বছর জুড়ে নির্যাতনের শিকার ৩৩৩৬ নারী ও কন্যাশিশু


প্রকাশিত: ০৯:২৩ এএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫

সাভারের জিঞ্জিরা এলাকায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী রবিউল ও তার দুই ভাই এক বোন মিলে ইলেকট্রিক টেস্টার দিয়ে গৃহবধূ সুখীর এক চোখ উপরে ফেলে এবং অন্য চোখ মারাত্মকভাবে যখম করে। কুমিল্লা সদর উপজেলায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী ৯ মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। বছর জুড়েই নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা নিত্যদিনের খবর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সন্তানের সামনে মাকে ধর্ষণ, মা-মেয়েকে ধর্ষণের মতও ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনাসহ মোট ৩ হাজার ৩৩৬ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৮২৬ জন, গণধর্ষণের শিকার ১৫৮ জন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭১ জনকে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুসারে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনানুসারে বিস্তারিত তথ্য:

ধর্ষণ:
এ সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৫৯৭ জন। জানুয়ারিতে ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারি ৪৩ জন, মার্চ ৫৬ জন, এপ্রিল ৬৯ জন, মে ৭৮ জন, জুন ৬৬ জন, জুলাই ৫৯ জন, আগস্ট ৯২ জন এবং সেপ্টেম্বর ৯৫ জন।

গণধর্ষণ:
এ সময়ের গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ১৫৮ জন। জানুয়ারিতে ৯ জন, ফেব্রুয়ারি ১২ জন, মার্চ ১২ জন, এপ্রিল ২৪ জন, মে ১৮ জন, জুন ২৪ জন, জুলাই ১৫ জন, আগস্ট ২৮ জন এবং সেপ্টেম্বর ১৬ জন।

ধর্ষণের পর হত্যা:
ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ৭১ জন। জানুয়ারিতে ৭ জন, ফেব্রুয়ারি ৮ জন, মার্চ ১১ জন, এপ্রিল ৪ জন, মে ৭ জন, জুন ৫ জন, জুলাই ৯ জন আগস্ট ৯ জন, সেপ্টেম্বর ১১ জন।

ধর্ষণের চেষ্টা:
ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন মোট ১১১ জন। জানুয়ায়িতে ৩ জন, ফেব্রুয়ারি ১১ জন, মার্চ ১০ জন, এপ্রিল ৮ জন, মে ১৫ জন, জুন ১৬ জন, জুলাই ১৯ জন, আগস্ট ১৭ জন এবং সেপ্টেম্বর ১২ জন।

শ্লীলতাহানী:
শ্লীলতাহানীর শিকার হয়েছেন মোট ৭৯ জন। জানুয়ারিতে ৪ জন, ফেব্রুয়ারি ৮ জন, মার্চ ১০ জন, এপ্রিল ৬ জন, মে ১১ জন, জুন ৬ জন, জুলাই ১০ জন, আগস্ট ১১ জন এবং সেপ্টেম্বর ১৩ জন।  

যৌন নির্যাতন:
যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২৭ জন। ফেব্রুয়ারিতে ২ জন, মার্চ ২ জন, এপ্রিল ২ জন, মে ৫ জন, জুন ২ জন, জুলাই ১ জন, আগস্ট ১০ জন এবং সেপ্টেম্বর ৩ জন।

পিতৃত্বের দাবি:
পিতৃত্বের দাবি ঘটনায় নির্যাতনের সংখ্যা মোট ৭ জন। ফেব্রুয়ারিতে ১ জন, মার্চ ১ জন, এপ্রিল ১ জন, জুন ১ জন, জুলাই ২ জন এবং আগস্ট ১ জন।

এসিডদগ্ধ:
এ সময়ের মধ্যে এসিডদগ্ধ হয়েছেন মোট ২৯ জন। জানুয়ারিতে ৫ জন, ফেব্রুয়ারি ৩ জন, মার্চ ৩ জন, এপ্রিল ২ জন, মে ৪ জন, জুন ২ জন, জুলাই ৪ জন, আগস্ট ৫ জন এবং সেপ্টেম্বর ১ জন।

