বছরজুড়ে আলোচিত ছিল যেসব হত্যাকাণ্ড


প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

বিদায়ের পথে ঘটনাবহুল ২০১৬। এ বছর আশাব্যঞ্জক অনেক ভালো খবর যেমন ছিল, তেমনি মন খারাপ করে দেয়ার মতো খবরও কম ছিল না। বছরটিতে বেশ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনা দেশবাসীর মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তবে এ বছর সংগঠিত হত্যাকাণ্ডগুলোর অধিকাংশেরই কূলকিনারা করতে পারেনি গোয়েন্দা পুলিশ।

তনু
বছরের শুরুতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় তনু হত্যাকাণ্ড। ২০ মার্চ সেনানিবাস এলাকায় নিজ বাড়ির কয়েকশ গজ দূরেই খুন হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু। সেনানিবাস সংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তবে তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আজও হয়নি।

জবি ছাত্র নাজিম উদ্দিন সামাদ 
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্র নাজিমউদ্দিন সামাদকে গত ৬ এপ্রিল গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের মতে, নাজিম ধর্মবিরোধী বা ব্লগার ছিলেন না। তবে বিভিন্ন সময়ে মতামত তুলে ধরে ফেসবুকে সত্রিুয় থাকতেন। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীও ছিলেন সামাদ।  

সাধু পরমানন্দ রায়  
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ২২ এপ্রিল প্রকাশ্য দিবালোকে সাধু পরমানন্দ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ধর্ম নিয়ে বিরূপ মন্তব্য বা কারও সঙ্গে বিরোধ ছিল না বলে দাবি পরিবারের। তবে বাসুরিয়া রসরাজ ঠাকুরের অনুসারী ছিলেন তিনি। সেখানে সনাতন ধর্মের তপস্যা করতেন।

অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকী  
চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকায় বাড়ির কাছেই নির্মমভাবে কুপিয়ে তাকে খুন করা হয়।  

অধ্যাপক রেজাউল ‘কোমলগান্ধার’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক এবং ‘সুন্দরম’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা ছিলেন।  

কাশিমপুরে প্রধান কারারক্ষী 
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের কয়েকশ গজ দূরে প্রধান কারারক্ষী রুস্তম আলীকে গত ২৫ এপ্রিল গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রুস্তম আলী ‘সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর’ পদে ছিলেন।
 
জুলহাস মান্নান ও তনয়
পার্সেল দেয়ার কথা বলে গত ২৫ এপ্রিল বিকেলে কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায় ৫/৭ যুবক জুলহাস মান্নানের বাসায় ঢুকে তাকে এবং তার বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে। সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদক জুলহাস আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাতো ভাই।

মাহবুব রাব্বী তনয় ছিলেন লোকনাট্য দলের কর্মী। পিটিএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবেও তিনি কাজ করতেন। আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ (একিউআইএস) শাখা ওই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করলেও পুলিশ অভিযুক্ত করে দেশীয় উগ্রপন্থীদের।

নিখিল জোয়াদ্দার
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে নিখিল জোয়াদ্দার নামে এক দর্জিকে গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ধর্ম নিয়ে নিখিল নাকি কয়েক বছর আগে কটূক্তি করেছিলেন বলে প্রচার ছিল। তখন তার বিরুদ্ধে মিছিল এবং তার বাড়ি আক্রান্ত হয়েছিল।

রাজশাহীতে পীর  
শিক্ষক রেজাউল করিমের মতো একই কায়দায় গত ৭ মে কুপিয়ে হত্যা করা হয় শহিদুল্লাহ নামে এক ‘পীর’কে। গোয়ালন্দঘাটের পীর নূর মোহাম্মদ দয়ালের ভক্ত ছিলেন শহিদুল্লাহ। এ ঘটনায় মামলা হলেও রহস্য উদঘাটিত হয়নি।

বৌদ্ধ ভিক্ষু
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে মং শু হুক (৭৫) নামে এক বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ১৪ মে সকালে বাইশরি বৌদ্ধবিহারের ভেতর তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। জানা যায়, দুই বছর আগে বৌদ্ধমন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভিক্ষু মং শু হু সেখানে ধ্যানমগ্ন থাকতেন।

মিতু হত্যা
বছরের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যাকণ্ড। গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি এলাকায় সন্তানকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় নিজ বাসার ১০০ গজ দূরে ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন মাহমুদা আক্তার মিতু। ঘটনার পর পুলিশ জানায়, জঙ্গি দমনে বাবুল আক্তারের সাহসী ভূমিকার কারণে জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে খুন করতে পারে। ঘটনার পর মিতুর স্বামী এসপি (পরে অব্যাহতি পেয়েছেন) বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দফতরে অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর  সন্দেহজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মূলহোতারা আজও ধরাছোয়ার বাইরে।

হলি আর্টিসান  
গত ১ জুলাই রাতে হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায়। হামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ৯ ইতালীয়, ৭ জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন। এ ঘটনায় রাতেই ইসলামিক স্টেট (আইএস) হামলার দায় স্বীকার করে। ঘটনার পরদিন সকালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ পরিচালনা করে সেনা কমান্ডোর একটি দল। কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। তারা হলো- রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সাবিহ মোবাশ্বের, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম পায়েল।

শোলাকিয়া হামলা
গুলশান হামলার রেশ না কাটতেই ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হন। আট পুলিশ সদস্যসহ আহত হন আরো ১৫ জন। তবে এ ঘটনায় জড়িত আটজনকে তাৎক্ষনিকভাবে আটক করা হয়।

হামলার দিনই বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আবীর রহমান নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য। আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয় শফিউল নামে আরেক জঙ্গি। এরপর দেশব্যাপী শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান।

স্কুলছাত্রী রিশা হত্যা
গত ২৪ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজের উপরে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির সুরাইয়া আক্তার রিশার পেট ও হাতে ছুরি মেরে পালিয়ে যায় টেইলার্স কর্মচারী ‘বখাটে’ ওবায়দুর রহমান। পরে তিনদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যায় রিশা।  
 
পরিবার ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে নীলফামারী ডোমার থেকে ওবায়দুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দেয় সে।   

নাটোর ৩ যুবলীগ কর্মী নাটোরের যুবলীগ কর্মী রেদওয়ান আহমেদ সাব্বির, আবু আব্দুল্লাহ ও সোহেল আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে গত ৫ ডিসেম্বর উদ্ধার করা হয়।

নিহতদের পরিবারের অভিযোগ, র‌্যাব পরিচয়ে রাতে সদর উপজেলার তকিয়া বাজার থেকে তাদের তুলে নেয়া হয়। পরদিন নাটোর সদর থানায় এ ব্যাপারে জিডিও করেন তারা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে র‌্যাব। নিহত তিনজনই শীর্ষ সন্ত্রাসী। সাব্বির ও সোহেলের নামে ১৫টি মামলা আছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

জেইউ/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।