বছরজুড়ে সীমান্তে ৫৭ বাংলাদেশি হত্যা


প্রকাশিত: ০৬:৫৮ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

২০১৫ সালকে বিদায় দিতে দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। ব্লগার হত্যা, নারী নির্যাতন, হুমকি, মানবপাচারসহ অন্যান্য ঘটনার মতোই বিদায়ী এ বছরটিতে আলোচিত ছিল সীমান্ত হত্যার বিষয়টি। চলতি বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ও শারীরিক নির্যাতনে ৫৭ বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। অপহরণের শিকার হয়েছেন ৮৭ জন। অপহরণের পর ফিরে আসতে পেরেছেন মাত্র ২৭ জন।

এছাড়া গুলি ও নির্যাতনে আহত হয়েছেন শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক। হত্যার ঘটনাগুলোতে বরাবরের ন্যায় বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে গরু পাচারের অভিযোগ তুলেছে বিএসএফ। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ও অধিকারের প্রতিবেদন, ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
সম্প্রতি ভারতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জোরালোভাবে সীমান্ত হত্যার ইস্যুটি তুলে ধরা হয়। এরও আগে বাংলাদেশের সীমান্ত বাহিনী বিজিবির পিলখানাস্থ সদর দফতরে আয়োজিত ‘সীমান্ত সম্মেলন’ এ সীমান্ত হত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছিল বিজিবি। তবে বিগত ১১ মাসের চিত্রে এর কোনো পরিবর্তন ঘটেনি বরং বেড়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠকদের মতে, বিএসএফের কারণেই হচ্ছে সীমান্ত হত্যা। দু`দেশের মধ্যে সমঝোতা এবং এ সম্পর্কিত চুক্তি অনুযায়ী যদি কোন দেশের নাগরিক অনুনোমোদিতভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে, তবে তা অনুপ্রবেশ হিসেবে চিহ্নিত হবার কথা এবং সেই মোতাবেক ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের নিয়ম।

তবে এই সমঝোতা এবং চুক্তি লঙ্ঘন করে বিএসএফ সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যা করছে ও অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে। যা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের হুমকি স্বরূপ।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর বিগত ১১ মাসের (জানুয়ারি-নভেম্বর) তথ্যানুযায়ী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ২৫ বাংলাদেশি নাগরিককে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২, খুলনায় ৯, রাজশাহী ৬ এবং রংপুরে ৮ জন। বিএসএফের শারীরিক নির্যাতনে মারা গেছেন ১২ বাংলাদেশি। এরমধ্যে খুনলায় ৪, রাজশাহী ৭ ও রংপুর ১ জন।
 
আসকের তথ্যানুযায়ী, গত ১১ মাসে বিএসএফ কর্তৃক শারীরিক নির্যাতন ও গুলিতে আহত হয়েছেন ৬৪ জন। এরমধ্যে ঢাকায় ১, খুলনায় ১৯, রাজশাহী ১৭ ও রংপুরে ২৭ জন। বিএসএফ কর্তৃক অপহরণের শিকার হয়েছেন ৫৬ বাংলাদেশি নর-নারী। এরমধ্যে ঢাকায় ৮ জন, খুলনায় ১১, রাজশাহী ৫ ও রংপুরে ২৫ জন। এছাড়া অপহরণের পর ফিরে আসতে পেরেছেন মাত্র ২৪ জন।

তবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের মতে গুলি চালিয়ে, নির্যাতনে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার সংখ্যা আরও বেশি। অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে ২৮ বাংলাদেশি নাগরিককে। এরমধ্যে গুলিতে ১৭ জন, শারীরিক নির্যাতনে ৯ জন এবং এছাড়া একজনকে ধরে নিয়ে গিয়ে গলা কেটে হত্যা করে বিএসএফ।
 
এই সময়ে আহত হয়েছেন ৪০ জন। গুলিতে ২৮ জন আহত হয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনে ৮ জন, এবং তীর ও গুলতির আঘাতে আহত হয়েছেন বাকিরা। এছাড়া ২০ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বিএসএফ।

এছাড়ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) গত জুন মাসে টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করে। এক বিজিবি সদস্যকে গুলি করে আহত করে এবং অপর এক সদস্যকে ধরে নিয়ে যায়।
 
অন্যদিকে, ভারতীয় পত্রিকা দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএসএফ বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাঠানো বন্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এই সময় সীমান্তে ২৪ জন মারা গেছেন।
 
পত্রিকারটির প্রতিবেদনে এক বিএসএফ কর্মকর্তার উদ্বৃতি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, গরু ‘পাচারকারী’ নিহত হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত দুই পাশেই হয়েছে।

আবারো বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনীর পিলখানাস্থ সদর দফতরে আগামী ২২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে সীমান্ত সম্মেলন। এবারও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর সীমান্ত সম্মেলনে আলোচনার শীর্ষে অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গে গুরুত্ব পাবে সীমান্ত হত্যার বিষয়টি। গত ৬ ডিসেম্বর দুপুরে রাজধানীর ঢাকার পিলখানাস্থ বিজিবি সদর দফতরে সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।

তিনি বলেন, মানবাধিকার সংগঠক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা যে পরিসংখ্যান দিচ্ছেন তা পুরোপুরি সঠিক না। আমাদের দেশের লোকজন অনুনোমোদিতভাবে রাতের বেলা বর্ডার পাড় হয়ে ভারত সীমান্তে ঢুকে। গরু আনতে যায়। বিএসএফও দাবি করে যে তাদের উপর হামলা করা হচ্ছে।

বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও গরুর চাহিদা দেশেই পূরণে বাংলাদেশে ক্যাটল ফার্মিংকে (গরু খামার) উৎসাহিত করা উচিত। তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই সীমান্ত হত্যা বন্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে বিজিবি ও বিএসএফ যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু এরপরও বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত হত্যা।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গরু উৎপাদন বাড়লে নতুন বাজার ও চাহিদা দেশ থেকেই পূরণ হবে। পাশাপাশি গরুর জন্য আর ভারতের উপর আমাদের নির্ভর করতে হবে না। এতে করে সীমান্ত হত্যাও বন্ধ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জেইউ/জেডএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।