বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা ও ভাতা বাড়ছে


প্রকাশিত: ০৪:৩৪ এএম, ২৬ মে ২০১৬

আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতা ও ভাতার হার চলতি অর্থ বছরের চেয়ে বাড়বে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগামী ২ জুন প্রস্তাবিত এই বাজেটটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ এবং টাকার পরিমাণ ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। এ হিসাবে ভাতার অঙ্ক বাড়ছে বর্তমানের চেয়ে ১০০ টাকা বেশি। তবে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়া হয়নি। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় `উপকারভোগী` মোট সংখ্যা ৪২ লাখের বেশি।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতে শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপবৃত্তি, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার আশ্রয়ণ প্রকল্প, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, টিআর, জিআর, দুস্থ মায়েদের জন্য খাদ্য সহায়তা (ভিজিডি) ও চর জীবিকায়নসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি এবারো থাকবে।

সূত্র আরো জানায়, আগামী অর্থবছর বয়স্কভাতা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রায় দেড় লাখ বাড়ছে। চলতি অর্থবছর বয়স্কভাতার সুবিধা ভোগ করছেন ৩০ লাখ জন। চলতি অর্থবছর প্রতি জন মাসে ৪ শ’ টাকা হারে এ সুবিধা পাচ্ছেন। আগামী বাজেটে এর পরিমান হবে ৫ শ’ টাকা।

বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীদের মধ্যে বর্তমানে ১১ লাখ ১৩ হাজার জন ভাতা পাচ্ছেন। এ সংখ্যা ৩৭ হাজার বেড়ে সাড়ে ১১ লাখে দাঁড়াতে পারে। বর্তমানে এরা প্রতিজন মাসে ৪ শ’ টাকা করে পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছর তারা ৫ শ’ টাকা করে পাবেন।

সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে মোট ১৫ লাখ অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় প্রতি মাসে সরকারি আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন ৬ লাখ। আগামী অর্থবছর থেকে এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ৭ লাখ। বর্তমানে এরা প্রতিজন মাসে ৫ শ’ টাকা করে পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছর প্রতি মাসে পাবেন ৬ শ’ টাকা করে।

চলতি অর্থবছর প্রতিবন্ধী শিক্ষাথী উপবৃত্তি ভোগ করছেন ৬০ হাজার শিক্ষার্থী। আগামী অর্থবছর এর সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এর সংখ্যা ১৫ হাজার বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৭৫ হাজারে। প্রতি মাসে এরা ৫ শ’ টাকা হারে বৃত্তি পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরে এটা ৬ শ’ টাকা করার প্রস্তাব করা হবে।

সমাজে অবহেলিত বিভিন্ন শ্রেণির মানুষদের জন্যও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা এবং সংখ্যাও বাড়ানো হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশের ৬৪টি জেলাতেই হিজড়া রয়েছে। তার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সুবিধা পাচ্ছেন। বর্তমানে এরা মাসে ৫ শ’ টাকা হারে ভাতা পাচ্ছেন, আগামী অর্থবছরে এদের ৬ শ’ টাকা দেয়া হবে। বেদে ও অনগ্রসর শ্রেণির লোকেরা বর্তমানে মাসে ৪ শ’ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন, আগামী অর্থবছর থেকে তাদের ৫ শ’ টাকা ভাতা দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেয়াদে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু করেছিল। পরবর্তী সময় সব সরকার এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখে; কিন্তু পদ্ধতিগত দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে এর সুফল আশানুরূপ নয়।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিভিন্ন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। প্রতিবছর এ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হলেও এর সুফল উপকারভোগী বা টার্গেট গ্রুপের কাছে পুরোপুরি পৌঁছায় না। এজন্য এই কর্মসূচি সফল করতে তদারকিও বাড়ানো জরুরি।

এমএ/জেএইচ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।