ভুলে ইবাদত ছেড়ে দিলে বা অন্যায় করলে কি গোনাহ হবে?

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:২৪ পিএম, ১৬ জুন ২০২১

কোনো কিছু ভুলে যাওয়া মানবিক বৈশিষ্ট্য বা দুর্বলতার কারণ। কমবেশি তা সব মানুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে। কিন্তু কোনো মানুষ যদি কোনো ইবাদত বা অন্যায়ের কথা ভুলে যায় কিংবা ভুলে কোনো অন্যায় কাজ করে ফেললে কি গোনাহ হবে? সেক্ষেত্রে করণীয়ই বা কী?

ভুলে যাওয়া মানসিক রোগ। এটি ফাসেকি কাজ নয়। তাই কোনো মানুষ ভুলে যাওয়ার কারণে যদি কোনো গোনাহ করে ফেলে বা গোনাহ করার পর তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি ভুলে যায় আবার সময় মতো ইবাদত করার কথাও ভুলে যায় তবে মহান আল্লাহ তাআলা তাকে তার কৃত আমলের পরিণাম থেকে ক্ষমা করে দেবেন।

তবে ভুলে যাওয়া বিষয়গুলো স্মরণে আসার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে যথাযথ কাজ সম্পাদন করতে হবে। তা এমন-

> যদি কেউ নামাজ পড়তে ভুলে যায়; তবে মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে (নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ছাড়া) তা আদায় করে নিতে হবে।

> কেউ যদি ভুলে কোনো অন্যায়, হারাম বা পাপ কাজে নিয়োজিত থাকে। সঠিক কথা স্মরণে আসার সঙ্গে সঙ্গে অন্যায়, হারাম বা নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

> কেউ যদি কোনো গোনাহ বা অন্যায় করার পর তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার আগেই ভুলে যায়; তবে স্মরণ আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

যদি কেউ স্মরণ আসার পর তা সম্পাদন না করে বা ক্ষমা প্রার্থনা না করে তবে তাকে অবশ্যই গোনাহগার হতে হবে। তবে উল্লেখিত ক্ষেত্রে এসব কাজ একেবারে ভুলে যাওয়ার কারণে সংঘটিত গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন মর্মে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা মানুষের ভুলে যাওয়ার কারণে সংঘটিত অন্যায়ের গোনাহ বান্দার আমলনামায় লেখেন না। সুতরাং ভুলে যাওয়ার কারণে ওই ব্যক্তি ফাসিক (পাপী) বলেও গণ্য হবে না। হাদিসে এসেছে-

১. হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

إنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ لِي عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأَ وَالنِّسْيَانَ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْهِ

‘আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি ও ভুল ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং তার সে কাজ যা সে করতে সে বাধ্য হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)

অর্থাৎ কেউ যদি ভুল বশত কিংবা স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে কখনো কোনও অন্যায় করে ফেলে তাহলে তার স্মৃতি বিব্রাটকালীন সময়ের কোনো গোনাহ লেখা হবে না। তবে সে গোনাহ যদি চলতে থাকে; আর এ গোনাহের কাজের কথা কথা স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হারাম থেকে বিরত থাকতে হবে কিংবা ছুটে যাওয়া আমলটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

২. হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে গেছে অথবা নামাজ না পড়েই ঘুমিয়ে পড়েছে। (তার করণীয় কী?) তিনি বললেন- ‏ يُصَلِّيهَا إِذَا ذَكَرَهَا

যখনই তার (নামাজের কথা) স্মরণে আসবে, তখনই সে ওই নামাজ পড়ে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৩. ভুলে কোনো অন্যায় হলে গেলে যে গোনাহ হয় না; এ হাদিসটিও একটি প্রমাণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

 مَنْ أَكَلَ نَاسِيًا وَهُوَ صَائِمٌ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ

‘যে রোজাদার ব্যক্তি ভুলবশতঃ কিছু খায় সে যেন তার রোজা পূর্ণ করে (দিনের বাকি অংশ রোজা অব্যাহত রাখে)। কেননা আল্লাহ তাকে (ভুলে) পানাহার করিয়েছেন।’ (বুখারি)

সুতরাং ইচ্ছাকৃত না হয়ে শুধু ভুলের কারণে কোনো গোনাহ হয়ে গেলে কিংবা ভুলে নামাজ বা রোজার খেলাফ হলে তাতে গোনাহ হবে না। তবে ভুলে থাকা অবস্থায় অন্যায় হচ্ছে বলে মনে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে ফিরে থাকা আবশ্যক। অন্যথায় গোনাহগার হতে হবে। যেমন-

ভুলে বা ঘুমে নামাজ পড়তে না পারলে সজাগ হওয়ার পর নামাজের কথা স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদায় করে নিতে হবে। অন্যথায় গোনাহ হবে। আবার রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ খাবার খেয়ে ফেলে তবে স্মরণ হয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর তা ইফতারের সময় পর্যন্ত। এ ভুলের কারণে সংঘটিত অন্যায় বা অপরাধে কোনো গোনাহ হবে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ভুলে গোনাহ হওয়ার কিংবা ইবাদত-বন্দেগির কথা ভুলে যাওয়া থেকে হেফাজত করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। অযথা ভুলে গোনাহ হয়ে গেছে ভেবে দুঃশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।