বিদায়ী বছরে আলোচিত ছোটপর্দা


প্রকাশিত: ১০:১৮ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬

বছর শেষ হচ্ছে আজ। এই বছরের হিসাবে-নিকেশে খাতা বন্ধ হয়ে যাবে আজই। জেনে নেয়া ভালো কেমন গেল ২০১৬ ছোটপর্দা। চলতি বছরের ছোটপর্দা বিগত একযুগের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ছিল। এই আলোচনার পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। তবে বছরের শুরুটা যে অমিত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল শেষটা সেই সম্ভাবনার বাস্তবায়ন খুব বেশি ঘটেনি। কয়েকটি কারণে গোটা টেলিভিশ অঙ্গন ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আর অস্থিরতার মধ্যে। চলুন জেনে নেয়া যাক ২০১৬ সালে ছোটপর্দার আলোচিত বিষয়গুলো-

সুলতান সুলেমান
ছোটপর্দা নিয়ে লিখতে গেলেই সবার আগে চলে আসে দীপ্ত টিভিতে প্রচার হওয়া বহুল আলোচিত তুর্কি সিরিয়াল ‘সুলতান সুলেমান’। তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের রাজত্ব ছিল পৃথিবীজুড়ে। এই সাম্রাজ্যের স্বর্ণযুগ ছিল সুলতান সুলেমানের নেতৃত্বে ষোড়শ থেকে সপ্তাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। তৎকালীন সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে এদেশে গত বছরে ১৮ নভেম্বর থেকে দীপ্ত টিভিতে প্রচারে আসে সিরিয়ালটি। এটি প্রচার হয় বাংলায় ডাবিং করে। প্রচারের দুমাসের মধ্যেই এটি আলোচনায় আসে। চলতি বছরের শুরু থেকেই এই সিরিয়ালটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করে। দর্শক চাহিদা বিবেচনা করে চ্যানে কর্তৃপক্ষ এটি পুনরায় প্রচার শুরু করে। সুলতান সুলেমানের জনপ্রিয়তা দেখে দেশের অন্যান্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও বিভিন্ন বিদেশি সিরিয়াল প্রচার শুরু করে। ফলে হুমকির মুখে পড়ে যায় দেশীয় নির্মাণ ও শিল্পী-কলাকুশলরী- দাবি বোদ্ধাদের। এর ফলে দানা বাঁধে আন্দোলন। টেলিভিশনের বিভিন্ন পেশাজীবীরা মিলে সব চ্যানেলে বিদেশি সিরিয়াল বাংলায় ডাবিং করে চালোনোর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন। এই আন্দোলন এখনো চলমান। চলছে অনেক তর্ক-বিতর্ক ও সমালোচনা।

টিভি নাটক  
ছোটপর্দার প্রাণ বলা যেতে পারে টিভি নাটক। গেল কয়েক বছর ধরেই মানহীন নাটকের রাজত্ব। চলতি বছরেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রচুর নাটক নির্মাণ হয়েছে। গল্পের বৈচিত্র্যতার অভাব, মানহীন নির্মাণ আর বিজ্ঞাপন বিড়ম্বনার কারণে বলা চলে খণ্ড বা ধারাবাহিক এসব নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন দর্শক। ভালো যে কটি নাটক আলোচনায় এসেছে তা একেবারেই নগন্য। তারচেয়েও হতাশার বিষয় হলো জাহিদ হাসান, মোশাররফ করিম, রিয়াজের মতো অভিনেতাদের নামের পাশেও উল্লেখ করার মতো নাটক যোগ করা যায়নি, যা আলোচনায় এসেছে সবই স্বস্তা জনপ্রিয়তার স্রোতে ভেসে। বাংলা নাটকের যে ইতিহাস রয়েছে সেখানে এসব নাটকের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে না। তবে বিনোদনের ভাবনায় এই অভিনেতারা দর্শকদের মনোরঞ্জনে উতরে গেছেন।

চঞ্চল, অপূর্ব ও নিশোর পাশাপাশি তরুণদের মধ্যে মিশু, জোভান, সালমান মুক্তাদির, তৌসিফের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে তাদের চরিত্রে বৈচিত্র্য কম চোখে পড়েছে। অভিনেত্রীদের মধ্যে এগিয়ে ছিলেন উর্মিলা, ঈষানা, অহনা, অপর্ণা, মৌসুমি হামিদ, শবনম ফারিয়া, মেহরিন ইসলাম নিশা, সুষমা সরকার, সাবিলা নূর, সাফা কবির, নাবিলা ইসলাম, আইরিন আফরোজ, এলভিন, তাসনুভা তিশারা। বছরে বেশ কিছু নাটকে চমক দিয়েছেন তারিন, বাঁধন, পূর্ণিমা, তিশা, নওশাবা, রিচি সোলায়মান, সুমাইয়া শিমু। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে হাজির হয়েছেন শামীমা নাজনীন। আলোচনায় ছিলেন মাসুদ সেজান, সাগর জাহান, শিহাব শাহীন, অরন্য আনোয়ার, সকাল আহমেদ, মাবরুর রশিদ বান্নাহ, মারুফ মিঠু প্রমুখ নির্মাতারা। এইসব নির্মাতাদের ‘প্রিয় রঙ হলুদ’, ‘দুই পাখি’, ‘এভারেজ আসলাম’, ‘ওয়াও’, ‘মেঘবালিকা’, ‘মন খারাপের দৃশ্যাবলী’, ‘শত ডানার প্রজাপতি’, ‘লাল রঙা স্বপ্ন’, ‘মায়াপুরের মায়া’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’, ‘এক্সওয়াইজেড রির্টানর্স’, ‘কানামাছি’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস’, ‘ভালোবাসার পংক্তিমালা’ ইত্যাদি নাটকগুলো দর্শকদের মন কেড়েছে।

