গোলাম সারোয়ার সাঈদীর ইন্তেকাল
অডিও শুনুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার আড়াইবাড়ি আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ, পীরসাহেব গোলাম সারোয়ার সাঈদী (৫২) ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মরহুমের ভাতিজা আড়াইবাড়ি দরবার কুমিল্লার পীর গোলাম পরোয়ার সাঈদী তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ভোররাত ৪টা ২০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আজ (শনিবার) বাদ আসর কসবার আড়াইবাড়ি মূল দরবার শরিফে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বেশকিছু দিন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে (অ্যাপোলো) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন তিনি।
মাওলানা গোলাম সারোয়ার সাঈদী ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দীন, তিনি সুবক্তা ও ওয়ায়েজ ছিলেন। গত কয়েক বছরে ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপর তার আলোচনা ইউটিউবে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
কর্মজীবনে আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী ওয়াজ-মাহফিলসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা আবু সাঈদ আছগর আহমাদ আল-কাদেরী ১৯৩৭ সালে আড়াইবাড়ি দরবার শরিফে মানুষের দ্বীনী ও নৈতিক শিক্ষার জন্য মাদরাসা ও পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দরবারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে মাদ্রাসাসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলেন। তাহলো-
- এ মাদ্রাসাটিকে তিনি ২০০৪ সালে সর্বোচ্চ কামিল মানে উন্নীত করেন।
- আড়াইবাড়ি ইসলামিয়া ছায়েদীয়া ইয়াতিমখানা;
- লিল্লাহ বোর্ডিং;
- আড়াইবাড়ি হাক্কানীয়া হাফেজি মাদরাসা;
- আড়াইবাড়ি সাইয়েদা সুরাইয়া নূরানী মাদরাসা ও
- ইসলামী বুক ক্লাব।
আল্লামা গোলাম সারোয়ার সাঈদী কর্তৃক পরিচালিত আড়াইবাড়ি ইসলামিয়া সাঈদীয়া কামিল মাদরাসাটি এলাকায় শিক্ষা বিস্তার, অনৈসলামিক কার্যকলাপ রোধসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
তাঁর দক্ষ পরিচালনায় মাদ্রাসাটি ২০০৪ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করে। ফলে বাংলাদেরশর তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ কর্তৃক ক্রেস্ট ও সনদপত্র লাভ করে।
মানুষের নৈতিক মান উন্নয়নে আল্লামা গোলাম সারওয়ার সাঈদী তার বাবা ও দাদার রেখে যাওয়া কার্যক্রম দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, অর্ধবার্ষিকী ও বাৎসরিক সব দাওয়াতি কার্যক্রম সুনিপুনভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন। তার দক্ষ পরিচালনা থেকে বাদ যায়নি আধুনিক বিজ্ঞান, কম্পিউটার ল্যাব এবং তথ্যপ্রযুক্তির সুশিক্ষা।
আল্লামা গোলাম সারওয়ার সাঈদী নিজেও তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ওয়াজ-নসিহতে ব্যাপকভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত কম্পিউটার ও বিজ্ঞান মেলায় অংশ গ্রহণ, সাহিত্য সাময়িকী ও দেয়ালিকা প্রকাশ, ডিবেডিং ক্লাশ, লাইব্রেরী ওয়ার্ক, পত্র-পত্রিকা পাঠ, ইসলামি সাহিত্য ও গল্প-কবিতার পুস্তক অধ্যয়ন, কুইজ প্রতিযোগিতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা গড়ে তুলতে ব্যাপক ব্যবস্থা রেখেছিলেন।
আল্লামা গোলাম সারওয়ার সাঈদী ৫ ভাই ও চার বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তিনি আড়াইবাড়ি দরবারের বর্তমান দায়িত্বশীল এবং আড়াইবাড়ি কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী আল্লামা গোলাম সাওয়ার সাঈদী মৃত্যুকালে স্ত্রী ও ৪ ছেলেসহ দেশ-বিদেশে অসংখ্য ছাত্র, গুনগ্রাহী ভক্ত-আশেকান রেখে মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছেন ওপারের সুন্দর ভুবনে।
আল্লাহ তাআলা আল্লামা গোলাম সারওয়ার সাঈদীকে জান্নাতের সুমহান মাকাম দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এসএইচএস/এমএস