বছরের আলোচিত সব ঘটনা


প্রকাশিত: ০৪:০৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদায়ের পথে ২০১৬। বছরটি ইতিহাসের পাতায় রেখে গেছে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা। বছরজুড়ে আলোচিত ছিল তনু ও মিতু হত্যার মতো নারকীয় ঘটনা। এছাড়া আলোচনায় ছিল ‘বৃক্ষমানব’ খ্যাত আবুল বাজনাদার ও খাদিজার সুস্থতার সংবাদও। তবে জঙ্গিবাদ ও এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতাই ছিল বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সংবলিত গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর বর্ণনা তুলে ধরা হলো।

গুলশান হামলা
বছরের শুরুতে আলোচনার শীর্ষে ছিল জঙ্গিবাদ। গত ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করে এবং দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডার বোল্টে’ নিহত হয় ৬ জঙ্গি।  তবে অভিযানের আগেই জঙ্গিরা ২০ জিম্মিকে হত্যা করে। এ ঘটনা তদন্তে নব্য জেএমবির নেতা তামিম আহমেদ চৌধুরী এবং মারজানের নাম উঠে আসে। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় তামিম। তবে এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে মারজান।

তনু হত্যা
গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের বাসার অদূরে জঙ্গলে  সোহাগী জাহান তনুর লাশ পাওয়া যায়। ২১ মার্চ তার বাবা ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন। ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত ও দুই দফা ময়নাতদন্ত করা হয় তনুর মরদেহ। তনুর পোশাক থেকে সংগ্রহ করা আলামতের ডিএনএ পরীক্ষায় তিন ব্যক্তির শুক্রাণু পাওয়া যায়। তবে ৯ মাসেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বছরের প্রায় পুরো সময় আলোচনায় ছিল এ হত্যাকাণ্ড। এছাড়া হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে  ঝড় ওঠে।

মিতু হত্যা ও বাবুল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি
গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার অজ্ঞাত পরিচয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে হত্যাকারীরা এখনো পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মিতু হত্যার পর রাজধানীর রামপুরায় শ্বশুরবাড়িতে দুই সন্তানকে নিয়ে বসবাস করছেন বাবুল। ২৫ জুন রাতে হঠাৎ করেই বাবুলকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাকে। ‘জোরপূর্বক’ স্বাক্ষর নেয়া হয় পদত্যাগপত্রে। অবশেষে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বর্তমানে আদ-দ্বীন ফাউন্ডেশনের একটি প্রকল্পে কর্মরত তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে ত্রুটি
ঘটনা-১: ৮ জুন সৌদি আরব সফর শেষ করে দেশে ফিরছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীরা। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করার মুহূর্তে রানওয়েতে ধাতব বস্তু দেখতে পান পাইলট। রানওয়েতে না নেমে প্রায় ২০ মিনিট বিমানটি আকাশে উড়তে থাকে। এ ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। বরখাস্ত করা হয় বিমানের ট্রাফিক কন্ট্রোলের দুই কর্মকর্তাকে।
 
ঘটনা-২ : ১৭ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো ঘটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানের ত্রুটির ঘটনা। হাঙ্গেরি সফরে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং-৭৭৭ যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি করে। ত্রুটি সারিয়ে ওই বিমানেই প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা বুদাপেস্টে পৌঁছান। এ ঘটনায় বিমানের ৬ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়। ত্রুটিগুলো দুর্ঘটনা নাকি ইচ্ছাকৃত ছিল এনিয়ে দেশে ও বিদেশে আলোচনার শীর্ষে ছিল।

রিজার্ভ চুরি ও এটিএম জালিয়াতি
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম আলোচিত ঘটনা। সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে (আরসিবিসি) যাওয়া টাকার একটি বড় অংশ পরে ফিলিপিন্সের জুয়ার টেবিলে চলে যায়। এর মধ্যে ক্যাসিনো মালিকের ফেরত দেয়া দেড় কোটি ডলার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে আগস্টে ফিলিপাইনের ম্যানিলা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দল। এর মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরতও পেয়েছে বাংলাদেশ। সিআইডির তদন্ত অনুযায়ী, এ পর্যন্ত এই চুরির সঙ্গে ২৩ বিদেশি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তার যোগসাজশ পাওয়া গেছে।

খাদিজার ফিরে আসা
গত ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজে বিএ (পাস) পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় হামলার শিকার হন খাদিজা। সিলেট থেকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে এনে প্রথমেই লাইফ সাপোর্টে রাখা হয় তাকে। কয়েকদিন পর লাইফ সাপোর্ট খুলে দুদফা অস্ত্রোপচারের পর ৫৩ দিন পর আশঙ্কামুক্ত হন খাদিজা। হাসিমুখে সাংবাদিকদের সামনে আসেন, দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। এ ঘটনায় তার হত্যাচেষ্টাকারী ছাত্রলীগ নেতা বদরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানন্দি দেয় বদরুল। দেশজুড়ে এই বর্বর হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যাপক আন্দোলন ও আলোচনা হয়।
 
রাবি শিক্ষক রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা
২৩ এপ্রিল সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী। তবে মুহূর্তের মধ্যে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যা করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক হন ফাইজুল্লাহ ফাহিম নামে হত্যাকারীদের একজন। সন্ধ্যায় হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। ফাহিমকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে পুলিশের কথিত এক বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ফাহিম। হাতকড়া পরা অবস্থায় ফাহিমের ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় আলোচনার শীর্ষে আসে বিষয়টি।
 
রিশা হত্যা
প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২৪ আগস্ট রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশাকে (১৪) ছুরিকাঘাত করে ওবায়দুল খান নামের এক বখাটে যুবক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে শয্যাশায়ী রিশা তার মা ও পুলিশকে বখাটে ওবায়দুলের কথা বলে গিয়েছিল । চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে চিরবিদায় নেয় রিশা। মৃত্যুর দিনই রাজধানীর কাকরাইল সড়ক অবরোধ করে উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের শিক্ষার্থীরা। পরদিন রিশা হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবির আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। অবশেষে গ্রেফতার করা হয় বখাটে ওবায়দুলকে। বর্তমানে সে কারাগারে।
 
বৃক্ষ মানব
খুলনার দাকোপ উপজেলার আবুল বাজানদার। গাছের শেকড়ের মতো ৫ কেজি ওজনের হাত নিয়ে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন তিনি। এপিডার্মো ডিসপ্লেশিয়া ভেরুকোফরমিস ভাইরাসে আক্রান্ত এই রোগ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। দেশ-বিদেশে চলে এই বৃক্ষমানবের আলোচনা। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় অনেকে। ঢামেকে কয়েক দফা অপারেশনের পর এখন কিছুটা সুস্থ আবুল।
 
এআর/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।