ফিলিস্তিন কবে আবার মুসলিমদের কাছে ফিরে আসবে?
মুসলিম ভূখণ্ড ফিলিস্তিন। অসংখ্য নবি-রাসুলের পদচারণায় মুখরিত ছিল এ জনপদ। সর্বশেষ নবি ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ফিলিস্তিনের মসজিদ আকাসায় এসেছেন, নামাজ পড়েছেন। কুরআনের বর্ণনায় তা সুস্পষ্ট। ফিলিস্তিন সাধারণ কোনো নগরী নয় বরং কুরআনের ঘোষণায় বরকতময় পুণ্যভূমিও ফিলিস্তিন।
বিশাল এ মুসলিম ভূখণ্ড ফিলিস্তিনের ১৯১৭-২০২০ সালের মানচিত্র যে কাউকে হতবাক করে দেবে। কেননা দখলদার ইসরায়েল ইয়াহুদি গোষ্ঠী প্রায় পুরো ফিলিস্তিনই দখল করে নিয়েছে। সে কারণেই মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে বার বার একটি প্রশ্ন আসছে- ‘এ ফিলিস্তিন আবার কবে মুসলিমদের কাছে ফিরে আসবে?’
ফেসবুক থেকে নেওয়া গত ১৪ তারিখের এ লেখাটি হতে পারে অনেকের জন্য পথ ও পাথেয়। সঠিক পথ নির্দেশনা। আল্লাহর দিকে ফিরে আসার অনন্য মাধ্যম। আর মজলুম জনপদ ফিলিস্তিনের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য পাওয়ার দোয়া।
ফিলিস্তিন আক্রমণের প্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় কি?
ইয়াহুদিদের আক্রমনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ১০৯ জন মুসলমান মারা গেছে, যার অন্তত ২৮ জন শিশু। এছাড়া প্রায় ৬০০’র বেশি মানুষ আহত হয়েছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ইয়াহুদিদের প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহুর ক্ষমতায় থাকার রাজনীতির অংশ হিসেবে; হামাসের পাথর নিক্ষেপের পাল্টা জবাব হিসেবে; (কিংবা) যেই কারণেই ইয়াহুদিরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করুক না কেন, এর মূল দায়ভার ইয়াহুদি এবং তাদের প্রশ্রয়দাতা ইউরোপ ও আমেরিকার। কেননা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের সাথে ইয়াহুদিদের শত্রুতার মূল কারণ হচ্ছে- ‘ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে ইয়াহুদিদের বসতি নির্মাণ করা।’
(ফিলিস্তিনের জন্য) আমরা দোয়া করি
‘মহান আল্লাহ ফিলিস্তিন এবং বায়তুল আক্বসাকে নিরাপদ করুন এবং ইয়াহুদী এবং খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ করুন। আমিন। ইয়া রব!
(কিন্তু) ফিলিস্তিন কবে আমাদের কাছে ফিরে আসবে?
মিশরীয় প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, শায়খ সাঈদ রাসলান হাফিজাহুল্লাহ বলেন-
‘পৃথিবীর যে কোনো স্থানে কোনো মুসলমান যদি এই প্রশ্ন করে যে- ‘ফিলিস্থিন কবে আমাদের কাছে ফিরে আসবে?’
(তাহলে) এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে- ‘আপনি যদি আল্লাহর কাছে ফিরে আসেন; তাহলে ফিলিস্থিনও আপনার কাছে ফিরে আসবে।’ (তথ্য : ‘ফিলিস্থিন কবে আমাদের কাছে ফিরে আসবে’ : পৃষ্ঠা ৭-৮)
শায়খ সাঈদ রাসলান হাফিজাহুল্লাহ’র বক্তব্যের ব্যাখ্যা
অনেকে শায়খের এই কথা বুঝতে না পারলে, কুরআনের একটা আয়াত ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসগুলোর অর্থ বুঝার চেষ্টা করুন। (তাতেই উত্তর পেয়ে যাবেন)- মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও নেক কাজ করে, আল্লাহ তাদের সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসন কর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসন কর্তৃত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্বে যারা ঈমানদার ছিল তাদেররকে আর তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে। যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরিক করবে না।’ (সুরা আন-নূর : আয়াত ৫৫)
সুতরাং কুরআনের এ আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে মুসলমানদেরকে (প্রথমে) ঈমান আনার পরে নেক আমল করতে হবে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ-ই হচ্ছে বেনামাজি, সেখানে মুসলমানরা যে আসলেই কতটুকু মুসলমান, সেটাই প্রশ্নসাপেক্ষ একটি ব্যপার।
> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে (ব্যবসা নাম দিয়ে কৌশলে সুদ খাওয়ার একটা পদ্ধতি) কেনা-বেচা করবে, গরুর লেজ আকড়ে থাকবে (অর্থাৎ পশু পালনে বেশি মনোযোগী হয়ে যাবে), কৃষিকাজ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমানের বোঝা চাপিয়ে দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের ‘দ্বীনে’ প্রত্যাবর্তন করবে (ফিরে না আসবে), ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে সেই অপমান উঠিয়ে নেওয়া হবে না।’ হাদিসটি সহিহ, সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহীহাহ : ১১)
সুতরাং, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, বর্তমানে মুসলমানদের এই দুরবস্থা ও অপমানজনক অবস্থা থেকে বের হতে হলে তাদেরকে (অবশ্যই সঠিক) ‘দ্বীনে’ ফিরে আসতে হবে। প্রত্যেকটা মুসলমানকে নিজেকে বিচার করতে হবে। নিজের পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে, তাওবাহ করে, সংশোধন হয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য দোয়া করতে হবে, এবং সেই লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে যেতে হবে।
মুসলমানেরা যদি সঠিক ঈমান-আক্বীদাহ নিয়ে, নেক আমল করে, আল্লাহর প্রতি আনুগত হয়, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা মুসলমানদেরকে পূর্বে যেই রকম সাহায্য ও বিজয় দান করেছিলেন, আমাদেরকেও (এখনও) তিনি অনুরূপ সাহায্য ও বিজয় দান করবেন। ইনশ আল্লাহ।
কুরআন-সুন্নাহর বাস্তবায়নেই মুসলিম উম্মাহ ফিরে পাবে মজলুম জনপদ, অসংখ্য নবি-রাসুলের স্মৃতি বিজড়িত নগরী জেরুজালেম, পূণ্যভূমি ও দেশ (শামদেশ) ফিলিস্তিন এবং বায়তুল মুকাদ্দাস।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। স্বাধীন ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাসকে মুসলিমদের কাছে ফিরিয়ে দিন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম