মুহাম্মাদকে (সা.) অবমাননাকারী ‘ওতাইবা’র করুণ পরিণতি

ধর্ম ডেস্ক
ধর্ম ডেস্ক ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:৪৮ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২০

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দুশমনি করে অনেকেই ক্ষমা পেয়েছেন কিন্তু তাকে অবমাননা বা অপমান করার ফলে যারা বদ দোয়ার শিকার হয়েছেন, তাদের অনিবার্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলো ওতাইবা। কে এই ওতাইবা?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচা ছিল আবু লাহাব। তার দুই ছেলের মধ্যে একজন ছিল ওতাইবা। ওতাইবা ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক মেয়ে উম্ম কুলসুমের জামাতা। ইসলামের দাওয়াতের কারণে আবু লাহাবের নির্দেশে ‘ওতাইবা’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেয়ে উম্মে কুলসুমকে তালাক দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অপমান ও অবমাননা করে। ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বদদোয়া করেন।

রাসুলুল্লাহর বদদোয়া

আবু লাহাবের পুত্র ওতাইবা একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল-

‘ওয়ান নাজমে ইযা হাওয়া এবং ছুম্মা দানা ফাতাদাল্লার’ (কুরআনের আয়াতের) সঙ্গে আমি কুফরি করছি। সুরা নাজমের এ দুটি আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘শপথ নক্ষত্রের, যখন তা অস্তমিত হয়। অতপর সে তার কাছাকাছি হলো অতি নিকটে।’

তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর কুখ্যাত ওতাইবা অত্যাচার শুরু করে দেয়। তাঁর জামা ধরে টেনে তা ছিঁড়ে ফেলে এবং তাঁর পবিত্র চেহারায় থুথু নিক্ষেপ করে। কিন্তু ওতাইবার থুথু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারায় পড়েনি।

সেই সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য বদদোয়া করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই বদদোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করে নেন। বিশ্বনবির বদদোয়া হলো-

হে আল্লাহ! ওর (ওতাইবা) ওপর তোমার কুকুরসমূহের মধ্যে থেকে একটি কুকুর লেলিয়ে দাও।’

ওতাইবা যেভাবে ধ্বংস হয়

একবার কুরাইশ বংশের কয়েকজন লোকের সঙ্গে এক সফরে ওতাইবা সিরিয়া যাচ্ছিল। ‘যারকা’ নামক স্থানে তারা রাত যাপনের জন্য তাঁবু স্থাপন করে। সে সময় একটি বাঘ তাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করতে থাকে। বাঘের ঘোরাফেরা দেখে ওতাইবা নিজের ধ্বংসের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়ার কথা তার স্মরণ হয়ে গেল।

ওতাইবা বলল, ‘আল্লাহর শপথ! এই বাঘ আমাকে খাবে; হায়রে, আমার ধ্বংস অনিবার্য। হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বদদোয়া করেছিল। সে আরও বলছিল, দেখ! আমি সিরিয়ায় অবস্থান করছি। অথচ মক্কায় বসেই আমাকে মেরে ফেলছেন।

ওতাইবাকে বাঁচানো ব্যর্থ চেষ্টা

কুরাইশদের অবিশ্বাসীরাও জানত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বদদোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই ‘যারকা’ নামক স্থানে অবস্থানকারী অন্য সব সফরসঙ্গী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। সতর্কতা হিসেবে তারা নিজেদের মালামাল ও জিনিসপত্র দিয়ে উঁচু একটি ঢিবি বানিয়ে নেয়। ওতাইবাকে তারা সেই মালামাল ও জিনিসপত্রের ঢিবির ওপর থাকার ব্যবস্থা করে। নিজেরা সেই ঢিবির চারপাশে শুয়ে পড়ে।

ওতাইবার সফরসঙ্গীদের সব সতর্কতাই বিফলে যায়। এতসব সতর্কতার পরও রাতে যথাসময়ে বাঘ এসে উপস্থিত হয়। সবাইকে অতিক্রম করে বাঘ মালামাল ও জিনিসপত্রের ঢিবির ওপর অবস্থানকারী ওতাইবার কাছে চলে যায়। তার ঘাড় মটকিয়ে তাকে মেরে ফেলে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবমাননা ও অপমানকারী ওতাইবা বদদোয়ার করুণ পরিণতির শিকার হয়ে মারা যায়। (আর রাহিকুল মাখতুম)

ইসলামের নবির দুশমনি, অপমান ও অবমাননা করে কেউ রক্ষা পায়নি। ফ্রান্সের ক্ষমতাধর প্রেসিডেন্ট অ্যামানুয়েল ম্যাক্রো ক্ষমা পাবে না। শুধু ম্যাক্রোই নয়, যারাই বিশ্বনবিকে অপমান বা অবমাননা করবে, দুনিয়া কিংবা পরকালে এর পরিণতি তাকে ভোগ করতেই হবে।

সুতরাং ইসলামের বিরোধিতা কিংবা ইসলাম নিয়ে যে যাই বলুক না কেন, ইসলামের নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যাপারে অপমানকর, অবমাননা কিংবা ব্যঙ্গচিত্র ছাপানোর মতো ধৃষ্টতা মহান আল্লাহ সহ্য করবেন না। যেমনিভাবে যুগে যুগে অবিশ্বাসী ও অত্যাচারীরা এর পরিণতি ভোগ করেছে।

আল্লাহ তাআলা দুনিয়াজুড়ে সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপমান, অবমাননা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।