প্রশ্ন তসলিমা নাসরিনের
ব্রেন কিডনি লিভার পিষে গেলেও মেয়েটি ধর্ষণ হয়নি এটাই স্বস্তি?
গত ১ জানুয়ারি ভারতের দিল্লিতে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। গাড়ির সঙ্গে স্কুটির সংঘর্ষের পরে স্কুটি চালক নারীকে গাড়ির নীচে ১২ কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায় ওই গাড়ি। গাড়ির নীচে যে স্কুটিচালক অঞ্জলি আটকে রয়েছেন, তা জেনেও গাড়ি থামাননি অভিযুক্ত মদ্যপ যুবকরা। এ ঘটনায় মারা যান অঞ্জলি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন বলছে, দুর্ঘটনায় অঞ্জলির মাথার খুলি ফেটে ঘিলু রাস্তাতেই কোথাও পড়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে শিরদাঁড়া। শরীরের অন্তত চল্লিশটি জায়গায় মিলেছে আঘাতের চিহ্ন।
মর্মান্তিক এ ঘটনায় ওই নারীর মৃত্যুর পর কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে এসেছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত মেলেনি। অর্থাৎ মৃত্যুর আগে ধর্ষণের শিকার হননি অঞ্জলি। দুর্ঘটনার ভয়াবহতা বাদ দিয়ে ধর্ষণ হননি এমন সংবাদ প্রকাশে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। গণমাধ্যমের কাছে প্রশ্ন রেখে তসলিমা বলেন, অঞ্জলির ব্রেন, কিডনি, লিভার পিষে গেলেও তিনি ধর্ষণ হননি এটাই স্বস্তি?
জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য তসলিমা নাসরিনের পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
‘২০ বছর বয়সী অঞ্জলি সিং স্কুটার চালাচ্ছিল রাতে। একটি বালেনো গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মেয়েটি পড়ে গিয়ে গাড়ির চাকায় আটকে যায়। গাড়ি কিন্তু চলতে থাকে। ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত মেয়েটিকে চাকায় নিয়ে চলে। এরপর রাস্তায় পড়ে থাকে মেয়েটির নিথর শরীর। খুলি আছে, মগজ নেই। শরীর আছে, মাংস নেই। রিব ঢুকে গেছে স্পাইনে, মেরুদণ্ড ঢুকে গেছে পেটে। মোদ্দা কথা থেতলে গেছে শরীর। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে ছিঁড়ে যাওয়া, পিষে যাওয়া, থেতলে যাওয়া ছিন্নভিন্ন শরীরের বর্ণনা আছে। কিন্তু মিডিয়া সেই রিপোর্ট থেকে যে তথ্যকে হাইলাইট করলো সেটা হলো ভ্যাজাইনা ঠিক আছে, রেপের চিহ্ন নেই। অনেকে স্বস্তি পেয়েছে, যাক, তাহলে ভ্যাজাইনাটা বেঁচে গেছে, রেপ টেপ হয়নি।’
তিনি লেখেন, ‘একটি মেয়ের ব্রেন, কিডনি, লিভার, হৃদপিণ্ড-ফুসফুসের চেয়ে ভ্যাজাইনাকে মূল্যবান বলে ধরা হয়। সোজা কথা, একটি মেয়ের জীবনের চেয়ে ভ্যাজাইনার গুরুত্ব বেশি। মেয়েটির যে কিডনি, লিভার, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ইত্যাদি ভাইটাল অরগান থেতলে গেলো, ব্রেন গলে গেলো- সে নিয়ে মাথাব্যথার চেয়ে ভ্যাজাইনা নিয়ে মাথা ব্যথাটা বেশি।’
তসলিমা আরও লেখেন, ‘মেয়েটি ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বীভৎস যন্ত্রণা পেতে পেতে মরে গেছে, সেই নিয়ে দুঃখ করার চেয়ে মেয়েটি মরেছে কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়নি, এই নিয়ে একটি গোপন স্বস্তি কাজ করছে অনেকের মধ্যে।’
কেএসআর/এএসএম