বাবুল আক্তারের পেশাদারিত্ব আর সততাই কাল হলো স্ত্রীর


প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ০৫ জুন ২০১৬

ভালোবাসার মায়া কেন যেন এমনই। বাঁধন অটুটই তো মনে হয়। কিন্তু নিয়তির খেলা বড় অসহায় করে দেয় ক্ষণিকেই। কে ভেবেছিল মিতুর শত্রু আছে? কেইবা বিশ্বাস করবে মিতুর শত্রু আছে। স্বামীর সততা আর পেশাদারিত্বই কাল হলো মিতুর। রোববার দুপুরে খিলগাঁওয়ের বাসায় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রীর মামা তারিকুল ইসলাম এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন।

তিনি বলেন, মিতু না থাকলে কেউ তার কক্ষে থাকে না। তবে ছোট বোন সায়লার যাতায়াত অবাধ। একমাত্র সায়লার অধিকার ছিল বিয়ের আগে। বিয়ের পর কেন যেন মেয়েটা বদলে যেতে থাকে আগের মতো চঞ্চলতা ছিল না। সাংসারিক হয়ে গিয়েছিল মেয়েটা। কি থেকে যে কি হয়ে গেলো বোঝাবো কেমনে বাছা।

mitu

নিহত মিতুর খালা শিমুল বলেন, ‘শুনছি জামাই নাকি কয়েকজন জঙ্গিকে জীবন বাজি রেখে ধরছিল। ধরার জন্য লেগেও ছিল বেশ কয়েকদিন। এজন্যই নাকি বেশ কিছু লোক ক্ষিপ্ত ছিল। স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাস্তানরাও ক্ষিপ্ত ছিল। কিন্তু তাই বলে নিষ্পাপ মাইয়াডারে মাইরা দিলো ওরা!’

রোববার সকালে চট্টগ্রামে দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ও গুলিতে নিহত হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু (৩২)। এরপর খিলগাঁওয়ের বাসায় খবর আসা মাত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। বাসায় ভরে যায় আত্মীয়-স্বজনে। কারোরই যেন বিশ্বাসে জোর নেই।

mitu

খালাতো ভাই নাফিজ আহমেদ বলেন, কখনো শুনিনি আপুর সঙ্গে দুলাভাইয়ের কোনো ঝামেলার কথা। ও কারো সঙ্গে ঝামেলা জড়াতো না। ছেলে ও মেয়েদের নিয়েই ব্যস্ততা বেশি ছিল। কিন্তু এমনও মানুষকেও এভাবে মরতে হবে কল্পনাতেও ভাবা যায় না।

খিলগাঁওয়ের ভূঁইয়াপাড়ায় দুই তলার বাড়ি। উপরে পর পর তিনটি কক্ষ। সবগুলো কক্ষই গোছানো। জামাই বাবুলের আসার কথায় সব ঘর গুছিয়ে রেখেছিলেন শাশুড়ি। কিন্তু আসবেন বলে আর আসা হলো না। স্ত্রীর মৃত্যুর সংবাদে শ্বশুরবাড়ি না এসে ফিরে যান চট্টগ্রামে।

mitu

বাড়ির কেয়ারকেটার ফোরকান বলেন, আপা এখানে আসলেই উপরের ঘরে থাকেন। ঘরের বেলকুনি, জানালা, দরজা সব নিজের মতো করে বানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসলে ছোট বোন সায়লা আক্তারও আসতো।

জানা যায়, মেয়ের খুনের সংবাদ শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। অনেক আত্মীয় স্বজনের পছন্দ না হলেও নিজের পছন্দে বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

mitu

তিনি মেয়ের মরদেহ আনতে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে আহাজারী করতে করতে বলছিলেন, “আমার বড় মেয়ে মিতা ছিল আত্মা। সেই নেই আমার বেঁচে লাভ কি? বড় ছেলের ভূমিকায় ছিল বাবুল জামাই। মেয়ের অবর্তমানে আমার ছেলের কি হবে, আমার কচি কাচা নাতি নাতনির কি হবে? কে ওদের দেখবে?”

জেইউ/জেএইচ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।