বছরজুড়ে জমজমাট আইপিও বাজার

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

মহামারি করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যেও ২০২০ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেন উদ্যোক্তারা। ২০২১ সালে অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ সামান্য কমে। তবে বছরজুড়েই আইপিও’র বাজার ছিল বেশ জমজমাট।

দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠান আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছর এরই মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করেছে। এছাড়া বছরের বাকি সময় আরও দুটি কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করবে। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠান বন্ড ছেড়ে চলতি বছর অর্থ উত্তোলন করেছে। এতে চলতি বছর মোট ১৫টি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজার থেকে এক হাজার ২৮৩ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে।

আগের বছর আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে রেকর্ড এক হাজার ২৯৬ কোটি ৮৭ লাখ ৮৮ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। গত বছর আইপিও’র মাধ্যমে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করা হলেও বছরের শুরুর চিত্র মোটেও ভালো ছিল না। মহামারির কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকে শেয়ারবাজারের লেনদেন।

তার আগে ২০১৯ সালে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে, খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) একের পর এক দুর্বল কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে। ফলে সার্বিক শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয় কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আইপিও অনুমোদন নিয়ে। একপর্যায়ে বড় সমালোচনার মুখে পড়ে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল কমিশন সভা করে নতুন আইপিও না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস ২০১৫ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ৩০ এপ্রিল থেকে আইপিও সংক্রান্ত নতুন কোনো আবেদন গ্রহণ করা হবে না। অবশ্য ওই সিদ্ধান্তের আড়াই মাসের মধ্যে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়িয়ে পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর সংশোধন আনে বিএসইসি। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও নতুন কোনো আইপিও আর অনুমোদন দেয়নি খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ফলে ২০২০ সালের প্রথম পাঁচ মাসও আইপিওশূন্য থাকে বাজার।

তবে মে মাসের শেষদিকে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ার পর আবার আইপিও মার্কেট সরগরম হয়ে ওঠে। তার নেতৃত্বাধীন কমিশন একের পর এক প্রতিষ্ঠানের আইপিও দিতে থাকে। ফলে মাত্র সাত মাসেই রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের সুযোগ পান উদ্যোক্তারা।

গত বছরের শেষ দিক থেকে চলতি বছরজুড়েই জমজমাট থাকে আইপিও’র বাজার। চলতি বছরের প্রথম মাসেই আইপিও’র মাধ্যমে তিনটি কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে। এর মধ্যে স্থিরমূল্য (ফিক্সড প্রাইস) পদ্ধতিতে তৌফিকা ফুড অ্যান্ড লাভেলো আইসক্রিম ৩০ কোটি টাকা এবং ই-জেনারেশন ১৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। আর লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম ১০৪ কোটি ৭৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে তিনটি কোম্পানি। এ মাসেও দুটি স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে এবং একটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলন করে। এর মধ্যে স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে এনআরবিসি ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা এবং দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি টাকা উত্তোলন করে। আর ইনডেক্স অ্যাগ্রো বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে উত্তোলন করে ৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রিমিয়াম ৪১ কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

এরপর মার্চ ও এপ্রিল মাসে নতুন আইপিও আসেনি। দুই মাস বিরতির পর নতুন নিয়মে মে মাসে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আইপিওতে আবেদন করা প্রত্যেক বিনিয়োগকারী শেয়ার পাবেন এই নিয়ম শুরু হয় এই বিমা কোম্পানিটি দিয়েই। স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে এ প্রতিষ্ঠানটির উত্তোলন করা অর্থের পরিমাণ ছিল ১৯ কোটি টাকা।

জুন ও জুলাই মাসেও একটি করে কোম্পানি আইপিওতে আসে। এর মধ্যে জুন মাসে বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার ২২৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম ১৫১ কোটি ২২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। জুলাই মাসে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার ব্যাংক স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলন করে।

এরপর আগস্ট ও সেপ্টেম্বর- এ দুই মাস আবার আইপিও বন্ধ থাকে। অক্টোবরে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে দুটি কোম্পানি। এর মধ্যে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ১৬ কোটি এবং একমি পেস্টিসাইডস ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এ দুটি কোম্পানিই স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে।

পরের মাস নভেম্বরে কোনো কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেনি। ডিসেম্বর মাসে এরই মধ্যে একটি কোম্পানি আইপিও এবং একটি প্রতিষ্ঠান বন্ডের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করেছে। আইপিও’র স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। এআইবিএল মুদারাবা পারপিউচুয়াল বন্ডের মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা।

এছাড়া বর্তমানে বিডি থাই ফুড এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের আইপিও আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বিডি থাই ফুডের আইপিও আবেদন ২৯ ডিসেম্বর এবং ইউনিয়ন ব্যাংকের আইপিও আবেদন ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হবে। এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিডি থাই ফুড ১৫ কোটি টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ৪২৮ কোটি টাকা উত্তোলন করবে।

এমএএস/এমএইচআর/বিএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।