অগ্নিদগ্ধ:
অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন মোট ২৮ জন। জানুয়ারিতে ২ জন, ফেব্রুয়ারি ৪ জন,মার্চ ৩ জন, এপ্রিল ২ জন, মে ৪ জন, জুন ২ জন, জুলাই ৬ জন, আগস্ট ৩ জন এবং সেপ্টেম্বর ২ জন।

অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু:
অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে মোট ১৭ জনের। জানুয়ারিতে ১ জন, মার্চ ৩ জন, মে  ৪ জন, জুন ২ জন, জুলাই ৬ জন এবং আগস্টে ১ জন।

অপহরণ :
অপহরণের শিকার  হয়েছেন মোট ৬৫ জন। জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারি ৭ জন, মার্চ ১২ জন, এপ্রিল ৫ জন, মে ৯ জন, জুন ৫ জন, জুলাই ৬ জন, আগস্ট ১১ জন এবং সেপ্টেম্বর ৪ জন।

নারী ও শিশু পাচার:
নারী ও শিশু পাচার ঘটনার  শিকার  হয়েছেন মোট ৪৬ জন। ফেব্রুয়ারিতে ২ জন ,মার্চ ৩ জন, এপ্রিল ৩ জন, মে ২৫ জন, জুন ৪ জন, জুলাই ২ জন, সেপ্টেম্বর ৭ জন।

পতিতালয়ে বিক্রি:
পতিতালয়ে বিক্রির ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ১৫ জন। ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, মার্চ ১ জন, এপ্রিল ৩ জন, মে ২ জন, জুন ১ জন, জুলাই ২ জন, আগস্ট ২ জন, সেপ্টেম্বর ১ জন।

যৌতুকের দাবি হত্যা:
যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ১৬১ জন। জানুয়ারিতে ১৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জন, মার্চ ১৫ জন, এপ্রিল ১৬ জন, মে ১৪ জন, জুন ২০ জন, জুলাই ১৯ জন, আগস্ট ১৯ জন, সেপ্টেম্বর ২৬ জন।

যৌতুকের কারণে নির্যাতন:
যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৪১ জন। জানুয়ারিতে ১১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন,মার্চ ১১ জন, এপ্রিল ১৪ জন, মে ২০ জন, জুন ১০ জন, জুলাই ২২ জন, আগস্ট ২৪ জন, সেপ্টেম্বর ২০ জন।

শারীরিক নির্যাতন:
শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২২২ জন। জানুয়ারিতে ১৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৮ জন, মার্চ ১৯ জন, এপ্রিল ২৫ জন, মে ২১ জন, জুন ২৫ জন, জুলাই ৩০ জন, আগস্ট ৩১ জন, সেপ্টেম্বর ৩৭ জন।

গৃহপরিচারিকা নির্যাতন:
গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩২ জন। জানুয়ারিতে ১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২ জন, মার্চ ২ জন, এপ্রিল ২ জন, মে ৫ জন, জুন ২ জন, জুলাই ২ জন, আগস্ট ৮ জন, সেপ্টেম্বর ৮ জন।

গৃহপরিচারিকা হত্যা:
গৃহপরিচারিকা হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ২৮ জন। জানুয়ারিতে ৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২ জন, মার্চ ৪ জন, এপ্রিল ৩ জন, মে ৪ জন, জুন ৬ জন, জুলাই ২ জন, আগস্ট ১ জন, সেপ্টেম্বর ২ জন।

গৃহপরিচারিকার আত্মহত্যা:
গৃহপরিচারিকা আত্মহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ২ জন। মে ১ জন, সেপ্টেম্বর ১ জন।

হত্যা:
বিভিন্ন কারণে হত্যার শিকার হয়েছেন মোট ৫০০ জন। জানুয়ারিতে ৪৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৬৩ জন, মার্চ ৪৯ জন, এপ্রিল ৫৬ জন, মে ৬৭ জন, জুন ৫৬ জন, জুলাই ৬২ জন, আগস্ট ৫৩ জন, সেপ্টেম্বর ৪৯ জন।

হত্যার চেষ্টা:
হত্যার চেষ্টা ঘটনার শিকার হয়েছেন  মোট ৩৬ জন। জানুয়ারিতে ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২ জন, মার্চ ৩ জন, এপ্রিল ৬ জন, মে ৩ জন, জুন ৩ জন, জুলাই ৫ জন, আগস্ট ৮ জন, সেপ্টেম্বর ১ জন।