ফেসবুক সেলিব্রেটি
বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে, নাটকের অভিনয়ে ফেসবুক সেলিব্রেটিদের রাজত্ব। গেল বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে অভিনয়ে অনেক দুর্বলতা থাকা সত্বেও ফেসবুকে জনপ্রিয়তার হাত ধরে প্রচুর নতুন মুখ টিভি নাটকে কাজ করেছেন। এই বছরে তার পরিমাণ বেড়েছে অনেক বেশি। চরিত্রের সঙ্গে অভিনয়ের কোনো সামঞ্জস্যতা না থাকলেও কেবলমাত্র ইউটিউব বা অনলাইনে ভিউয়ার পাওয়ার আশায় নির্মাতারা ঝুঁকেছেন ফেসবুক সেলিব্রেটিদের দিকে। আবার কিছু কিছু চ্যানেল এসব সেলিব্রেটিকে দিয়ে নাটক পরিচালনাও করিয়েছেন। এতে করে একদিকে অপরিপক্ক অভিনয় ও নির্মাণে দর্শক যেমন বিরক্ত হয়েছেন তেমনি মেধাবীরা থেকেছেন সুযোগের বাইরে। এইসব কথিত সেলিব্রেটিরা করপোরেট হাওয়ায় সবই পান; অর্থ, বিত্ত। অথচ অসংখ সিনিয়র অভিনয়শিল্পীরা থাকছেন অবহেলায়। এই বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখতে পারেন নির্মাতা ও চ্যানেলমালিকরা। দিনে দিনে মেধাহীন চকচকে কথিত সেলেবদের হাতে বন্দি হয়ে যাচ্ছে ছোট পর্দা। এর থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।

ডিরেক্টরস গিল্ড
দেশে বিভিন্ন টেলিভিশন বা স্যাটেলাইট চ্যানেলে প্রচারিত নাটক বা কাহিনীচিত্রের পরিচালকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ডিরেক্টর’স গিল্ড। এই সংগঠনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২২ জুলাই। এই সংগঠনের নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়লাভ করেছেন নাট্যনির্মাতা গাজী রাকায়েত। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন নির্মাতা এস এ হক অলিক। কয়েক বছর পর এ সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। টিভি নির্মাতাদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ হিসেবে এ সংগঠনটি অপার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নির্বাচন ছিল চলতি বছরের আলোচিত বিষয়ের একটি।

ম্যাগাজিন ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানের বাজারে এখনো সেরা বিটিভি। দেশের মানুষ বিটিভি আজকাল খুব একটা আগ্রহ নিয়ে না দেখলেও মিস করতে চান না হানিফ সংকেতের পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনায় ‘ইত্যাদি’। দেশের বিভিন্ন জেলা কিংবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার ঐতিহ্য তুলে ধরে বিভিন্ন আয়োজনে ইত্যাদি এবারও তার সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখেছে। এছাড়া বিটিভিতে আনজাম মাসুদের উপস্থাপনায় ‘পরিবর্তন’ নামের ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানটিও দর্শক প্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন অঙ্গনের তারকাদের নিয়ে প্রাণবন্ত এই অনুষ্ঠান ছুঁয়ে গেছে দর্শকের মন। একইসঙ্গে চলচ্চিত্রের খুঁটিনাটি নিয়ে এশিয়ান টিভিতে সৈকত সালাউদ্দিনের উপস্থাপনায় ‘মুভিবাজার’ নামের একটি অনুষ্ঠানও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। যদিও উপস্থাপক পরিবর্তনের কারণে বছর শেষের দিকে মুভি বাজারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন নৃত্যানুষ্ঠান, টকশোও দেখা গেছে। তবে আলোচনায় আসার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। আর রিয়েলিটি শো-গুলো ছিল গতানুগতিক।

এফটিপিও ও মিডিয়া ইউনিটি
নির্মাতা-শিল্পী-কলাকুশলীদের সমন্বনে ১২টি সংগঠনের ফেডারেশন (ফেডারেশন অব টেলিভিশন প্রফেশনালস অর্গানাইজেশন) এফটিপিও প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের প্রতিপাদ্য ‘শিল্পে বাঁচি,  শিল্প বাঁচাই’। এই সংগঠন ৫টি দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলে দেশিয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মিডিয়া ইউনিটি। এটি মূলত চ্যানেল মালিকদের সংগঠন। যদিও বছর শেষে এ সংগঠনের বিলুপ্তি ঘটে। তবে বিদেশি ডাবিং করা সিরিয়াল বন্ধ করাসহ নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে এফটিপি। বছরের শেষদিকে এসে সংগঠনটি আলো কেড়ে নিয়েছে ছোটপর্দার।

এনই/এলএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।