যে ৪ কাজ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়
চারটি গোনাহের কাজ করা ব্যক্তি কখনও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে না। তাদের এ চারিত্রিক ত্রুটিগুলো দুনিয়া ও পরকালকে ধ্বংস করে দেয়। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ত্রুটিগুলো তুলে ধরেছেন। কী সেই সব ত্রুটি?
মানুষকে নিকৃষ্ট করে দেয় কিছু চারিত্রিক ত্রুটি। এগুলো মহান আল্লাহ তাআলার কাছেও অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। ফলে তারা মহান আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই ৪টি চারিত্রিক ত্রুটি সম্পর্কে উম্মতে মুহাম্মাদিকে সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ৪ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন না। (যারা)-
الْبَيَّاعُ الْحَلَّافُ، وَالْفَقِيرُ الْمُخْتَالُ، وَالشَّيْخُ الزَّانِي، وَالْإِمَامُ الْجَائِرُ
১. বিক্রিতে বেশি বেশি শপথ করে;
২. গরিব কিন্তু অহংকারী;
৩. বৃদ্ধ কিন্তু ব্যভিচারী এবং
৪. শাসক (জনপ্রতিনিধি) কিন্তু অত্যাচারী। (নাসাঈ)
অধিকহারে শপথ করে পণ্য বিক্রি
যেসব ব্যবসায়ী মিথ্যা গুণাগুণ বর্ণনায় শপথ করে পণ্য বিক্রি করে। তাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট নয়। বরং যারা সৎ ব্যবসায়ী, তাদের মহান আল্লাহ কেয়ামতের দিন সর্বোচ্চ স্থান দান করবেন। কিন্তু যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে অসৎ, তাদের জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন শাস্তি।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন লোকদের কেনাবেচায় জড়িত দেখে বলেন, হে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়! তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ডাকে সাড়া দিলেন এবং নিজেদের ঘাড় ও চোখ উঠিয়ে তাঁর দিকে তাকালেন। তিনি বললেন, কেয়ামতের দিন ব্যবসায়ীদের ফাসিক বা গোনাহগাররূপে ওঠানো হবে; কিন্তু যেসব ব্যবসায়ী আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে, নির্ভুলভাবে কাজ করে এবং সততা ধারণ করে, তারা এর ব্যতিক্রম।’ (তিরমিজি)
গরীব ব্যক্তির অহংকার
অহংকার পাপের মূল। আরবিতে একে উম্মুল আমরাজ তথা ‘সব রোগের জননী’ বলা হয়। আর দুনিয়ার প্রথম পাপই হলো অহংকার। অহংকার করেই শয়তান অভিশপ্ত হয়েছিল। নিজেকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ কারণেই ধনী-গরিব, ছোট-বড়, উঁচু-নীচ সবার জন্যই অহংকার করা মারাত্মক অপরাধ। আল্লাহ তাআলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না বলে কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
‘তোমাদের মাবুদ এক। সুতরাং যারা আখেরাতে বিশ্বাস রাখে না, তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। স্পষ্ট কথা হলো- তারা যা গোপনে করে, তা আল্লাহ জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে, তা-ও। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা নাহাল : আয়াত ২২-২৩)
বিশেষ করে গরিব মানুষের অহংকার বড়ই আশ্চর্যের কারণ। কেননা গরিব মানুষ এমনিতেই অভাব-অনটন ও অসহায় হওয়ার কারণে দুর্বল। তারপরও যদি তারা অহংকার করে বসে তবে তা মারাত্মক অপরাধ।
বার্ধক্যে ব্যভিচার
বৃদ্ধাবস্থায় ব্যভিচার জঘন্য অপরাধ। এ কথার অর্থ এই নয় যে, যৌবনকালে ব্যভিচার করা যাবে; ততে কোনো দোষ নেই। বরং ব্যভিচার সর্বাবস্থায়ই মারাত্মক অপরাধ। বার্ধক্যে ব্যভিচারের কথা বলার কারণ হলো- সাধারণত বৃদ্ধরা ব্যভিচারে লিপ্ত হয় পরকীয়ার জেরে। তা গড়ে ওঠে সাধারণত প্রতিবেশি ও পরিচিতজনদের সঙ্গে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি উল্লেখ করে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন তাঁর সাহাবাদের ব্যভিচার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। তাঁরা বলেন, হারাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তা হারাম করেছেন। তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তির ১০ জন নারীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া জঘন্য অপরাধ।’ (আদাবুল মুফরাদ)
শাসন কাজে (জনপ্রতিনিধির) অত্যাচার
অত্যাচারী শাসক আল্লাহর কাছে চরম ঘৃণিত। অত্যাচারকে মহান আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। অত্যাচার মানুষের ধ্বংস ডেকে আনে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে ফাটল সৃষ্টি করে। এ কারণেই গৃহকর্তা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান পর্যন্ত কারও জন্যই অত্যাচার হালাল নয়। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর কথা এভাবে বর্ণনা করেন- ‘হে আমার বান্দা! আমি নিজের ওপর জুলুম (অত্যাচার) হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের জন্যও তা হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অন্যের ওপর জুলুম কর না।’ (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, চরম ঘৃণিত এ চার কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখা। হাদিসের ওপর আমল করে আল্লাহ অসন্তুষ্টি ও ধ্বংস থেকে নিজেদের রক্ষা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের নির্দশনা অনুযায়ী এ ৪ শ্রেণির ব্যক্তি ও অপরাধ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমকেএইচ