বিষাক্ত সিসা আমদানি নিষিদ্ধ, নেপথ্যে মাহবুব কবীর মিলন
দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া খোলা হলুদের গুঁড়ায় লেড ক্রোমেট (বিষাক্ত সিসা) মেশানো হতো, যা মানুষের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সিসামিশ্রিত এ হলুদ দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে ক্যানসার, হৃদরোগ, স্মৃতিভ্রম, হরমোনজনিত সমস্যা হতে পারে।
হলুদ গুঁড়ায় এ বিষাক্ত সিসার মিশ্রণ পাওয়ার পর তা আমদানি বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন। দুই বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করেছিলেন তিনি। পরে মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষাক্ত সিসা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মাহবুব কবীর মিলন। নিচে তার স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো—
‘আমার ওএসডি এবং দুটি তিরস্কার লাভের (ওয়ার্ল্ড রেকর্ড) অনেক বছর আগে শুরু করেছিলাম। লেগে থাকার আরও দুটি সফলতা যুক্ত হয়েছে পাল্লায়। একটি লেড ক্রোমেট, অপরটি মিট অ্যান্ড বোন মিল (এমবিএম)।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত এক যৌথ গবেষণায় আমাদের দেশের খোলা গুঁড়া হলুদে ব্যবহৃত বিষাক্ত সিসা (লেড ক্রোমেট) পাওয়া গিয়েছিল, যা মানবশরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বাংলাদেশে বিক্রিত হলুদের গুঁড়ার রঙ উজ্জ্বল করতে মারাত্মক বিষাক্ত সিসা (লেড ক্রোমেট) ব্যবহার করা হচ্ছে। সিসামিশ্রিত হলুদ দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া হলে ক্যানসারসহ হৃদরোগ, প্রাপ্তবয়স্কদের স্মৃতিভ্রম, মাথাব্যথা, বিষণ্নতা, হরমোনজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এতে রক্তের স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত এবং শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
আমি তখন ফুড সেইফটি অথরিটিতে। লেড ক্রোমেট আমদানি বন্ধ বা কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ে পত্র দেয়া হলো। লেড ক্রোমেট অবাধে আমদানি হয়। যে কেউ ইচ্ছামতো আমদানি করতে পারে, যা শিল্প ছাড়াও খোলা বাজারে চলে যায়। বাজার থেকে হলুদের গুঁড়ায় মেশানো হয়। সেখান থেকে সিসা আমাদের রক্তে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রথম সভায় সিদ্ধান্ত হলো আমদানিকারকদের তালিকা প্রণয়ন করার জন্য। এরপর রেল মন্ত্রণালয়ে বদলির অর্ডার হওয়ায় ফুড সেইফটি অথরিটি চলে যেতে হলো আমাকে। ২০২০ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে সম্ভবত জয়েন করলাম রেলে। এরপর ওএসডি এবং দুই তিরস্কার।
লেড ক্রোমেটের অগ্রগতি আর কিছু জানি না। ২০২১ এর অক্টোবরে মহামান্য হাইকোর্টের এক আদেশবলে ওএসডি থাকা অবস্থায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করলাম ইভ্যালির। এর কিছুদিন আগে থেকেই খোঁজ নেওয়া শুরু করেছিলাম লেড ক্রোমেটের সিদ্ধান্ত কী হয়েছে। নথির কোনো হদিস পাইনি। কেউ কিছু বলতে পারে না। প্রায় দুই বছর এত বড় একটি জটিল বিষয় হারিয়ে গেল সবার মন থেকে।
ইভ্যালিতে জয়েন করার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব স্যারের সাথে দেখা করে লেড ক্রোমেট নিয়ে বিস্তারিত বললাম তাঁকে। সবকিছু উল্লেখ করে ফরমালিনের মত লেড ক্রোমেটের অবাধ আমদানি বন্ধ করে নিয়ন্ত্রিত পণ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্তির জন্য একটি চিঠি দিলাম স্যারকে। তিনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চিঠির উপর লিখে সাথে সাথে ডেস্ক অফিসারকে নির্দেশ দিয়ে দিলেন।
দুই বছর লেড ক্রোমেট নিয়ে কারো কোন কথা ছিল না। গত মাসের ২০ তারিখ জারি হওয়া নতুন আমদানি নীতি আদেশে দেখলাম লিখা আছে, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে বাণিজিকভাবে লেড ক্রোমেট আমদানি করা যাইবে না।’ বাণিজ্যিকভাবে আমদানি বন্ধ হয়ে গেলেই খোলা বাজারে আর লেড ক্রোমেট কিনতে পাওয়া যাবে না। যেমন হয়েছে ফর্মালিন। মানবদেহে লেডের একটি বড় কারণ বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
ধন্যবাদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব তপন কান্তি ঘোষ স্যারকে। স্যার অনেক অনেক ভালো একটি কাজের সহযোগী এবং সাক্ষী হয়ে রইলেন। এমবিএম নিয়ে আর একদিন বলবো।’
এএএইচ/জেআইএম