ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব


প্রকাশিত: ০৩:৩৮ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আল্লাহ তাআলা মানুষকে গোমরাহী থেকে সত্যের পথ দেখানোর জন্য যুগে যুগে অগণিত অসংখ্য নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন। যাদের প্রত্যেককেই তিনি স্বজাতির ভাষায় দান করেছেন আসমানি কিতাব। যাতে করে মানুষের মাঝে তাওহিদের প্রচার-প্রসারের কাজ সহজ হয়। তাইতো আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক নবী-রাসূলকেই তার গোত্রের ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কুরআনে আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেন, ‘আর আমি প্রত্যেক পয়গম্বরকেই (নবি-রাসুলগণকে) স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে করে তাদেরকে পরিস্কার বুঝাতে পারে। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪)
মানুষের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এবং মনের ভাব প্রকাশ করার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো ভাষা। তাইতো ভৌগলিক অঞ্চলভেদে প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদ ভাষা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা সুরা রূমের ২২ নং আয়াতে উল্লেখ করেন, ‘আর মহান আল্লাহর নিদর্শসমূহের হতে (একটি নিদর্শন হলো) আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ রয়েছে।’

বাঙালি ও বাংলাদেশীদের মুখের ভাষা, প্রাণের ভাষা, আত্মার বন্ধনের ভাষা তথা রাষ্ট্রীয় ভাষা হলো বাংলা ভাষা। যে ভাষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানির হানাদার বাহিনীর অস্ত্রের মুখে গর্জে উঠেছিল এদেশের সূর্য সন্তান সালাম, রফিক ও জাব্বারদের মতো একদল দেশপ্রেমী মর্দে মুজাহিদ। যাদের অবদানে আজ বাংলা ভাষায় ইসলাম ও মুসলিম তাহজিদ তমদ্দুনের দাওয়াত, প্রচার-প্রসারে আমরা বাংলা ভাষাভাষীদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত ও কুরআনের বাণী পৌছাতে সক্ষম হচ্ছি। তাই বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অনুশীলন চর্চায় বিকল্প নেই।

ভাষার গুরুত্ব উপলব্দি করেই আল্লাহ তাআলার পয়গাম্বর হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর ভাই হজরত হারুন আলাইহিস সালামকে নিজের সঙ্গি করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এই কারণে যে, সুন্দর ও প্রাঞ্জল ভাষায় আল্লাহর একত্ববাদ ও দ্বীনের বক্তব্যকে উত্তম বচন ভঙ্গিতে তৎকালীন সম্রাট ফিরাউন ও তাঁর সঙ্গিদের নিকট তুলে ধরবে। ভাষার গুরুত্ব বুঝাতে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বক্তব্যকে আল্লাহ তাআলা তা কুরআনে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার ভাই হারূন, তিনি আমার থেকে অনেক বেশি প্রাঞ্জল ভাষী। তাই আপনি তাকে আমার সহযোগী করে প্রেরণ করুন; যাতে সে আমাকে (দাওয়াতের ক্ষেত্রে তার প্রাঞ্জল ভাষার দ্বারা) সত্যায়িত করে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি (আমার বক্তব্য সত্য হওয়া সত্বেও) তারা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৩৪)
ভাষার গুরুত্ব অত্যাধিক হওয়ায় আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের উপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন হিব্রু ভাষায়,  ইউনানি ভাষায় যাবুর অবতীর্ণ করেছেন পয়গাম্বর হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের উপর, আর হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপর ইঞ্জিল অবতীর্ণ করেছেন সুরিয়ানি ভাষায়।

সর্বোপরি সমগ্র জাতির হেদায়েতের জন্য আলোর দিশারী হিসেবে শেষ নবি ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ করেন তাঁর স্বজাতি ভাষা আরবি ভাষায়।
সালাম, রফিক, জাব্বারসহ এদেশের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল জনতার আত্ম ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত ভাষা বাংলা ভাষা। যা আমাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপহার ও দান। আর এ বাংলা ভাষায় অনুদিত হয়েছে কুরআনের হাদিসের অগণিত অসংখ্য কপি। রচিত হয়েছে কুরআনে হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থসহ অসংখ্য ইসলামি পুস্তকের মহাসম্ভার। যা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য আল্লাহ অশেষ রহমত।

সুতরাং যারা দেশের জন্য বুকের তাঁজা রক্তকে এ জমিন ঢেলে দিয়েছেন, আজকের এই দিনে সেই সকল ভাষা শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করাও ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা সকল ভাষা শহীদদের সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।

পরিশেষে...
এ দেশের সকল নাগরিককে জাতি ও দেশ মাতৃকার জন্য, ভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে এক কাতারে শামিল হওয়া তাওফিক দান করুন। বাংলা ভাষাভাষী সবাইকে ভাষার গুরুত্ব উপলব্দি করে তাঁর মর্যাদাকে সমুন্নত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।