উচ্চারণসহ সুরা কাহফের আমল ও বৈশিষ্ট্য

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৭:৩৮ পিএম, ০৪ মার্চ ২০২১

সুরা কাহফ। কুরআনুল কারিমের ১৮ নম্বর সুরা এটি। মক্কায় অবতীর্ণ হওয়া ১১০ আয়াত বিশিষ্ট সুরাটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এটি সাপ্তাহিক আমলের সুরা। সপ্তাহের প্রত্যেক বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত পড়ার দিকনির্দেশনা এসেছে হাদিসে। সাধারণত জুমআর দিনের বিশেষ আমলি সুরা হিসেবে এটি পরিচিত। এ সুরার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

> হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, পুর্ণাঙ্গ এ সুরাটি একসঙ্গে নাজিল হয়েছে এবং এর সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেস্তা দুনিয়াতে আগমন করেছেন।

> হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে অপর জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।’

> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুআর দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, কেয়মাতের দিন তার পায়ের নিচ থেকে আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত নূরে পরিণত হবে। আর দুই জুমআর মধ্যবর্তী গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)

> হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সব ধরনের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি (এ সময়) দাজ্জাল বের হয়; তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।’

> হজরত সাহল ইবনে মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলো পাঠ করে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায়। আর যে পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করে তার জন্য জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ)

> অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক জুমআ থেকে অপর জুমআ পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গোনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরাম একমত যে, কবিরা গোনাহ তওবাহ ছাড়া মাফ হবে না।

> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর রাতে সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)

> হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। অন্য রেওয়ায়েতে তিনি বলেন, শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারেও উল্লেখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, সুরা কাহফ তেলাওয়াতের এ আমল জুমআর দিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর তা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমআর দিন সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের অন্তর্ভূক্ত সপ্তাহিক আমল।

সপ্তাহিক এ আমলটি তাৎপর্যপূর্ণ। এ সুরার আমলকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাকিনা বা প্রশান্তি বলা হয়ে থাকে। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত-

হজরত বারা ইবনে আজেব বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি সুরা কাহফ তেলাওয়াত করছিল। সে সময় একখণ্ড মেঘমালা তাকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। ওই ব্যক্তি বিষয়টি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বর্ণনা করেন। বিশ্বনবি তাকে বললেন, ওহে... তুমি সুরাটি পড়তে থাক। কারণ এটি ছিল আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি। যা কুরআন তেলাওয়াতের কারণে বা কুরআন তেলাওয়াতের জন্য নাজিল হয়েছিল।’ (মুসলিম) আর এটিই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাকিনা বা প্রশান্তি।

শুধু তা-ই নয়, সুরা কাহফের অন্যতম একটি ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য হলো-‘দাজ্জালের ফেতনা থেকে মুক্তি।’ হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-

‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, কেয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নূর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দেবে। আর যে ব্যক্তি এ সুরার শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে, তার জীবদ্দশায় দাজ্জাল বের হলেও তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সিলসিলা সহিহা)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সাপ্তাহিক নিয়মিত ইবাদত সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। যা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমআর দিন সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত করা যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা কাহাফ বেশি বেশি তেলাওয়াত এবং এর মর্মার্থ বুঝে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ ও ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।