বৃক্ষমানবকে দেয়া কথা রেখেছেন ডা. কবীর চৌধুরী


প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ৩১ মে ২০১৬

বর্তমান সময়ে চিকিৎসকরা যত খ্যাতি লাভ করেন রোগীরাও তত বিড়ম্বনার শিকার হন। তাদেরকে কসাইসহ নানাবিধ কথা বলে গালমন্দ করেন অনেকে। কিন্তু চিকিৎসকরা কতটা মানবিক হতে পারেন তার দৃষ্টান্ত রাখলেন ডা. কবীর চৌধুরী। নিজের রোগী বৃক্ষমানব আবুল বাজনদারকে জমি কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন আবুলের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার কাজে দেশের অন্যতম সেরা চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক কবীর চৌধুরী ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছেন তা দেশের অনেকেই জানেন না।

বার্ন ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম ও ডা. সামন্তলাল সেনের অনুরোধে তিনি বাজনদারের চিকিৎসার্থে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হিসেবে চিকিৎসা কার্যক্রমের শুরু থেকেই জড়িত হন। এ পর্যন্ত হাতে চারটি ও পায়ে একটিসহ যে পাঁচটি অস্ত্রোপচার হয়েছে সেগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন- অধ্যাপক ডা. কবীর চৌধুরী ও অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম।

মঙ্গলবার বার্ন ইউনিটে আবুল বাজনদারের বাবা ও দুলাভাইয়ের হাতে ছয়লাখ টাকার অনুদান তুলে দেন ডা. কবীর চৌধুরী। আবুল বাজনদারের চিকিৎসার সঙ্গে দেশসেরা এই চর্ম বিশেষজ্ঞ জড়িত আছেন এ বিষয়টি অনেকের মতো এ প্রতিবেদকেরও অজানা ছিল। এদিন বিকেলে তার কাছে এ প্রতিবেদক জানতে চান ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে কেন ছয়লাখ টাকা অনুদান দিলেন?

উত্তরে অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, ‘হি ইজ মাই প্যাসেন্ট’। সে কুঁড়ে ঘরে থাকে। তার বাবার নিজস্ব কোনো জমি নেই। চিকিৎসা শুরুর প্রাক্কালে কথা দিয়েছিলাম তার জন্য জমি কিনে দেবো। তাই কথা রেখেছি। নিতান্তই মানবিক দিক বিবেচনায় এমনটি করেছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আবুল বাজনদারতো খুলনা থেকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন তাহলে তিনি কিভাবে তার রোগী হলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবীর চৌধুরী জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে ভারতীয় চিকিৎসক ওমেশ গোরার কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে লন্ডন থেকে ডিসকভারি চ্যানেলের মি. কেইন তার সঙ্গে রোগী ও রোগটি নিয়ে আলোচনা করেন। ওই সময় আবুল বাজনদারের কুঁড়েঘরের সামনে দাঁড়ানো ছবিও পাঠান তিনি। খুলনার পাইকগাছায় থাকায় ব্যস্ততার কারণে তখন তিনি আর যোগাযোগ করতে পারেননি।

পরবর্তীতে ৩০ জানুয়ারি আবুল বাজনদার ঢামেকের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশনায় সম্পূর্ণ সরকারি খরচে তার চিকিৎসা শুরু হয়। গঠিত হয় মেডিকেল বোর্ড। বার্ন বিশেষজ্ঞদের অনুরোধে তিনিও মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। ভর্তির একমাস পর ২০ ফেব্রুয়ারি তার প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। পরবর্তীতে একমাস পর ২০ মার্চ ও পরবর্তীতে আরো তিন দফা অস্ত্রোপচার হয়।

আবুল বাজনদারের চিকিৎসা কোন পর্যায়ে রয়েছে আরো কতদিন তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে এ প্রশ্নের জবাবে ডা. কবীর চৌধুরী বলেন, শতকরা ৮০ ভাগ চিকিৎসা হয়ে গেছে। ভর্তির দিন থেকে পরবর্তী এক বছর তাকে হাসপাতালে রাখা হবে। সর্বোপরি সুস্থ হওয়ার পরই তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হবে।

ছয় লাখ টাকা অনুদান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দানের ব্যাপারে আর মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি।

অনেক পীড়াপীড়ির পর তিনি বলেন, আবুল ও তার পরিবার খুবই গরিব। তারা কুঁড়ে ঘরে থাকে। নিজেদের জমি নেই। প্রথম অস্ত্রোপচারের আগে তিনি কথা দিয়েছিলেন জমি কিনে দেবেন। গত সপ্তাহে আবুলের বাবা জমি বায়নার কাগজ নিয়ে আসেন। সেবস কাগজপত্র দেখেই মঙ্গলবার তাদের হাতে ছয় লাখ টাকা তুলে দেন বলে জানান ডা. চৌধুরী।

এমইউ/এসএইচএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।