আল্লাহর হিকমতের নিদর্শন


প্রকাশিত: ০৪:৫৪ এএম, ২০ মার্চ ২০১৬

আল্লাহ তাআলার সমগ্র সৃষ্টি হিকমতে পরিপূর্ণ। যারা তাঁর হিকমত বুঝতে পারে, তারাই সফলকাম। বনি ইসরাইল সম্প্রদায়ের লোক নিহত হওয়ার সঙ্গে হত্যাকারী শনাক্তে গরু জবাইয়ের নির্দেশ, গরুর গুণাগুণ নিয়ে বনি ইসরাইলের বাড়াবাড়ি, গরুর দাম নির্ধারণ করে দিয়ে বাজারে প্রেরণের পর বিক্রির পূর্বে আবার মায়ের অনুমতি নেয়ার প্রসঙ্গ ইত্যাদি বিষয়ে রয়েছে আল্লাহ তাআলার কুদরতের নির্দশন। সংক্ষেপে গরুর মালিকের পরিচয় ও আল্লাহর হিকমতরে নির্দশনগুলো তুলে ধরা হলো-

যুবকের পরিচয়
এ যুবকের পিতা বনি ইসরাইলের একজন সৎ মানুষ ছিলেন। তার একটি গাভী ছিল। ইন্তিকালের সময় তার স্ত্রীর নিকট শিশু সন্তানের জন্য একমাত্র সম্বল গাভীটি রেখে গেলেন। ছেলেটি পিতার মৃত্যুর বড় হয়ে কাঠ বিক্রি করে সংসারের খরচ নির্বাহ করতো।

ছেলেটি তার কাঠ বিক্রির টাকা তিনভাগে ভাগ করতো-
ক. এক তৃতীয়াংশ নিজের জন্য ব্যয় করতো।
খ. এক তৃতীয়াংশ মায়ের জন্য খরচ করতো।
গ. বাকী এক তৃতীয়াংশ অর্থ দান-খয়রাত করতো।

অনুরূপভাবে ছেলেটি রাতকে তিনভাগে ভাগ করতো-
ক. একভাগ ঘুমাতো।
খ. একভাগ মায়ের খেদমত করতো।
গ. একভাগ আল্লাহ তাআলার ইবাদাত করতো।

ছেলেটি যখন বড় হওয়ার পর তার মা তাঁকে বলল, তোমার বাবা মিরাস স্বরূপ তোমার জন্য একটি গাভী রেখে গেছে। সেটি মাঠে আল্লাহর তত্ত্ববধানে লালিত-পালিত হচ্ছে।

তুমি মাঠে গিয়ে এ বলে আওয়াজ দাও যে, হে ইবরাহিম, ইসমাইল, ইসহাক ও ইয়াকুবের প্রভু! গাভী প্রদান করুন! গাভীর নিদর্শন হলো- তা হবে গাঢ় হলুদ বর্ণের খুবই চমৎকার গাভী।

যুবক মাঠে গিয়ে দেখলো গাভীটি জমিনে বিচরণ করছে এবং মায়ের নির্দেশ পালন করার সঙ্গে সঙ্গে গাভীটি তার সামনে চলে আসে। মায়ের বর্ণিত নিদর্শন ও গুণাবলী গাভীর মাঝে রয়েছে।

যুবক যখন গাভীর ঘাড় ধরে টানতে থাকে তখন গাভী বলল, হে মায়ের বাধ্য সন্তান! তুমি আমার উপর আরোহন কর, তোমার আরাম হবে।

যুবক বলল, আমার মায়ের নির্দেশ হলো, তোমার গর্দান ধরে নিয়ে যাওয়া, আরোহন করা নিষেধ আছে।

গাভী বলল, হে যুবক! তুমি যদি আমার কথা মতো আমার উপর আরোহন করতে, তবে আমি কখনো তোমার বাধ্য হতাম না। তোমার মায়ের আনুগত্যের কারণে তোমার এ মর্তবা হাসিল হয়েছে যে, তুমি যদি পাহাড়কেও নির্দেশ দাও, সেও চলতে শুরু করবে।

