আলোচিত ছিল জনকণ্ঠের দুই সাংবাদিককে জরিমানা
বিচারাধীন বিষয়ে বিচারকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিবন্ধ প্রকাশ করায় দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। মামলাটি ২০১৫ সালে আদালত পাড়ায় ছিলো ব্যাপক আলোচিত।
আদালত না ওঠা পর্যন্ত এই দুই সাংবাদিককে সেখানে অবস্থান করতে বলা হয়। এটাই তাদের দণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। পাশাপাশি দুই সাংবাদিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করে সর্বোচ্চ আদালত। ওই টাকা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দাখিল করতে হবে বলা হয়।
সংক্ষিপ্ত রায়ে আপিল বিভাগ আদালত অবমাননার বিষয়ে একটি গাইডলাইন দেয়ার কথা বলেছেন। আদালত বলেছেন, যেহেতু আদালত অবমাননার জন্য দেশের যেকোনো নাগরিককে এই আদালতের শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার সম্পর্কে মামলাকারী, আইনজীবী, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যক্তিসহ দেশের সাধারণ নাগরিকদের মনে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। এ জন্য আপিল বিভাগ মনে করে, আদালত অবমাননার বিষয়ে কিছু গাইডলাইন প্রদান করা প্রয়োজন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ১৯২৬ সালের প্রণীত আদালত অবমাননার আইন যুগোপযোগী করতে হবে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও টকশোতে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মনে করে যে, গঠনমূলক সমালোচনা করা যাবে। কিন্তু দেখতে হবে কোনো আইন যেন ভঙ্গ না হয়। বিচারালয় ও বিচারককে নিয়ে কুৎসা রটানো যাবে না। স্বাধীনভাবে কথা বলার অর্থ এই নয় যে, লাগামহীন হবে।
রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানে ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে তা নিরঙ্কুশ নয়, আইন দ্বারা নির্ধারিত। সংবাদমাধ্যমে স্বাধীনতার ব্যবহার অবধারিত করা যাবে না এবং সঙ্কুচিতও করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব মত রয়েছে, কেউ বিচার প্রশাসনকে হেয় করলে বা বিচার বিভাগের ডিগনিটি ক্ষুন্ন করলে বা আদালত এবং বিচারকদের নিয়ে কুৎসা রটনা করলে বা বিচার প্রশাসনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করলে বা কেউ বিচারক এবং বিচারপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জনগণের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করতে কোনো মন্তব্য করলে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার কার্যক্রম শুরু করতে পারে।
রায়ে আরো বলা হয়েছে, যদি প্রধান বিচারপতি তার প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে কোনো কাজ করেন সেটা সমালোচনা করাও আদালত অবমাননা। কোনো বিশেষ আদালতের বেঞ্চ গঠনের ক্ষেত্রে সেখানে কোনো বিচারপতি বা বিচারপতিগণ থাকবেন সে বিষয়ে একজন মামলাকারী বা বিচারকের কিছু বলার নেই। সংবিধান অনুযায়ী আদালতের বেঞ্চ গঠন করা সম্পূর্ণভাবেই প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার।
ওই দিন সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে আদালত বসার পর আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায় আদালত কক্ষে আইনজীবীদের বেঞ্চে বসেন। প্রধান বিচারপতি সকাল ১০টা ৭ মিনিটে রায় পড়া শেষ করলে দুই সাংবাদিকের সাজা শুরু হয়। এই আপিল বেঞ্চের কার্যক্রম শেষ হয় বেলা সোয়া ১টায়। ওই সময় পর্যন্ত মোট ৫৪টি মামলার কাজ চলে।
চলতি বছরের ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ঘোষণার পর দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন আপিল বিভাগ। ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা : পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে নিবন্ধ প্রকাশের জন্য রুল জারির পাশাপাশি নিবন্ধের লেখক স্বদেশ রায় এবং আতিকউল্লাহ খান মাসুদকে তলব করা হয়। ৯ এবং ১০ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রুলের ওপর শুনানি করে ১৩ আগস্ট আপিল বিভাগ রায় ঘোষণা করেন।
এফএইচ/জেডএইচ/এমএস