হ্যাকিং প্রতিরোধে ‘সচেতন’ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো


প্রকাশিত: ০৩:২৩ এএম, ৩০ মে ২০১৬

দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে সাইবার ক্রাইমও। প্রতিদিন হাজারো মানুষ সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন। চলমান সাইবার ক্রাইমের এমন হাজারো চিত্র জাগো নিউজ-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। নিজস্ব প্রতিবেদক আদনান রহমান ও জসীম উদ্দীনের পাঁচ পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আজ থাকছে এর চতুর্থ পর্ব।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮০০ কোটি টাকা লুট করে আন্তর্জাতিক একটি হ্যাকারদল। এছাড়াও দেশের দুটি মোবাইল অপারেটরের সার্ভার হ্যাক করে বাংলাদেশি হ্যাকারদের নিজেদের আয়ত্তে নেয়ার দাবি করেছে ওই দলটি। চেষ্টা করা হয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতরের তথ্য হ্যাক করার। সব মিলে সাইবার ক্রাইম ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

তবে এসব অপরাধ প্রতিহত করতে নিয়মিত লড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তথ্য-প্রযুক্তি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ নিয়োগসহ নতুন নতুন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

এবিষয়ে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রেজওয়ান জাগো নিউজকে বলেন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের ডাটা নিরাপদ রয়েছে। আমাদের ডাটাবেজ সফটওয়্যার সিকিউরড রয়েছে। যারা আমাদের সফটওয়্যারটি তৈরি করে দিয়েছে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে হ্যাকিং করা যাবে না। আমরা একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ডাটা সিকিউরিটির বিষয়ে অডিট করানো হবে। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে অডিটের দায়িত্ব দেয়া হবে। আমাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে, আমাদের সার্ভার হ্যাক করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকগুলোর সাইবার নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন, মানসম্মত ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ব্যাংকগুলোকে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মার্চেই ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) সঙ্গে সভা করা হয়েছে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর সিস্টেমের ডায়াগনস্টিক ও ফরেনসিক স্টাডি করতে কারিগরি সহায়তা দেয়া হবে। সিস্টেম ঝুঁকিমুক্ত রাখতে সব ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন করে সিকিউরিটি অফিসার নিয়োগ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি একটি জব সাইটে ব্যাংক এশিয়া এমআইএস সিকিউরিটি অফিসার, ডাটা ওয়্যারহাউজ অ্যান্ড বিআই এক্সপার্ট, আইসিটি সিকিউরিটি এক্সপার্ট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।

শুধু আন্তর্জাতিক নয় বাংলাদেশি হ্যাকার থেকে দূরে থাকতেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশে বর্তমানে ৭-৮টি হ্যাকিং গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রে হ্যাট হ্যাকার্স, সাইবার আর্মি, এক্সপায়ার সাইবার আর্মি, বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার্স, টিম সাইবার কমান্ডোস, স্ক্রিপ্ট কিডি ও সাইবার একাত্তর।

বাংলাদেশি হ্যাকিং গ্রুপেরা মূলত বিদেশি সাইটগুলো হ্যাক করার কথা বললেও অনেকসময় তাদের অসাধু কিছু সদস্য দেশীয় ওয়েবসাইটে হ্যাকের চেষ্টা করে। মানুষকে জিম্মি করে টাকা হাতানোর চেষ্টা করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভার হ্যাকের চেষ্টা করেছিল বাংলাদেশি একটি হ্যাকিং গ্রুপ। তবে তারা সার্ভার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি।

Crimeকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ করা যাবে জানতে চাইলে সিআইডির সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ রায়হান উদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, অনেকসময় আমাদের ছোট একটু অসতেনতার কারণে অপরাধীরা সাইবার ক্রাইম করার সুযোগ পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার কাজ করবে পাশাপাশি নিজেদের সচেতন হতে হবে। ফেসবুক, ইন্টারনেট, জিমেইল ব্যবহারের আগে এগুলোর সিকিউরিটির বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে।

সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশে ব্যাংকের নেতৃত্বে থ্রেট ইন্টেলিজেন্স ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা দরকার বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছেন এনসিসি ব্যাংকের আইটি বিভাগের প্রধান শামসুর রহমান।

সাইবার অপরাধ বা হ্যাকিং ঠেকাতে আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৯ এ কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আইনের ৫৬ (২) ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোনো কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন করেন যাতে তিনি মালিক বা দখলদার নন, তাহলে তার এই কাজ হবে একটি হ্যাকিং অপরাধ।’

কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং অপরাধ করলে তিনি অনূর্ধ্ব ১০ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এছাড়াও উভয়দণ্ড দণ্ডিত করার কথাও বলা হয়েছে আইনে। যদি এই আইনের সঠিক বাস্তবায়ন শুরু হয় তাহলে সাইবার অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

সাইবার অপরাধীদের বিচার করতে বাংলাদেশে রয়েছে একটি ‘সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল’। ট্রাইব্যুনালে কয়েক হাজার অভিযোগ জমা হয়েছে। বিচারাধীন রয়েছে এদের অনেকগুলো। এগুলোর মধ্যে প্রায় ২০০টি সাইবার অপরাধ মামলায় ট্রাইব্যুনালের কাছে তদন্ত সম্পর্কে অপিনিয়ন (অভিমত) দিয়েছে সিআইডি।

এআর/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।