এবার যুবক গাভী নিয়ে মায়েরে কাছে চলে যায়। মা তাকে বলে, তুমিতো গরীব। দিনে কাঠ সংগ্রহ করো আর রাতের বেলা ইবাদাত-বন্দেগি করো। এতে তোমার প্রচুর পরিশ্রম ও কষ্ট হয়। তাই ভালো মনে করছি, তুমি এটি বিক্রি করে ফেল।

ছেলে জিজ্ঞাস করে, কত দামে বিক্রি করবো? মা তাকে তৎকালীন বাজার মূল্য তিন দিরহামে বিক্রির নির্দেশ দেয় এবং বলে যে বিক্রির পূর্ব মুহূর্তে ফের আমার কাছে জেনে নিবে।

যুবক মায়ের নির্দেশ মোতাবেক গাভীটি বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে যায়।

আল্লাহ তাআলা যুবকের মাতৃভক্তির পরীক্ষার জন্য ফেরেশতা প্রেরণ করলেন, ফেরেশতা গাভীর দাম জিজ্ঞাস করতেই যুবক তিন দিরহাম দাম চায় এবং বলে শর্ত হলো আমার মাকে জিজ্ঞেস করে বিক্রি করবো।

ফেরেশতা বলল, ছয় দিরহামের বিনিময়ে আমার কাছে গাভীটি বিক্রি করে দাও। জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই।

যুবক বলল, তুমি যদি গাভীর সমপরিমাণ স্বর্ণও আমাদে দাও, তবু আমি মায়ের অনুমতি ছাড়া গাভী বিক্রি করবো না। এ কথা বলে যুবক মায়ের কাছে গমন করলো এবং ঘটনা বর্ণনা করলো।

মা যুবককে জানালেন, সেতো ক্রেতা নয়, বরং ফেরেশতা, তোমার পরীক্ষা নেয়ার জন্য এসেছে। বরং তাকে জিজ্ঞেস করো আমরা এ গাভীটি বিক্রি করবো কিনা?

যুবক ফেরেশতার নিকট গাভীটি বিক্রির ব্যাপারে পরমর্শ চাইলে ফেরেশতা বললেন, এখনই তা বিক্রি করো না।

অতপর ফেরেশতা বনি ইসরাইলের নিহত ব্যক্তি ও হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে তাঁদের সম্পূর্ণ ঘটনা যুবক জানিয়ে বলল, এখনই গাভী বিক্রির প্রয়োজন নেই। গাভী নিয়ে বাড়ি চলে যাও।

বনি ইসরাইলের লোকেরা যখন এ গাভী দেখবে তখন তারা এটিকে খরিদ করে নিবে। তুমি তাদের নিকট গাভীর চামড়া পরিপূর্ণ স্বর্ণ-মুদ্রার বিনিময়ে গাভীটি বিক্রি করবে।

ঐ দিকে বনি ইসরাইলের উপর যুবকের নিকট থাকা এমন একটি গাভী জবাইয়ের নির্দেশ হলো। তাঁরা গাভী খুঁজতে খুঁজতে যুবকের নিকট চাহিদা মোতাবেক গাভীটি পেল।

অবশেষে যুবকের নিকট থেকে তারা গাভীটি পরিপূর্ণ চামড়া ভর্তি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে গাভীটি খরিদ করে নেয়।

পরিশেষে…
এ ছিলো আল্লাহ তাআলার কুদরতের মহা নির্দশন। তিনি তাঁর অনুগত অস্বচ্ছল যুবককে এ গাভী বিক্রি অর্থ দ্বারা স্বচ্ছলতা দান করবেন। আবার বনি ইসরাইলের মৃত ব্যক্তির হত্যাকারীও শনাক্ত করবেন।

আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের এভাবেই হিকমত দ্বারা সাহায্য করে থাকেন। মুসলিম উম্মাহকেও তিনি দুনিয়া ও  আখিরাতের তাঁর হিকমত ও কুদরত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।