সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি: হাসনাত আব্দুল্লাহ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। এজন্য ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বুধবার (৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
স্ট্যাটাসে হাসনাত আব্দুল্লাহ লেখেন, ‘ডিম ট্রাকে থাকা অবস্থাতেই কারওয়ান বাজারে চার বার ডিমের হাতবদল হয়। এখনো পর্যন্ত এই সরকার কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। শুধু সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ড পরিবর্তন হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এই অভ্যুত্থানের প্রাথমিক মাহাত্ম্য কী?’
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরও গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে দ্রব্যমূল্য। পণ্যের দাম মানুষকে স্বস্তি দিতে পারেনি। বরং স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট বাড়িয়েছে। বিগত সরকারের আমলের সেই সিন্ডিকেট ভাঙার কোনো আলামতও মেলেনি এখনো। এরই মধ্যে ডিম-মুরগির সিন্ডিকেটের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। সরকারের অগ্রাধিকারে থাকলেও বাজারব্যবস্থায় এখনো নিয়ন্ত্রণ আসেনি।
- আরও পড়ুন
সেই সিন্ডিকেটের কবলেই বাজার, দ্রব্যমূল্যে দিশাহারা - ডিমের ডজন ১৮০, স্বস্তি নেই সবজিতেও
- ডিম থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহারে আবারও সুপারিশ
বাজারের তথ্য বলছে, গত দুই মাসে ডিম, মুরগি, সবজি, কাঁচামরিচ, ভোজ্যতেল, চিনিসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি অস্থিতিশীল ডিম ও কাঁচামরিচের দাম। দু-একটি পণ্যের দাম কমেছে অতি সামান্য। এছাড়া প্রধান খাদ্যশস্য চালের যে চড়া দাম ছিল, সেটাও বরং আরও একটু বেড়েছে।
সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিয়েছে, এ দুটি পণ্যের ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ছিল। শুল্ক কমিয়ে আমদানির ব্যবস্থা করে বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বেঁধে দেওয়া দামে কিনতে পারেননি ভোক্তারা।
সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে মুরগিও বাড়তি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে এখনো। রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির নির্ধারিত দর প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা এবং সোনালি মুরগি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা। এছাড়া এ সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত থেকে ডিম আমদানি শুরু করেছে। তাতেও নামছে না দাম।
এই মুহূর্তে বাজারে সবচেয়ে অস্থিতিশীল পণ্য ডিমের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের বড় অভিযোগ এসেছে। প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলেছে, ডিম ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে গত ২০ দিনে প্রায় ২৮০ কোটি টাকা লুট করেছেন করপোরেট ব্যবসায়ীরা।
- আরও পড়ুন
- সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি
- ডিম-মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ২৮০ কোটি টাকা লোপাট
- কমেছে আয়, বাধ্য হয়ে সাশ্রয়ী হচ্ছে মানুষ
সংস্থাটি বলেছে, মূল্যবৃদ্ধিতে করপোরেট গ্রুপ ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ীদের আধিপত্য বিস্তারের কারণে ডিম এবং মুরগির বাজারে অস্থিরতা। এই চক্র বারবার বাজারে কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিলেও তাদের শাস্তি হচ্ছে না। এ কারণে বাজারে অস্থিরতা বেড়েই চলছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, করপোরেট উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১১ দশমিক ১ টাকায় বিক্রির কথা স্বীকার করলেও তারা প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিটি ডিম বিক্রি করেছে ১১ দশমিক ৮০ থেকে ১২ দশমিক ৫০ টাকায়। ফলে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৪ থেকে ১৫ টাকায়। এতে গত ২০ দিনে ১৬০ কোটি টাকা ভোক্তাদের পকেট থেকে তারা হাতিয়ে নিয়েছে।
একই সঙ্গে প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে একই ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫৬ টাকায়। লেয়ার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। প্রতিদিন ৩০ লাখ সব ধরনের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয়। প্রতিটি বাচ্চায় যদি ২০ টাকা বেশি ধরা হয়, তাহলে প্রতিদিন ছয় কোটি টাকা হয়। গত ২০ দিনে প্রান্তিক খামারিদের সঙ্গে প্রতারণা করে ১২০ কোটি টাকা কোম্পানিগুলো অতিরিক্ত মুনাফা করেছে।
এমএমএআর/জেআইএম