মৃত্যু যেখানে মধুর
দ্বিতীয় হিজরি সনের কথা। মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের গোড়া পত্তনের কাজ চলছে। বিশ্বনবীর নিকট কয়েকজন ধর্ম প্রচারক চেয়ে আরবের এক শেখ দূত পাঠালেন। তার কথা মতো বিশ্বনবী হজরত খুবাইবসহ কয়েক জন জ্ঞানী ব্যক্তিকে ধর্ম প্রচারে পাঠালেন।
ধর্ম প্রচারক দল আরব শেখের অঞ্চলে পৌছামাত্র একদল লোক তাদের ঘিরে ফেলে। তাদেরকে শর্ত দেয়া হলো- হয় তোমরা আত্মসমর্পন কর না হয় মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকো। সেখানে খণ্ড যুদ্ধ বেধে যায়। ধর্ম প্রচারক দলের অনেকেই শহীদ হয়ে যায়। বন্দি হলেন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু।
আরব শেখ ও তার লোকজন হজরত খুবাইবকে মক্কার কুরাইশদের হাতে তুলে দিলেন। দিন তারিখ ঠিক করে তাঁকে নৃশংসভাবে আনুষ্ঠানিকতার সহিত হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নির্ধারিত দিনে হজরত খুবাইবকে বধ্যভূমিতে নেয়া হয়। তিনি কুরাইশদের কাছে শেষ আবেদন জানালেন আল্লাহর নিকট প্রার্থনার সুযোগ দেয়ার জন্য। প্রার্থনার অনুমতি পেয়ে হজরত খুবাইব একটু তাড়াতাড়ি দুই রাকাআত নামাজ আদায় করলেন।
তারপর উপস্থিত সবাইকে লক্ষ্য করে বললেন, জীবনের শেষ নামাজ একটু দীর্ঘতর করতে নিশ্চিত মৃত্যুপথযাত্রীদের ইচ্ছা হয়। তথাপিও আমি তা অতি দ্রুত সময়ে শেষ করলাম, এই কারণে যে, তোমাদের মনে এ সন্দেহের উদ্রেক না হয় যে, আমি ভীত হয়ে কালক্ষেপন করছি।
মৃত্যু মঞ্চে উঠানোর সময় তাঁকে আবারো বলা হয়, এখনো সময় আছে ইসলাম ত্যাগ করে নব জীবন লাভ কর। মৃত্যু যেখানে মধুর সেখানে তাঁদের প্রস্তাবে হজরত খুবাইব ঠাণ্ডা মাথায় ঘি ঢেলে দিলেন।
ধীর স্থির কণ্ঠে হজরত খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘অসত্যের পথে বেঁচে থাকার চাইতে মুসলমান হয়ে মৃত্যু বরণ করা শতগুণে ভালো। ইসলামে আত্মসমর্পিত জীবনই আমার কাছে সর্বাধিক মূল্যবান।’
বধ্যমঞ্চের চর্তুদিক থেকে তাঁকে তীর ও বর্শা নিক্ষেপে শহীদ করা হয়। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
যুগে যুগে সত্যাশ্রয়ী মানুষ মৃত্যুকে দুপায়ে দলেছে। তাঁদের মাধ্যমেই পৃথিবীতে ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো জিন্দা দিল ঈমানের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস