয়ারিং কমিটি।

তালিকা তৈরির কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ কাজের সঙ্গে যুক্ত এনবিআরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে জানান, তালিকা প্রস্তুতের কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু তাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে করে দেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১০ লাখের কম হবে না।

তবে এনবিআরের সদস্য (কর লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) ড. মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার মতো এখনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। বৃহস্পতিবার বৈঠক রয়েছে, তারপর কথা বলা যাবে।

স্টিয়ারিং কমিটিগুলোর তৈরিকৃত তালিকা অনুযায়ী টাস্কফোর্স কর ফাঁকি দেয়া বিদেশিদের ধরতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানে অভিযান, সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের নজরদারিতে রাখা হবে।

সেই সঙ্গে এখন থেকে বাংলাদেশ ত্যাগের আগে বিমানবন্দরে বিদেশিদের আয়কর পরিশোধের সনদ দেখবে ইমিগ্রেশন পুলিশ। কোনো বিদেশি কর্মী দেশ ত্যাগের সময় বিমানবন্দরে আয়কর সনদ দেখাতে ব্যর্থ হলে তাকে আইন অনুযায়ী সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদণ্ড দেয়া হবে। বছর শেষে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করলে দীর্ঘ মেয়াদে কর্মরত বিদেশিদের কাজের অনুমতি নবায়ন করা হবে না।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে বিদেশি কর্মীদের তালিকা সংগ্রহ ও হালনাগাদ করবে সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর। এর বাইরেও বিদেশি কর্মীদের উপর কড়া নজরদারি রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

এমএইচ/এসকেডি/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।