সঠিক মানুষের হাতে সাহায্য পৌঁছে দিন
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২৪
সুফি সুফিয়ান
বন্যা হচ্ছে। চাঁদা তুললেন। দৌড়ে গেলেন ত্রাণ দিতে। কিন্তু দিবেন কই? আক্রান্ত মানুষটার সন্ধান কি সত্যিকার অর্থে পেয়েছেন? বাইশের বন্যায় দেখলাম বিশাল বিশাল পণ্যের বহর নিয়ে মানুষ ত্রাণ দিচ্ছে বড় রাস্তার পাশে আশ্রয় নেওয়া মানুষের হাতে। একটা সময়ে তারা ত্রাণ বিক্রি করেছে বলেও জানি। আমার জানা এক মহিলা পঁয়ত্রিশ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছিলেন বন্যার পর! তারে জিজ্ঞেস করলাম, ‘এত নিলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘দেয় তে নিতাম না?’
টাকা নিয়ে দৌড় না-দিয়ে প্ল্যান করেন। যে আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার দিতে যাচ্ছেন, খোঁজ নেন তাদের খাবার আছে কি না। আশেপাশে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র খাবারহীন আছে কি না। একেবারে দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন। আপনি-আমি-তিনি সবাই একটা দুর্গত এলাকায় যাচ্ছি। মধ্যে কিছু এলাকায় কেউ তাকায়নি। এ রকমও হয়েছে দেখেছি।
সবচেয়ে ভালো, স্থানীয় বিশ্বস্ত মানুষের সন্ধান করা। প্রতিটি অঞ্চল ধরে মানুষের খোঁজ নেওয়া। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রের তালিকা কালেক্ট করা। অন্য যারা ত্রাণ দিচ্ছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। আপনি যেই আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার সরবরাহ করছেন; সেটা যদি পর্যাপ্ত হয়, অন্য কেউ ত্রাণ দিতে গেলে তাকে আরেক কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া।
অন্ধভাবে সাপোর্ট করে কারো হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেবেন না। আগে তাকে জানুন। স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী টিম কিংবা জনপ্রতিনিধিদের খোঁজ নেওয়া ভালো। ব্যাপারটা অনেকেই খারাপ ভাবতে পারেন কিন্তু শহর থেকে গিয়ে আপনি কি জানবেন কার আসলে দরকার। সময় থাকলে তাদের সঙ্গে নিয়ে তালিকা করে ত্রাণ দেন। দেওয়ার উদ্যোগ যেহেতু নিয়েছেন। চাঁদাও তুলেছেন। এবার একটু নিজেও কষ্ট করে সঠিক মানুষের হাতে পৌঁছে দিন।
মনে রাখবেন, আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার দিলেই বন্যার্তদের সাহায্য করা হয় না। বন্যার বড় বিপর্যয় হয় বন্যার পর। কত মানুষের ঘর যায়, গরু-ছাগল যায়। রোগ-শোক তো লেগেই থাকে। পানি একটু কমলে দোকানপাট খুললে টাকা দেওয়া উত্তম। এতে সে তার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনবে। আপনি যতই প্রয়োজনীয় জিনিস দেন না কেন, এটা তার চাহিদা না-ও থাকতে পারে।
ঘরে ঋতুবতি কেউ নেই, তবুও প্যাড নিয়ে গেলে পুরুষেরা হাত বাড়াবে নিতে। আমার এটি লাগবে না বলা মানুষ খুবই কম। বন্যার সময় শুধু সহযোগিতা করলেই হবে না। বন্যা শেষে অসহায় ঘরহীন মানুষকে ঘর তুলে দেওয়ারও দায়িত্ব নিতে হবে।
টাকা দিলে লিস্ট করা জরুরি। নয়তো একজন দুইবার নেবেন। ফিরে আসার সময় দেখবেন, এমন কিছু মানুষ হাত পাতছে; তাদের না-দেওয়ার অনুশোচনা লেগেই থাকবে। বন্যা বড় ভয়ংকর। যারা ভুক্তভোগী হয়, শুধু তারাই আন্দাজ করতে পারেন!
লেখক: কবি ও প্রকাশক।
এসইউ/এএসএম