নতুন জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা


প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

২০১৫ সাল জুড়েই অস্থির ছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ বছর বেশির ভাগ হামলার শিকার হয়েছেন ব্লগার, প্রকাশক আর মাজারের পীররা। টার্গেটেও আছেন তারা। বছরের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় হত্যা করা হয় ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। এরপর একের পর এক হত্যা করা হয় ব্লগারদের।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস)। আত্মপ্রকাশ করে আরো তিনটি জঙ্গি সংগঠন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আদলে সংগঠনগুলো  নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্লগার-প্রকাশকদের হত্যার পাশাপাশি মাজারের পীরদের হত্যার জন্যেও আত্মপ্রকাশ করে আরো কয়েকটি সংগঠন।
 
আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের (একিউআইএস) আত্মপ্রকাশ

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছিলেন আল-কায়েদা প্রধান আইমান আল জাওয়াহিরি। ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর বাবু, অনন্ত বিজয় দাসসহ অন্যান্য ব্লগারদের হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। প্রতিটি বার্তায় তারা আল-কায়েদার ভারতীয় উপমাদেশের (একিউআইএস) শাখাকে নিজেদের অভিভাবক হিসেবে দাবি করছিল।

অবশেষে ২ জুলাই সত্যি হয় জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তা। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয় আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান সমন্বয়কসহ ১২ জনকে। বাংলাদেশে আল কায়েদার সদস্য গ্রেফতারের ঘটনা এটাই প্রথম। র্যা ব জানায়, তারা বাংলাদেশ থেকে আল-কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতো।

‘বাংলাদেশ জুনুদ আল তাওহীদওয়াল খিলাফাহ’ ও ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ’

এ বছরের জুনের ৩ তারিখে আরো নতুন দু’টি জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান পায় মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সংগঠন দুটি হচ্ছে, ‘বাংলাদেশে জুনুদ আল তাওহীদওয়াল খিলাফাহ’ ও ‘বাংলাদেশ জিহাদী গ্রুপ’।

পুলিশের তথ্যমতে, দেশের বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল এ সংগঠনে যুক্ত সদস্যদের। তাদের উদ্দেশ্য সংগঠনগুলোর গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাত করে দেশকে খিলাফত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠন দুটি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতো।
 
আনসার আল-ইসলাম
ব্লগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় (নিলয় নীল) হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এ বছরের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলাম বাংলাদেশ। ইরাক-সিরিয়া ভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠন নভেম্বরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ দেশের ৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায়।

তবে বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, দেশে আনসার আল ইসলামের আদৌ কোনো অস্তিত্ব আছে কি-না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তাদের অস্তিত্ব খুঁজতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
 
মুজাহিদ অব বাংলাদেশ
এ বছরের ৩ ডিসেম্বর। মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকা থেকে সন্দেহভাজনভাবে ৬ যুবককে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) আদলে ‘মুজাহিদ অব বাংলাদেশ’নামে নতুন দল গঠনের বিষয়টি জানায়।
 
পুলিশ জানায়, নতুন এই সংগঠনে সদস্য কমপক্ষে ২৫ জন। সদস্যরা মনে করে, বিভিন্ন মাজারের পীররা নিজেদের অনুসারী তৈরি করে শিরক করছে। মুসলমানদের বিভ্রান্ত করছে। তাদের হত্যা করাকে ‘জিহাদ’মনে করছে সংগঠনটি। এরই অংশ হিসেবে তারা মাজারের পীরকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার। সংগঠনটি গত দুই বছর ধরে সংগঠিত হচ্ছে। এদের কিছু সদস্য উচ্চ বেতনে চাকরি করেন। বেতনের কিছু টাকা তারা সাংগঠনিক কাজে খরচ করে। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ভালো। অনেকের আইটি সম্পর্কে জ্ঞানও আছে।
 
এআর/এসএইচএস/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।