একটি ঘটনা বদলে দিয়েছে নিশ্চিন্তপুর গ্রামকে
বাড়ির গেটে ‘বাড়ি ভাড়া হবে’সাইনবোর্ডটি ঝুলছে মাসের পর মাস ধরে। তবুও পাওয়া যাচ্ছে না ভাড়াটিয়া। বাজারের কাঁচামালের দোকানগুলোতে রাখা আলু, মরিচ, পেঁয়াজসহ অন্যান্য সবজিগুলো আগে বিক্রি হতো ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই। অথচ সেইসব মালামাল এখন বিক্রি হয় সারাদিন ধরে। দর্জির দোকানগুলোতে সারারাত ধরে চলতো মেশিনের খট খট শব্দ। সেই শব্দে অতিষ্ট হয়ে উঠতো গ্রামের মানুষ। সব মিলিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ থাকতো এলাকাটি। একটি ঘটনায় বদলে গেছে সেই গ্রাম। বদলে গেছে গ্রামের মানুষ। সেই সঙ্গে ভুলেও গেছে অনেক কিছু।
বলছিলাম আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কথা। এই গ্রামেই ছিল তোবা গ্রুপের সেই ‘তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড’।
২০১২ সালে ২৪ নভেম্বর। দিনটি ছিল শনিবার। সময় সন্ধ্যা ৭টা। ৯ তলা ভবনের নিচ তলার সুতার গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ ঘটনায় মারা গেছে ১২৬ জন। সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১১১। ফাযার সার্ভিসের হিসাবে এ সংখ্যা ১০০।
আর এসব মরদেহ সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছিল পাশের নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে।
গত শুক্রবার বিকেলে এক বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে সেই নিশ্চিন্তপুর গ্রামে আড্ডা দেয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। চায়ের দোকানে কথা হয়েছে অনেকের সঙ্গেই। পরিচয় দেয়া-নেয়ার সময় এলাকার রাজ্জাক নামে এক মধ্যবয়সীর মুখ থেকে বেড়িয়ে সেই বিভীষিকাময় সেই ২৪ নভেম্বরের রাতের কথা।
তিনি বলেন, তাজরীনে আগুনের ঘটনার পর পাল্টে গেছে আমাদের এলাকা। সাহসী মানুষগুলোর মাঝে এখন ভয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অথচ ওই ঘটনার আগে এলাকার যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি অনেকখানি থমকে গেছে। সেই উৎসাহ নেই এখন আমার মাঝেও।
রাজ্জাক বললেন, ৬ মাস ধরে আমার বাড়িতে ৬টি রুম ফাঁকা আছে। কোনো ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না। অথচ এই বাড়ি ভাড়া দিয়েই চলে আমার পরিবার। তাজরীন চালু থাকার সময় অনেক মানুষের বসবাস ছিল এই এলাকায়। অনেক মানুষ ব্যবসা বাণিজ্য করে খেতে পারতো। এখন সব কিছুতে মন্দা শুরু হয়েছে।
এবার কথা টেনে ধরলেন জহির নামে আরেকজন। তিনি আরো বলেন, এই গ্রামে এই ভাড়াটিয়া ছিল অনেক। এখন কয়েকশ বাড়ি আছে যেগুলো ভাড়াটিয়া পাচ্ছে না। ফাঁকা পড়ে আছে। তাজরীন বন্ধ হওয়ার পর এক সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ সেখান থেকে চলে গেছে। যারা এখন অন্যখানে কাজ করছে।
দোকান থেকে বের হয়েই কথা হলো সবজি বিক্রিতে জয়নালের সঙ্গে। তিনি বললেন, হচ্ছে বিক্রি। আগের মতো না।
সংবাদকর্মী আল-মামুন জানালেন, ভাড়াটিয়ার অভাবে এই এলাকার অনেক মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছেন। আগে যেমন কর্মচাঞ্চল্য ছিল এলাকাটি এখন আর কিছুই নেই। এলাকার মানুষ যা উন্নয়ন করেছে ২০১২ সালের আগেই। গত ৪ বছরে উন্নয়ন হয়েছে তবে থেমে থেমে।
এলাকার অনেকেই জানান, কলকারখানা ছাড়া দেশের কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি কারখানা ভাগ্য বদলে দিয়েছিল নিশ্চিন্তপুরবাসীর। প্রতিটি গ্রামে এমন উন্নয়ন দরকার বলে মনে করেন এলাকার মানুষ।
এমএএস/এসএইচএস/এবিএস