ত্যাগ ও আনন্দের কুরবানির ঈদ আজ

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৫৯ এএম, ২১ জুলাই ২০২১

ঈদ মোবারক। ঈদুল আজহা ও কুরবানি আত্মত্যাগের অনন্য ইবাদত ও উৎসব। ১০ জিলহজ পবিত্র ঈদুল আজহা। এ দিনই শুরু হয় ত্যাগের সর্বোত্তম ইবাদত কুরবানি। যা অব্যাহত থাকে ৩ দিন। ঈদুল ফিতরের চেয়েও মর্যাদায় অনন্য কুরবানি ও ঈদুল আজহা।

কারণ এ দিন মুসলিম উম্মাহ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেই মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে পশু কুরবানি করবে। কুরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ পেয়ে ধন্য হবে। এ দিনের ঈদ উৎসব পালন ও কুরবানি করার বিষয়টি কুরআন-সুন্নায় নির্দেশিত।

যারা আল্লাহর জন্য পশু কুরবানি করবে, তাদের জন্য যেমন ঈদ; তেমনি যারা কুরবানি দিতে পারেনি তারা কুরবানির পশু গোশত পেয়েও আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠবে। সবার ঘরে ঘরে আনন্দ উৎসব বইবে। কুরবানি দাতা, পরিবারের লোক ও গরিব-অসহায় কুরবানি করা পশু গোশত আনন্দ চিত্তে আহার করবে। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ নির্দেশনা দেন এভাবে-

১. যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌঁছে আর নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে তাঁর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ করার সময়। অতঃপর তোমরা তা থেকে আহার কর এবং দুস্থ-অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।‘ (সুরা হজ : ২৮)

২. অতঃপর যখন তারা কাঁত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং আহার করাও যে কিছু চায় তাকে আর যে চায় না তাকেও।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৬)

ঈদুল আজহার দিন কুরবানি অপেক্ষা উত্তম কোনো ইবাদত নেই। হাদিসের বর্ণনাই এর অন্যতম প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঈদুল আজহার দিনে আল্লাহর কাছে কুরবানি অপেক্ষা অধিক পছন্দের কোনো আমল নেই।'

কুরবানির পশুর প্রতিটি পশমের পরিবর্তে ১টি করে নেকি কুরবানি দাতার আমলনামায় লেখা হয়। তাই কুরবানি করতে হবে মহান আল্লাহর জন্য। কেননা আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

'এগুলোর (কুরবানির পশুর) গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, কিন্তু পৌঁছে তাঁর কাছে তোমাদের মনের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর মহত্ত্ব ঘোষণা কর এ কারণে যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন।' (সুরা হজ : আয়াত ৩৭)

এ দিন কুরবানি দাতা নিজের কুরবানির পশু মহান আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করেন। অতপর এ পশুর গোশত নিজে আহার করেন, পাড়া-প্রতিবেশির মাঝে বিলিয়ে দেন, আত্মীয়-স্বজনে আহার করান, সমাজের সব গরিব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন। আর এতে সবার মাঝে নেমে আসে সীমাহীন অনাবিল সুখ ও শান্তি। এ জন্যই ত্যাগের এ ইবাদতও মুমিন মুসলমানের জন্য হয়েছে ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ।

মুমিন মুসলমানের আনন্দের জন্য দুই ঈদের ঘোষণা দেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ঈদের প্রচলনের সে ঘটনাও উঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন, তখন মদিনাবাসীদের মধ্যে (উৎসব উদযাপনে) বিশেষ দুটি দিন (প্রচলিত) ছিল। সেই দুই দিনে তারা খেলাধুলায় মেতে উঠতো।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, (তাদের আনন্দ-উৎসবের) এ দুইটি দিনের তাৎপর্য কী?

মদিনাবাসীরা জানালেন, (হে আল্লাহর রাসুল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা জাহেলি (অন্ধকার) যুগ থেকে এ দুই দিন খেলাধুলা (উৎসব) করে আসছি।

তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আল্লাহ তাআলা এ দুই দিনের পরিবর্তে এর চেয়েও উত্তম দু'টি দিন তোমাদেরকে দান করেছেন। আর সেই দিন দু’টি হলো-

- ঈদুল ফিতর ও

- ঈদুল আজহা।' (আবু দাউদ, নাসাঈ)

আজ ঐতিহাসিক ১০ জিলহজ। পবিত্র ঈদুল আজহা ও কুরবানির প্রথম দিন। যা ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য জাতীয় ও প্রধান উৎসব। বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহ ঈদ উদযাপন ও পশু কুরবানি করে থাকে। ১০ জিলহজ ঈদের নামাজ পড়ে আল্লাহর নামে পশু জবেহ করার মাধ্যমে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজে আনন্দ ছড়িয়ে জাতীয় সংস্কৃতিতে অবদান রাখেন মুমিন।

ঈদুল আজহা ও কুরবানি ইসলামি জীবন-দর্শণের সফলতার সম্মিলন। কারণ ঈদ উৎসবের মূলে রয়েছে আত্মার পরিশুদ্ধি এবং চরিত্রিক উন্নতির শুভ সংবাদ। আর এ উৎসবের মাধ্যমেই মানুষে মানুষে শুভ সংবাদ এবং ভালোবাসা পরস্পর ভাগাভাগি করে নেয়। পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়। একে অপরের জন্য এভাবে দোয়া করে-

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَ مِنْكُمْ

উচ্চারণ : ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।

অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার নেকা আমল তথা ভাল কাজগুলো কবুল করুন।’

কিংবা একে অপরকে জানায়- ঈদ মোবারক! পরস্পর একে অন্যকে উত্তম খাবার পরিবেশন ও মেহমানদারি করে থাকেন। মুসলিম উম্মাহর এ ঈদ উৎসবে বিরাজ করে জান্নাতি পরিবেশ।

তাই এ ঈদুল আজহা ও কুরবানির উৎসবে হিংসা-বিদ্বেষ, ভুলে গিয়ে ধনী-গরিব পরস্পর আজ এক কাতারে এক শামিয়ানার নিচে শামিল। ঈদের নামাজ পড়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য পশু কুরবানি করবে। আর ঘোষণা করবে-

'নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু; সবই বিশ্বজাহানের প্রভু মহান আল্লাহ তাআলার জন্য।' (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)

যা পালন করেছিলেন মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কুরবানি কবুল করেছিলেন। যা আজও পালন করে আসছেন মুসলিম উম্মাহ।

ঈদের নামাজ ও কুরবানির পরবর্তী সময়ে পরস্পরের সঙ্গে দেখা হলে করবে ভাববিনিময়। একে অপরকে জানাবে শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক। সবাই সবাকে আন্তরিকতা ও ভালোবাসা এভাবে দোয়া করবে-

تَقَبَّلَ اللهُ مِنَّا وَ مِنْكُمْ

উচ্চারণ : ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।

অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার নেকা আমল তথা ভাল কাজগুলো কবুল করুন।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর ঈদুল আজহা ও কুরবানিকে কবুল করুন। ঈদের দিনের আনন্দ ও কুরবানি যেন শুধু মহান রবের জন্য। আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।