৭ আস্তানায় ৩৪ জঙ্গি নিহত : তছনছ জঙ্গি নেটওয়ার্ক


প্রকাশিত: ০৪:২০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬

২০১৬ সালের আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান। আবিষ্কৃত হয় ৭ জঙ্গি আস্তানা। একের পর এক অভিযানে তছনছ হয় জঙ্গি আস্তানা ও নেটওয়ার্ক।

গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুর, রূপনগর, আজিমপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ও এলিট ফোর্স র্যা ব। এসব অভিযানে ‘নব্য জেএমবির’ শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীসহ নিহত হয় ৩৪ জঙ্গি সদস্য। এছাড়া জঙ্গিদের হামলায় চার পুলিশ সদস্য, ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ মোট ২৫ জন মারা যান।

অপারেশন থান্ডার বোল্ট
গুলশানে জঙ্গি দমনে ও জিম্মি ঘটনা অবসানের জন্য পরিচালনা করা হয় থান্ডার বোল্ট অপারেশন। অভিযানে অংশ নেয় সামরিক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চার সহস্রাধিক সদস্য। সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অভিযান শুরু হয়। মাত্র ১২-১৩ মিনিটের এ অভিযান পরিচালিত হয়। থান্ডার বোল্ট অভিযানের তত্ত্বাবধান করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহম্মদ সফিউল হক। আরো ছিলেন নৌবাহিনী প্রধান, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যা বের মহাপরিচালক ও অন্যান্য সংস্থার প্রধানরা। কমান্ডো অভিযানে ৬ জঙ্গি নিহত হয়।

এ হামলার রেশ কাটতে না কাটতেই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হন। হামলার দিনই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় শফিউল নামে আরেক জঙ্গি।

এরপর নড়েচড়ে বসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান। জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড, অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা, প্রশিক্ষণ-প্রশিক্ষক ও জঙ্গিদের আশ্রয়দাতাদের শনাক্ত করা হয়। তদন্তে উঠে আসে নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়ানো উগ্রপন্থী সংগঠন নব্য জেএমবি। পরে ৫ আগস্ট র্যা বের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শফিউল ও তার সহযোগী আবু মোকাতিল নামে দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়।

কল্যাণপুরে অপারেশন স্টোর্ম-২৬  
গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের একটি জঙ্গি আস্তানার সংবাদ পায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখানে চলে ‘অপারেশন স্টোর্ম’। এতে নিহত হয় ৯ জঙ্গি। নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা যায়নি।
 
নারায়ণগঞ্জে অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭
গত ২৭ আগস্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই অভিযানে নিহত হয় নব্য জেএমবি নেতা ও গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহম্মেদ চৌধুরী। এ সময় তামিমের সঙ্গে মারা যায় তার আরও দুই সহযোগী।

braverdrink

রূপনগরের আস্তানায় হামলা
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালায় মিরপুরের রূপনগরে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় জাহিদুল ইসলাম নামে অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি গাইবান্ধার চরাঞ্চলে প্রশিক্ষণ দেন। নারায়ণগঞ্জে তামিম চৌধুরী নিহত হওয়ার পর নব্য জেএমবিতে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার কথা ছিল মুরাদ ওরফে মেজর মুরাদ ওরফে জাহিদুলের।

আজিমপুরে আস্তানায় হামলা
১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। সেখানে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা ও আশ্রয়দাতা তানভীর কাদেরী নিহত হয়। সেখান থেকে আটক করা হয় তিন নারী জঙ্গি ও তানভীরের ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে।

গাজীপুরে অপারেশন ‘স্পেইট-এইট’
সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর জঙ্গি দমনের ছিল একটি সফল দিন। পুলিশ ও র্যা ব গাজীপুর, আশুলিয়া ও টাঙ্গাইলের চার আস্তানায় অভিযান চালায়। গাজীপুরে পৃথক দুই অভিযানে ৯ জঙ্গি, টাঙ্গাইলে দুই জঙ্গি এবং আশুলিয়ায় নিহত হয় জঙ্গিদের আশ্রয়দাতা।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নব্য জেএমবির ৭০ ভাগ শক্তি কমে গেছে। তাদের পক্ষে এখন বড় হামলা চালানো সম্ভব নয়।

জেইউ/জেএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।