আলোচিত ছিল শিশু রাজন ও রাকিব হত্যাকাণ্ড


প্রকাশিত: ০৭:৩৫ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫

বছরের বিভিন্ন সময়ে নানান নেতিবাচক ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছে বাংলাদেশ। শিশু রাজন ও রাকিব হত্যাকাণ্ড ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। মাগুরায় মাতৃগর্ভে শিশু গুলিবিদ্ধর ঘটনা বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও সবচেয়ে আলোচিত ছিল সিলেটের সামিউল আলম রাজন ও খুলনার রাকিব হাওলাদার হত্যাকাণ্ড। মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা এবং তা ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সবার মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। হত্যাকারীদের দ্রুত সময়ে গ্রেফতার, চার্জশিট ও রায় প্রকাশ করার কারণে জনমনে সন্তোষ প্রকাশ পাই।  

রাজন হত্যা:
সিলেটের জালালাবাদ থানার বাদেয়ালি গ্রামের আজিজুর রহমান ও মা লুবনা আক্তারের ১৩ বছর বয়সী ছেলে সামিউল আলম রাজন। সবজি বিক্রেতা শিশু রাজনকে গত ৮ জুলাই নগরীর কুমারগাঁওয়ে চুরির অভিযোগ তুলে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে সৌদি প্রবাসী কামরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। হত্যাকারীরাই সেই নির্যাতনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়, যা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। খুনীরা লাশ গুম করার চেষ্টাও করে।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। খোদ দেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি রাজন হত্যাকারীদের গ্রেফতারে জোড় তৎপরতা চালান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর জালালাবাদ থানায় কামরুল ইসলামকে (২৪) প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

হত্যার রায় : 
গত ১ অক্টোবর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৬ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে। গত ৮ জুলাইয়ের ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরুর পর মাত্র ১৭ কার্যদিবসে ঘোষিত হলো দেশজুড়ে আলোচিত এই হত্যা মামলার রায়। গত ২২ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল মামলার বিচার।

রায়ে আসামিদের মধ্যে কামরুল ইসলাম, ময়না চৌকিদার, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল ও জাকির হোসেন পাভেল আহমদের ফাঁসির আদেশ দেন। রাজনকে নির্যাতনের দৃশ্য ভিডিওধারণকারী নূর মিয়াকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেন আদালত।

রায়ে মামলার ১৩ আসামির মধ্যে খালাস পেয়েছেন তিনজন। কামরুলের তিন ভাই মুহিত আলম, আলী হায়দার ও শামীম আহমদকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত। এক বছর করে দণ্ড হয়েছে দুলাল আহমদ ও আয়াজ আলীর। রায়ে এক বছর করে কারাদণ্ড হওয়া দুইজনকে এক হাজার টাকা করে এবং দণ্ডপ্রাপ্ত অন্যদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে তাদেরকে আরও ২ মাস কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

রাকিব হত্যা: 
শিশু রাজন হত্যাকাণ্ডের এক মাস না ঘুরতেই গত ৩ অাগস্ট দেশে ঘটে আরেকটি নারকীয় শিশু হত্যা। খুলনার দিনমজুরে আলমের ছেলে ১২ বছরের শিশু রাকিব হাওলাদারকে পেটে হাওয়া দিয়ে খুন করা হয়। শিশু রাকিব টুটপাড়া  কবরখানা এলাকায় শরীফের মোটরসাইকেল ওয়ার্কশপ ‘শরীফ মটর্সে’ কাজ করত। রাকিব মৃত্যুর কিছুদিন আগে ওই গ্যারেজ ছেড়ে পিটিআই মোড়ে আরেকটি গ্যারেজে কাজ নিলে শরীফ মটর্সে মালিক মিন্টু মিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে মলদ্বার দিয়ে বাতাস ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করে।

ঘটনায় গ্যারেজ মালিক শরীফ (৩৫), তার দূর সম্পর্কের চাচা মিন্টু মিয়া (৪০), এবং শরীফের মা বিউটি বেগমকে (৫৫) আসামি করে খুলনা সদর থানায় মামলা করা হয় ।

হত্যার রায়:
রাকিব হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর থানার এসআই কাজী মোস্তাক আহমেদ তিনজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ৫ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের পর ৩৮ জনের সাক্ষ্য শুনে মাত্র ১০ কার্যদিবসে আদালত বিচার-প্রক্রিয়া শেষ করে। মামলার তিন আসামির মধ্যে শরীফ মটর্সের মালিক শরীফ ও মিন্টু মিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। আর শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দেওয়া হয়।

জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।