নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তায় বিশ্বনবির দিকনির্দেশনা ও আমল

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

নিত্যদিনের ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনায় চরম আতঙ্কগ্রস্ত মানুষ। কাছের কিংবা দূরের কোনো সফরের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলেই মানুষের সামনে এক চরম আতঙ্ক হিসেবে আভির্ভূত হচ্ছে ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ নামক মহামারি।

মনে হয় যেন, বেপরোয়া ও দায়িত্ব জ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডের জন্য সড়ক দুর্ঘটনায় না জানি প্রাণটাই চলে যায়। যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ কিংবা রাস্তা পারাপারের সময় কোনো ভারি যানবাহন চাপা দিয়ে যায়। অথচ এসব অবস্থা থেকে নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তাসহ রাস্তার হক বা অধিকার সম্পর্কে বিশেষ করণীয় ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

সড়কে বা রাস্তায় বেপরোয়া চলাচলের কারণে যে জীবনহানি কিংবা অঙ্গহানির মুখোমুখি হচ্ছে মানুষ। এ বেপরোয়া চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপদ থাকার বা বাঁচার উপায় কী? নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তায় বিশ্বনবির দেয়া দিকনির্দেশনাগুলোই বা কী?

লক্ষণীয় বিষয় হলো, সড়ক দুর্ঘটনা বা কোনো কারণে হঠাৎ মৃত্যু তথা জীবনহানি বা অঙ্গহানি কেউই কামনা বা প্রত্যাশা করে না। এ থেকে বাঁচতে নিরাপদ সড়কের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগশ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক বেশ কয়েকটি দিকনির্দেশনা ও সুস্পষ্ট করণীয় রয়েছে। এ সব দিকনির্দেশনা ও ৪ করণীয় মেনে চলার মাধ্যমেই নিরাপদ জীবনযাপন ও সফর নিশ্চিত করা সম্ভব। তাহলো-

> প্রথম পদক্ষেপ : রাস্তার হক আদায় করা
নিরাপদ থাকতে প্রথম করণীয় হলো- সড়কে চলাচলের সময় রাস্তার হক আদায় করে চলা। যদি কেউ রাস্তার হকগুলো যথাযথ আদায় করে চলে, তবে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে রাস্তার যাবতীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। রাস্তার হক আদায় করে চলাচলকারী ব্যাক্তি অন্য ব্যক্তির তুলনায় বেশি নিরাপদ থাকবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাস্তার ৫টি হকের কথা ঘোষণা করেছেন। রাস্তার হকগুলো হলো-

- চোখকে সংযত রাখা
রাস্তায় বের হলে দৃষ্টিকে নিচু রাখা। অর্থাৎ রাস্তায় কোনো নারীকে দেখলে বা হারাম কোনো দৃশ্য দেখলে সে দিকে না তাকিয়ে নিজের চোখকে নিচে নামিয়ে দৃষ্টি বা নজরের হেফাজত করা।

- রাস্তাকে চলাচলের উপযোগী করা
চলাচলের সময় রাস্তায় কষ্টদায়ক কোনো জিনিস থাকলে তা সরিয়ে দেয়া। চলাচলের জন্য রাস্তাকে নিরাপদ করা বা চলাচলের উপযোগী করা। যাকে কেউ কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা আহত বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

যদি কেউ চলাচলের রাস্তা দখল করে থাকে তবে তা থেকে রাস্তাকে চলাচলের উপযোগী করে তোলা ঈমানের অন্যতম অঙ্গ। হোক তা ফুটপাত পরিস্কার করে কিংবা কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দিয়ে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যদি কেউ এ কাজটি করে তবে তাতে সাদকার সাওয়াব পাওয়া যায়।’

- সালাম ও উত্তর বিনিময়
রাস্তায় চলাচলের সময় অন্যতম হক হলো- একে অপরকে সালাম দেয়া এবং সালামের উত্তর দেয়া। অনেক সময় কেউ কাউকে সালাম দিলে দেখা যায়, উচ্চ স্বরে সালামের উত্তর দেয় না। এমনকি সালামের উত্তর দিল কি না দিল তা বুঝাও যায় না। আবার অনেকে পরিচিত মানুষের সালামের উত্তর দেয়। অথচ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ঘোষণা- ‘পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া (সালামের উত্তর দেয়া)।’

তাই রাস্তায় চলাচলের সময় কেউ কাউকে দেখলে সালাম দেয়া। সালাম না দেয়ার অর্থই হলো রাস্তার হক আদায় করা হলো না।

- সৎ কাজের আদেশ দেয়া
রাস্তার অন্যতম হক হলো- রাস্তায় চলাচলের সময় যতটুকু সুযোগ হয় সৎ কাজের আদেশ দেয়া। আর তাতে রাস্তার হক আদায় হয়।

- অন্যায়ের নিষেধ করা
রাস্তার অন্যতম শেষ হকটি হলো- চলাচলের সময় রাস্তায় কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখলে তা থেকে বিরত থাকা বা অন্যকে বিরত রাখা।

সুতরাং চলাচলের সময় রাস্তার হক আদায় করার মানেই হলে নিজেকে নিরাপদে রাখার প্রথম পদক্ষেপ।

> দ্বিতীয় পদক্ষেপ : দোয়া করা
রাস্তায় নিরাপদ থাকার দ্বিতীয় পদক্ষেপ বা করণীয় হলো- আল্লাহ তাআলার কাছে বিশেষ একটি দোয়া করা। এ দোয়া রাস্তায় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য করতে বলা হয়নি। বরং এটি সবক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার দোয়া। এ দোয়ার অর্থ থেকেই তা অনুমেয় যে, এর মাধ্যমে হঠাৎ সব দুর্ঘটনা থেকে আল্লাহ তাআলা মানুষকে নিরাপদ রাখবেন।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন জাওয়ালি নিমাতিকা; ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা; ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা; ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার যে নেয়ামত ভোগ করছি; এটা ছুটে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি যে সুস্থ-স্বাভাবিক আছি; এটা হঠাৎ যেন পরিবর্তন হয়ে না যায়। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া আপনার কোনো আজাব বা শাস্তি আমাকে যেন পেয়ে না বসে। আর আপনার অসন্তুষ্টির সব মাধ্যম থেকে আশ্রয় চাই।’

নিয়মিত এ দোয়া পড়লে আল্লাহ তাআলা হঠাৎ যে কোনো বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন। তা হোক সড়কে কিংবা ঘরে।

> তৃতীয় পদক্ষেপ : সকাল-সন্ধ্যার আমল
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকাল ও সন্ধ্যার বেশ কিছু দোয়া উম্মতে মুহাম্মাদিকে দান করেছেন; যা পড়লে ওই দোয়ার ফজিলতে মহান আল্লাহ বান্দাকে হঠাৎ যে কোনো দুর্ঘটনা থেকে হেফাজত করবেন। অর্থাৎ সকালে পড়লে সারাদিন নিরাপদ। আবার সন্ধ্যা পড়লে সারা রাত নিরাপদ। এসবের মধ্যে-
- প্রথম আমল : সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস; এগুলো সকাল-বিকাল ৩ বার করে পড়া। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা যাবতীয় অনিষ্টতা ও ক্ষতি থেকে হেফাজত করবেন। এটি সহ আমল

- দ্বিতীয় আমল : হজরত উসমান ইবনে আফ্‌ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে না-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’

- তৃতীয় আমল : সুরা তাওবার শেষ আয়াত সকাল-সন্ধ্যায় ৭ বার পড়া। এটি অত্যন্ত শক্তিশালি একটি দোয়া ও প্রার্থনা। যে এটি পড়বে আল্লাহ যাবতীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন। তাহলো-
حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ : ‘হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।’
অর্থ : ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কারো বন্দেগী নেই। আমি তাঁরই ভরসা করি এবং তিনিই মহান আরশের অধিপতি।’ (সুরা তাওবা : ১২৯)

যে কোনো বিপদ ও দুর্ঘটনায় এটি একটি কার্যকরী দোয়া। হজরত ইবরাহিম আলাহিস সালাম, হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামগণ পড়েছেন; বিপদমুক্ত হয়েছেন।

- চতুর্থ পদক্ষেপ : ফজর নামাজ আদায় করা
ফজরের নামাজ আদায় করা। অবশ্যই জামাআতের সঙ্গে আদায়ের চেষ্টা করা। জামাআত না পেলে অলসতা না করে নিজে নিজে তা সময় মতো আদায় করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে অনেক হাদিসে ঘোষণা করেছেন-
‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে বা সকালের নামাজ আদায় করবে, ওই ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মায় চয়ে যায়।’
ফজরের নামাজ পড়ার অর্থই হলো ওই ব্যক্তি পরের দিন ফজর পর্যন্ত মহান আল্লাহর জিম্মায় চলে যাবেন। (সুবহানাল্লাহ) সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনা বা কোনো কাজে মানুষের ক্ষতি হবে এটা হতে পারে না।

 মুমিন মুসলমানের উচিত, সড়কে নিরাপদ ও সুস্থ কুরআন সুন্নায় ঘোষিত দিকনির্দেশনাগুলো যথাযথ আদায় করা। এ কথা নিশ্চিত যে, এ বিষয়গুলো আদায় করলে কোনোভাবেই রাস্তায় দুর্ঘটনায় জীবন বা অঙ্গহানি হতে পারে না।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিরাপদ জীবন লাভ ও হঠাৎ দুর্ঘটনায় জীবন ও অঙ্গহানি থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।