বছরজুড়েই আতঙ্কিত বিমানযাত্রীরা
রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, ধ্বংস, হত্যা, অপহরণ, সন্ত্রাস, দুর্ঘটনা আর মরণব্যাধি বিস্তারের নানা ঘটনা ঘটলেও বছরজুড়ে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা অন্যান্য বিষয়গুলোকে ছাপিয়ে গেছে। ফলে ২০১৫ সাল আতঙ্কে কেটেছে বিমান যাত্রীদের। এসব ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে অন্তত পাঁচ শতাধিক মানুষের।
বছরের প্রথম বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ফ্রান্সে, ২৪ মার্চ।যা ২০১৫ সালের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিমান দুর্ঘটনা। জার্মানির রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা লুফথানসার মালিকানাধীন সাশ্রয়ী বিমান পরিবহন নেটওয়ার্ক জার্মান উইংসের একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে অন্তত ১৫০ আরোহীর প্রাণহানি ঘটে। স্পেনের বার্সেলোনা থেকে জার্মানির ডুসেলডর্ফ যাওয়ার পথে আল্পস পর্বতমালায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।
৩০ জুন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের সবচেয়ে বড় শহর মেদানে হারকিউলিস সি-১৩০ বিমান বিধ্বস্ত হলে অন্তত ১৪২ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিমানটিতে থাকা ক্রু ও আরোহীর সবাই মারা যায়। একটি গ্রামের ওপর বিমানটি বিধ্বস্ত হলে অন্তত ২২ গ্রামবাসীরও প্রাণহানি ঘটে।
১৬ আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ট্রিগানা এয়ারের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ৫৪ যাত্রী নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার জয়াপুরা থেকে বিমানটি যাত্রা শুরুর পর পরই বিধস্ত হয়। পরে বিমানটির সব যাত্রীর নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ইন্দোনেশিয়া সরকার।
১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হারকুলেল সি-১৩০ সামরিক বিমান আফগানিস্তানের জালালাবাদ বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে ছয় মার্কিন কর্মকর্তাসহ ১১ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের দিন ২ অক্টোবর ইন্দোনেশিয়ার অভ্যন্তরীণ রুটে চলা এভিয়াস্টার টুইন ওটার ডিএইচসি-৬ এর একটি বিমান নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ বিমানটিতে ১০ যাত্রী ছিলেন।
তবে বছরের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটে ৩১ অক্টোবর। এদিন রাশিয়ান এয়ারলাইন্স কোগালিমাভিয়ার এ-৩২১ এয়ারবাসের একটি বিমান মিসরের সিনাই উপদ্বীপে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটিতে যাত্রী ও ক্রুসহ ২২৪ আরোহী ছিলেন। সিনাইয়ের মধ্য অঞ্চলে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে নিশ্চিত করে মিসরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিমানটির অধিকাংশ যাত্রীই ছিলেন রাশিয়ার পর্যটক।
এদিকে, রাশিয়ার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে শুরু হয় বিভ্রান্তি। মিসর সরকার বিমানটি সিনাইয়ে বিধ্বস্ত হয় বলে জানালেও এটি সাইপ্রাসের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে দাবি করেন অনেকেই। এছাড়া এ ঘটনায় কারা জড়িত তা নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্ক এখনো চলছে। রুশ সরকারের মতে এ ঘটনার পেছনে রয়েছে আইএস। এছাড়া ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকারও করে সংগঠনটি।
তবে মিসর সরকার জানায়, তদন্ত কর্মকর্তারা বিমান বিধ্বস্তে আইএসের সংশ্লিষ্ঠতার কোনো প্রমাণ পায়নি। এ ঘটনার পর বিমান যাত্রীদের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা যায়। ব্রিটেন, রাশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকদেরকে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেয়। মিসর থেকে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনে ব্রিটেন ও মস্কো।
রাশিয়ার সাইবেরিয়া অঞ্চলে ২৬ নভেম্বর দেশটির একটি বেসামরিক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ১৫ আরোহী নিহত হয়ে। হেলিকপ্টারটিতে ২২ যাত্রী ও চার ক্রু ছিলেন। ইগারকা বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ১৫ মিনিট পরেই হেলিকপ্টারটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। হেলিকপ্টারটি জ্বালানি সংগ্রহের জন্য যাচ্ছিল।
সর্বশেষ ২০ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার জাভায় একটি সামরিক যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দুই পাইলট নিহত হয়েছে। দেশটির ইয়োগিয়াকারতা শহরে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এসআইএস/এএইচ/পিআর