রহস্যজনক মৃত্যু:
রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে  মোট ১১০ জন। জানুয়ারিতে ১২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জন, মার্চ ১৪ জন, এপ্রিল ৯ জন, মে ১৪ জন, জুন ১২ জন, জুলাই ৯ জন, আগস্ট ১২ জন, সেপ্টেম্বর ১২ জন।

আত্মহত্যা:
আত্মহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ২৩১ জন। জানুয়ারিতে ১৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২৯ জন, মার্চ ৩৪ জন, এপ্রিল ২২ জন, মে ১৯ জন, জুন ৩৩ জন, জুলাই ২৬ জন, আগস্ট ২৩ জন, সেপ্টেম্বর ২৬ জন।

আত্মহত্যার চেষ্টা:
আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন  মোট ১০ জন। জানুয়ারিতে ১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২ জন, মার্চ ২ জন, এপ্রিল ২ জন, মে ১ জন, আগস্ট ১ জন, সেপ্টেম্বর ১ জন।

আত্মহত্যার প্ররোচনা:
আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছেন  মোট ৭ জন। মে ১ জন, জুন ১ জন, আগস্ট ২ জন, সেপ্টেম্বর ৩ জন।

উত্ত্যক্ত:
উত্ত্যক্তের ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ২৯৩ জন। জানুয়ারিতে ৩১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩১ জন, মার্চ ৩৫ জন, এপ্রিল ২৫ জন, মে ২৬ জন, জুন ২৫ জন, জুলাই ২৩ জন, আগস্ট ৪৩ জন, সেপ্টেম্বর ৫৪ জন।

উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যা:
উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যার ঘটনার শিকার হয়েছেন মোট ১৬ জন। জানুয়ারিতে ২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১জন, মে ৪ জন, জুন ৬ জন, জুলাই ১ জন, আগস্ট ২ জন।

প্রেম প্রত্যাখান:
প্রেম প্রত্যাখান ঘটনায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন  মোট ৬ জন। মার্চ ১ জন, জুন ৩ জন,আগস্ট ১ জন, সেপ্টেম্বর ১ জন।

ফতোয়া:
ফতোয়ার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন  মোট ২৭ জন। জানুয়ারিতে ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১ জন, মার্চ ২ জন, এপ্রিল ২ জন, মে ৩ জন, জুন ১ জন, জুলাই ৭ জন, আগস্ট ৩ জন, সেপ্টেম্বর ৩ জন।

বাল্যবিবাহ:
বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছেন  মোট ৬৭ জন। জানুয়ারিতে ৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১০ জন, মার্চ ৯ জন, এপ্রিল ৬ জন, মে ৫ জন, জুন ৪ জন, জুলাই ৩ জন, আগস্ট ১৬ জন, সেপ্টেম্বর ৮ জন।

পুলিশী নির্যাতন:
পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৫ জন। জানুয়ারিতে ৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২ জন, মার্চ ৪ জন, এপ্রিল ৭ জন, মে ৪ জন, জুন ৩ জন, জুলাই ২ জন, আগস্ট ৫ জন, সেপ্টেম্বর ১ জন।

জোরপূর্বক বিয়ে:
জোরপূর্বক বিয়ের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন  মোট ৫ জন। ফেব্রুয়ারিতে ১ জন, মার্চ ১ জন, মে ১ জন, জুলাই ১ জন, আগস্ট ১ জন।

অন্যান্য:
অন্যান্য কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন  মোট ১৫৭ জন। জানুয়ারিতে ২৭ জন, ফেব্রুয়ারি ২৯ জন,মার্চ ১৩ জন, এপ্রিল ২৫ জন, মে ১০ জন, জুন ১২ জন, জুলাই ১৩ জন, আগস্ট ১৪ জন, সেপ্টেম্বর ১৪ জন।

এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ নারী ও মানবাধিকার সংগঠন এবং সরকারের একক ও সম্মিলিত উদ্যোগের পরও বর্তমানে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি নির্যাতনের ঘটনা বেড়েই চলছে বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

এএস/জেডএইচ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।