ভালো-মন্দের উপকারিতা ও ক্ষতিতে মুমিনের করণীয়
ভালো ও মন্দ কাজের মধ্যেই মানুষ জীবন অতিবাহিত হয়। মানুষের সব ভালো কাজে সাওয়াবের পাশাপাশি আছে শারীরিক উপকারিতা। আবার মন্দ মন্দ কাজে গুনাহের পাশাপাশি আছে শারীরিক ক্ষতিও। হাদিসের বর্ণনা থেকে এসব বিষয়গুলো সুস্পষ্ট। ভালো-মন্দ কাজের ব্যাপারে কী বলেছেন বিশ্বনবি?
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাওয়াবের কাজ বা উপকারিতা হলো-
১. চেহারার উজ্জ্বলতা;
২. অন্তরের আলো;
৩. রিজিকের প্রশস্তি;
৪. শরীরের শক্তি ও
৫. মানুষের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টিকারী।
আর গুনাহের কাজ বা ক্ষতি হচ্ছে-
১. চেহারার কলুষতা;
২. অন্তরের অন্ধকার;
৩. শরীরের দুর্বলতা;
৪. রিজিকের সংকট ও
৫. মানুষের অন্তরে বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী।'
সুতরাং মানুষের জন্য করণীয় হলো, বেশি বেশি ভালো কাজ করার মাধ্যমে সাওয়াব ও দুনিয়ায় বিশেষ উপকার গ্রহণ করা। মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং শারীরিক ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা। এর এটি ছোট্ট একটি আমলের মাধ্যমে করা সম্ভব। তাহলো- বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা।
মনে রাখতে হবে
যারা আল্লাহর বিধি-নিষেধ মেনে জীবনযাপন করেন। আল্লাহকে ভয় করেন। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকেন। তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এসেছে কুরআনে-
‘(যারা) প্রতিপালকের কাছে উপস্থিত হতে ভয় করে এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস।’ (সুরা নাজিয়াত : আয়াত ৪০-৪১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারা যারা তওবা করে।’ (তিরমিজি)
তাই শারীরিক ক্ষতি থেকে বাঁচতে গোনাহমুক্ত জীবন গঠনের যেমন বিকল্প নেই। আবার যে কোনো অন্যায় বা গুনাহ সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাওবা- ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া জরুরি।
তাওবা-ইসতেগফার কেন জরুরি?
মানুষের ভালো কাজ যেমন জীবনকে আলোকিত করে তেমনি গুনাহের কাজ তাদের জীবনকে করে দেয় অন্ধকার। তাই মানুষের কর্তব্য হল পাপের জন্য সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে নেওয়া। তওবা করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার ওপর অত্যন্ত খুশি হন। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তওবায় আল্লাহ তাআলা এই পরিমাণ খুশি হোন যে, যেমন ধর- তোমাদের কেউ গরম মরুভূমিতে গাছের সঙ্গে উট বেঁধে ঘুমিয়ে পড়ল। সে উটের সঙ্গে তার খাদ্য-পানীয়সহ সব আসবাবপত্র ছিল। ঘুম থেকে জেগে দেখল তার উটটি যথাস্থানে নেই। এদিক ওদিক খুঁজে কোথাও পাওয়া গেল না। যখন সে একেবারে নিরাশ হয়ে গেল। তখনই দেখল তার উটটি যথাস্থানে রয়েছে। এমন মুহূর্তে সে ব্যক্তি যতটুকু খুশি হবে, ঠিক কোনো বান্দা তওবাহ করলে আল্লাহ তাআলা তার চেয়েও বেশি খুশি হন।’ (মুসলিম)।
সুতরাং তাওবাহ করাও সাওয়াবের কাজ। আর তাতে শারীরিক ক্ষতির পরিবর্তে মিলবে উপকার। বাড়বে রিজিক। তাজা হবে ঈমান। যেমনটি মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘যারা তাওবা করে, ঈমান আনে এবং ভালো কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তাদের খারাপ কাজগুলোকে ভালো কাজে পরিণত করে দেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যারা তওবাহ করে এবং নেক কাজ করে আল্লাহর প্রতি তাদের তাওবাহ-ই সত্যিকারের তাওবা।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ৭০-৭১)
সুতরাং শারীরিক ক্ষতির পরিবর্তে উপকার পেতে গুনাহমুক্ত জীবন খুবই জরুরি। তাই এর জন্য তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই। এ তাওবা-ইসতেগফারের জন্য কোনো দিনক্ষণ, সপ্তাহ, মাস বা বছরের পর বছর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। যখনই অপরাধ হবে তখনই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সমূহ ক্ষতি থেকে বাঁচতে হবে। ফিরে আসতে হবে আল্লাহর দিকে। আর সঙ্গে সঙ্গেই পড়তে হবে-
أتُوبُ إلى اللَّهِ ممَّا أذْنَبْتُ
উচ্চারণ : আতুবু ইলাল্লাহি মিম্মা আজনাবতু।
অর্থ : ‘(হে আল্লাহ!) আমি যে গোনাহ করেছি, তা থেকে আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
আল্লাহ তাআলা তাঁর সব বান্দাদের গুনাহমুক্ত জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস