‘এক টাকা’ দেনমোহর কি ইসলামে বৈধ?
দেনমোহর বিয়ের অন্যতম শর্ত। স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক একটি কর্তব্য। বিয়ের বন্ধন উপলক্ষ্যে স্বামী তার স্ত্রীকে বাধ্যতামূলক যে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা কিংবা স্থাবর সম্পদ দিয়ে থাকেন, তাই দেনমোহর। কিন্তু ‘এক টাকা বা নামমাত্র অংকে’ দেনমোহর দেয়া কি বৈধ? সর্বনিম্ন দেনমোহর কত হতে হবে? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?
দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার। স্বামীর জন্য ফরজ বিষয়। মোহর নিয়ে সামাজিক চরম শৈথিল্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে এমন অনেকে আছেন, যারা নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত সম্পর্কে ধারণা রাখলেও মোহরের বিষয়টি নিয়ে সচেতন নন। সে কারণে দেখা যায়, মোহরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে চরম ছাড়াছাড়ি পরিলক্ষিত হয়।
বিয়েকে স্মরণীয় রাখতে কিংবা উদারতা দেখাতে গিয়ে অনেকেই ১ টাকা দেনমোহর বা নামমাত্র অংকে দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করার কৃতিত্ব দেখিয়ে থাকেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কেননা মহান আল্লাহ তাআলা পুরুষদের সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছন। আবার হাদিসে পাকে সর্বনিম্ন মোহর কত হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদের মোহর দাও।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪)
মোহর কি?
মোহর মূলত একটি সম্মানি। যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকে। যার মূল উদ্দেশ্যই হল নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেয়া। এটা নারীর মূল্য নয় যে, তা পরিশোধ করলেই মনে করা যাবে যে, নারী নিজেকে স্বামীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।
ইসলামি শরিয়তের উদ্দেশ্য হল- যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দেবে, যা তাকে সম্মানিত করে।
তবে ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হচ্ছে- মোহর এত অল্প নির্ধারণ না করা, যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত না থাকে। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে সম্ভব না হয়।
দেনমোহর ১ টাকা!
সম্প্রতি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে দেখা যায়, এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে সম্পন্ন কিংবা নামমাত্র অংকের দেনমোহরে বিয়ে করেছে যুবক-যুবতী ইত্যাদি। অথচ হাদিসে পাকে দেনমোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে। সর্বনিম্ন দেনমোহর হলো ১০ দিরহাম বা ৩০.৬১৮ রূপার সমপরিমাণ মূল্য। হাদিসে এসেছে-
‘১০ (দশ) দিরহামের কম মোহর হতে পারে না।’ (বায়হাকি)
অনেক ইসলামিক স্কলারের মতে, যদি ১০ দিরহামের কমে কোনো নারী দেনমোহর নির্ধারণে রাজি হয় তবে এ দেনমোহর ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ হবে না।
দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ
তবে দেনমোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। ১০ দিরহামের ওপরে যে কোনো পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ করায় কোনো বাধা নেই। স্বামীকে যেহেতু বাধ্যতামূলক দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে তাই তার সামর্থ্য বিবেচনা করে দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত। নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে স্বামীর সামর্থ্যের বাইরে দেনমোহর চাপিয়ে দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কেননা দেনমোহর পরিশোধ করতে না পারলে স্বামী গোনাহগার হবে।
মোহরে ফাতেমি
সমাজে প্রচলিত দেনমোহর হলো- ‘মোহরে ফাতেমি’। মোহরে ফাতেমিই উত্তম দেনমোহর। হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার মোহর ছিল ৫০০ দিরহাম বা ১৫৩০.৯০ গ্রাম রূপা।’ (জাওয়াহিরুল ফাতোয়া)
মোহর কত হওয়া উচিত
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে নারীর প্রকৃত অধিকার হলো- ‘মোহরে মিছাল’। তাহলো- ওই নারীর বংশে তার মতো অন্যান্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা তার মোহরে মিছাল। যদি তার নিজের বংশে তার মতো আর কোনো নারী না থাকে, তবে অন্য বংশে তার সমপর্যায়ের নারীদের যে মোহর সাধারণত নির্ধারণ করা হয়; সেটাই তার মোহরে মিছল। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে স্ত্রী মূলত মোহরে মিছালেরই হকদার।
সুতরাং মোহর নিয়ে বাড়াবাড়ি যেমন ঠিক নয়, তেমনি ছাড়াছাড়িও ঠিক নয়। নারীকে তার যথাযথ সম্মান দেখানোর মাধ্যমে প্রাপ্য অধিকার ও সম্মানজনক মোহর দিয়ে বিয়ে করাই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারণ ও তা পরিশোধ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস