শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলাম


প্রকাশিত: ১০:৩৪ এএম, ০৭ মার্চ ২০১৬

শিশু অধিকার ইসলামে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান সময়ে পত্র-পত্রিকা, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায়, অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে চলছে শিশু নির্যাতনসহ হত্যার মতো মারাত্মক ঘটনা। যা মহামারীর আকার ধারণ করছে। অথচ আল্লাহ তাআলা শিশুর অধিকারের বিষয়ে তার জন্মের পূর্ব থেকেই কল্যাণমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেছেন। কেননা ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই মানুষের জাগতিক ও পরলৌকিক কল্যাণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইসলামের আহ্বানে সাড়া দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। প্রাপ্ত বয়স্কদের অধিকারের স্বীকৃতির পাশাপাশি শিশুদের কল্যাণের সার্বিক দিক নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ধন-সম্পদ, বংশীয় আভিজাত্য, রূপ-গুণ এবং দ্বীনদারী-এ চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখেই মেয়েদেরকে বিবাহ কর। কারণ একজন শিশু তাঁর মায়ের ধন-সম্পদ, রূপগুণ, বংশীয় আভিজাত্যের পাশাপাশি তাঁর দ্বীনদারীর গুণাবলী উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়।

শিশু যখন মায়ের গর্ভে আসে তখন আল্লাহ তাআলা গর্ভবর্তী মায়েদের জন্য কষ্টকর সকল কাজকে সহজ করে দেন। আল্লাহ তাআলা গর্ভবর্তীদের অনাগত সন্তানের নিরাপত্তায় এমনকি শিশুর জন্মের পর দুগ্ধদানকারীণী মায়েদের জন্যও শিশুর খাদ্যাভাব ও নিরাপত্তার কথা ভেবে আল্লাহ তাআলা রমজানের রোজা রাখার বাধ্যবাধকতাকে উঠিয়ে দিয়েছেন। মায়েদের বুকের দুধে রেখেছেন শিশুর রোগ-বালাই প্রতিরোধকারী প্রতিশেধক। যা শিশুদের প্রতি আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত।

শিশুদের বেঁচে থাকার অধিকার ইসলাম কর্তৃক স্বীকৃত ও সুরক্ষিত। কোনো অবস্থাতেই পিতামাতা সন্তান হত্যা করতে পারে না। এমনকি চরম দরিদ্র্যতার সম্মুখীন হলেও তা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে দারিদ্র্যের ভয়ে হত্যা করো না। তাদেরকে আমিই রিযিক দেই এবং তোমাদেরকেও। তাদেরকে (শিশুদেরকে) হত্যা করা মহাপাপ। (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১৭)

যারা শিশু সন্তানদের হত্যা করে তাদের উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, যারা নির্বুব্ধিতার দরুন অজ্ঞানবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে, তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। (সুরআ আনআম- আয়াত ১৪০)

আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন, যখন মুসলিম নারীদের বয়াত গ্রহণ করবে, তখন যেন তাদের (নারীদের) থেকে শপথ নেয়া হয়। শপথের একটি ছিল এই যে, ‘তারা যেন সন্তান হত্যা না করে।’

শিশুর প্রতি দয়া প্রদর্শনও ইবাদাত। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক ব্যক্তি একটি শিশু নিয়ে বিশ্বনবীর খিদমতে এসে শিশুটিকে চুমু দিতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃশ্য দেখে জিজ্ঞেস করলেন, শিশুটির প্রতি কি তোমার দয়া জেগে উঠেছে? সে বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি এর চেয়েও অধিক দয়া করেন। কেননা তিনি দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (বুখারি)

শিশুর প্রতি ভালোবাসায় জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত আবশ্যক হয়ে যায়। হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট একদা এক মহিলা দুটি কন্যা সন্তানসহ আসলেন। তিনি তাদেরকে তিনটি খেজুর দিলেন। মহিলা দুই সন্তানকে দুটি খেজুর দিলেন। আর একটি নিজে খাওয়ার জন্য মুখে দিতে যাবেন। এমন সময় বাচ্চারা সেটিও খেতে চাইলো। মহিলাটি তার খেজুরটি দু’টুকরো করে তাদের দিয়ে দিলেন। যা হজরত আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে আশ্চার্য করলো। তিনি বিশ্বনবীকে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন, তিনি বললেন, হে আয়িশা! আল্লাহ তাআলা এ স্ত্রীলোকটিকে এর বিনিময়ে জান্নাত দান করবেন অথবা এর বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। (মুসলিম)

পরিশেষে...
আল্লাহ বলেন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি পার্থিব জীবনের শোভা এবং স্থায়ী সৎকর্ম। তোমরা প্রতিপালকের পুরষ্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং কাঙ্ক্ষিত হিসেবেও উৎকৃষ্ট। (সুরা কাহাফ: আয়াত ৪৬) সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা সকলের জন্য তাদের সন্তানকে হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন। তাই শিশু সন্তানের প্রতি সদয় হই। আল্লাহ বিধান পালনার্থে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শিশুদের নিরাপত্তা ও অধিকারের ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসি। শিশু সন্তান নির্যাতনসহ হত্যার মতো সীমা লংঘনের অপরাধে আল্লাহকে ভয় করি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিশুদের কল্যাণে কাজ করা এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় সতর্কতা অবলম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।