শিক্ষার্থীদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনে পিছু হটে সরকার


প্রকাশিত: ০৬:৩৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

চলতি অর্থবছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আরোপ করে সরকার। এ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেছিলো শিক্ষার্থীরা। রাজধানীসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে তারা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মুখে ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। এর মধ্য দিয়ে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায়ের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি’র ওপর আরোপিত সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে ৯ সেপ্টেম্বর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে রাজধানীর আফতাবনগরে অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলিবর্ষণ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রারসহ ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়। এঘটনায় শিক্ষার্থীর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পরদিন ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। তবে ওইদিন ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডি, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। ‘নো ভ্যাট’, ‘নো ভ্যাট অন অ্যাডুকেশন’, ‘শিক্ষা কোন পণ্য নয়’- আন্দোলনকারীরা এ ধরনের স্লোগানে রাজপথ কেঁপে উঠে। নানা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে রাজপথে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে রাজধানী। বন্ধ হয়ে যায় চলাচল। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। ব্র্যাকসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন এড়াতে বন্ধ ঘোষণা করে। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম আন্দোলনের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে আন্দোলন ছিলো অহিংস ও শান্তিপূর্ণ।

ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই ১০ সেপ্টেম্বর বৃস্পতিবার দুপুরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঘোষণা দেয় এই ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে। কোনোক্রমেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তা নেয়া হবে না। ওই দিন বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও একই কথা বলেন।

রাতে দশম জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি’র ওপর যে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে এটা পরিশোধ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হবে না।’ কিন্তু তাতেও আন্দোলন থেকে পিছু হটেনি শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ১২ সেপ্টেম্বর (শনিবার) বেলা ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে। ১২ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সারাদেশে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করে। শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে আবারো রাজধানী অচল হয়ে যায়। এবারের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় মালিক পক্ষের ইন্ধন ছিলো বলে অভিযোগ উঠেছিল।

আন্দোলনের উত্তাপ ছড়িয়ে পরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও খুলনাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শহরে। সীতাকুন্ডের কুমিরায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে চট্টগ্রামের আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সারাদেশে ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৬৪টি মেডিকেল কলেজ এবং ১৭টি প্রকৌশল কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নেন। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে এমন শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলন আর দেখেনি দেশবাসী। আন্দোলনের মুখে ১৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাট প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর উপর সাড়ে শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে। কিন্তু বেঁকে বসেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ চারদিকে শুরু হয় কড়া সমালোচনা। ১৪ জুন ফেসবুকে শুরু হয় ‘নো ভ্যাট অন অ্যাডুকেশন’ হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে আন্দোলন।

এনএম/জেডএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।