মিতুকে ঈদের শাড়িটা দেয়া হলো না শায়লার


প্রকাশিত: ১২:৩৯ পিএম, ০৬ জুন ২০১৬

আমার তো ভাই নেই। কিন্তু ভাই ও বোনের অভাবটা কখনো বুঝতে দেননি মিতু আপু। এবারের ঈদে প্রথমবারের মতো উপহার হিসেবে আপুর জন্য শাড়ি ও দুই ভাগ্না-ভাগ্নির জন্য জামা কিনেছিলাম। আপুকে বিষয়টি জানিয়েও ছিলেন আম্মু। আপু খুশিতে আমাকে বলেছিলেন তুই ছবি পাঠায় দে। আগের দিন এভাবেই কথা হয় আপুর সঙ্গে। ওহ! অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস; আমার এ বাসনা পূরণ হলো না। আর কখনোই আপুকে দিতে পারবো না কোনো উপহার।

SAILA

অশ্রু সিক্ত নয়নে কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলেন। কারণ কথা বলতে গেলেই খেই হারিয়ে ফেলছিলেন বার বার। গলা ধরাধরা কণ্ঠে কষ্টরোধের চেষ্টা স্পষ্ট চোখে মুখে।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূইয়াপাড়ায় নং ২২০/এ বাসায় জাগো নিউজের প্রতিবেদককে নিজের অপূরণীয় কথাগুলো বলতে গিয়ে যেন অপরাধবোধটাই বেশি কাজ করছিল চট্টগ্রামের সদ্য পদোন্নতি পাওয়া এসপি বাবুল আক্তারের নিহত স্ত্রী মাহবুবা আক্তার মিতুর ছোট বোন শায়লা মোশাররফ নিনজার।

SAILA

শায়লা টঙ্গি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস-এর চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী। বাবা মোশাররফ হোসেন ছিলেন পুলিশের ইন্সপেক্টর।

তিনি বলছিলেন, ‘ভাইয়া কি বলবো ; নিজের উপর খুব করুণা হচ্ছে। আচ্ছা আমাদেরই কি এমন ক্ষতি ভাগ্যে ছিল! ভাই নেই, আমারও বিয়ে হয়ে গেছে। আমার আব্বু ও আম্মুকে কে দেখবে বলেন, আপু সব সময় কেয়ার করতো। প্রতিদিন খোঁজ নিতো। দেরি করে কখনো বাসায় ফিরলে বকা দিতো। এখন এসবের কোনোটাই আর কখনো হবে না। শাসন করবে না। বলবে না শায়লা তোর জন্য পছন্দের রান্না করবো চলে আয় এখানে।`

বোনের সঙ্গে স্মৃতি রোমন্থন করে শায়লা বলেন, ‘আপু আমাকে খুব ভালবাসতো। এতো বেশি ভালবাসতো যে কল্পনাতীত। আব্বু মোশাররফ হোসেন পুলিশের ওসি ছিলেন। একবার সরকারি কোয়ার্টারের বাসায় থাকতে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। বাসার ছাদের সিঁড়ি ছিল দুর্বল। আমি, আম্মু ও আপু সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এসময় সেটা ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হতেই আমি ও আম্মু দৌড় দেই। ফিরে তাকিয়ে দেখি আপু নিচে পড়ে গেছে।

SAILA

আমরা হাসাহাসি করতে করতে আপুকে বললাম, তুমি আসলে না কেন? আপু বললো, ‘আরে তোরা তো ছিলি। আমি ভাবলাম তোদের নিয়েই ফিরবো। তাই তোদের খুঁজছিলাম।’

‘ওহ মানতে পারি না। আপু আর আমাদের আগলে রাখবে না। ওমন বিপদে কতোজনই বা নিজের বেশি অন্যকে ভাবতে পারেন বলেন?’SAILA

সবশেষ কবে দেখা হয়েছিল জানতে চাইলে শায়লা বলেন, ‘গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর আমার বিবাহ অনুষ্ঠানে আপু এসেছিলেন। এরপর আর আমাদের সাক্ষাত হয়নি। প্রায়ই আমাকে চট্টগ্রামে যেতে বলতেন।

রমজানে আমি এখানে থাকবো বলেই আপুকে বলেছিলাম, ‘আপু তুমিও চলে আসো। তোমার সঙ্গে দেখা হয় না কতোদিন। আপু বাচ্চাদের স্কুল, মিউজিক ক্লাস সব মিলে বাচ্চাদের ক্ষতির কথা জানিয়ে বলেন, এখন তো আমি ব্যস্ত। তবে তুই যেহেতু বলছিস আমি রমজানের মাঝামাঝি চলে আসবো। ইশ: আর দেখা হবে না। আমি তো আপুকে দেখলাম। নিথর নিস্তব্ধ। আমার সঙ্গে কথাও বললো না। ও তো আমাকে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু হলো না।’

আপু খুব সাধারণ জীবন যাপন করতো। পুলিশ কর্মকর্তার বউ হলেও কখনো গাড়ি ব্যবহার করতেন না। স্কুলে বাচ্চাদের নিয়ে যাওয়া আসা করতেন রিকশা কিংবা বাসে। নিজে কখনো আগ বাড়িয়ে মানুষকে বলতেন না তিনি পুলিশের গোয়েন্দা কর্মকর্তার বউ।

SAILA

বোন ও কাজিনদের সঙ্গে তোলা মিতুর ছবির অ্যালবাম দেখিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠেন শায়লা। বলেন, ‘আপু ছিল সব কিছুতে আমার আদর্শ। অহংকারহীন এ মানুষটিকে দেখেন। পিছনের মানুষটার হাসিটা! ওহ! শুধু ছবি হয়েই রয়ে গেল!’

আর কিছু চাওয়ার নেই। কিছু না। শুধু বিচার চাই। যে নরপিসাচরা নিজের সন্তানের সামনে মা’কে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করতে পারে তাদের বিচার যেন এই দেশেই হয়।

জেইউ/একে/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।