যেভাবে কুরআন নাজিল হয়
কুরআন আল্লাহর বিধান। যা যুগে যুগে প্রত্যেক নবি-রাসুলের নিকট এসেছে। কোনোটি কিতাব আকারে আবার কোনোটি সহিফা আকারে। কিন্তু কুরআন অবতীর্ণে এ ওহি প্রেরণের মাধ্যমগুলো সব এক রকম ছিল না। আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আল্লাহ তাআলা বিভিন্নভাবে ওহির মাধ্যমে কুরআনুল কারিম অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন নাজিলে ওহির পদ্ধতিগুলো তুলে ধরা হলো-
অবতীর্ণ হওয়ার দিক থেকে ওহি তিন ধরনের-
০১. ওহিয়ে ক্বালবি : এ ওহি হলো যা কোনো প্রকার মাধ্যম ছাড়া আল্লাহর নিকট থেকে সরাসরি নবির হৃদয় স্পটে এসে স্থান নেয়। এ পদ্ধতির ওহি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিদ্রিত ও জাগ্রত উভয় অবস্থায় নাজিল হতো।
০২. ওহিয়ে কালামি : এমন ওহি যা আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি নবিকে প্রদান করা হয়। আল্লাহর কুদরতি কালামের ধ্বনি শুনতে থাকেন।
০৩. ওহিয়ে মালাকি : এমন ওহি যা কোনো ফিরিশতার মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়ে থাকে। কুরআন নাজিলে ওহির বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ তার সঙ্গে কথা বলবেন ওহির মাধ্যম ব্যতিত, পর্দার অন্তরাল ব্যতিত বা এমন দূত ব্যতিত, যে দূত তারই অনুমতিক্রমে, তিনি যা চান, তা ব্যক্ত করেন।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৫১)
কুরআন অবতীর্ণে ওহির পদ্ধতিসমূহ
ক. নিরবচ্ছিন্ন ঘণ্টাধ্বনি : ওহি নাজিলের পূর্ব মুহূর্তে মৌমাছির গুঞ্জন, পাথরের ওপর লোহার শিকল পড়ার আওয়াজ বা এক ধরনের নিরবচ্ছিন্ন ঘণ্টাধ্বনির আওয়াজ শুনতেন। যার অগ্র-পশ্চাৎ অনুমান করা যেত না।
খ. ফিরিশতার মানব আকৃতিতে আগমন : হজরত জিবরিল আমিন কখনো কখনো মানুষের আকৃতিতে ওহি নিয়ে আসতেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় হজরত দাহিয়াতুল ক্বালবির আকৃতি ধারণ করে আসতেন। অন্য মানুষের আকৃতিতেও আসতেন। সর্বাপেক্ষা সহজ পদ্ধতির ওহি ছিল এটি।
গ. ফিরিশতা নিজ আকৃতিতে আগমন : কখনো কখনো হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম নিজ আকৃতিতেই ওহি নিয়ে অবতরণ করতেন। এ ধরণের ওহি রাসুলের জীবনে তিনবার ঘটেছে।
ঘ. সত্য স্বপ্ন : কখনো কখনো স্বপ্নের মধ্যেও ওহি আসত। নবিগণের স্বপ্নও ওহি। ঘুমন্ত অবস্থা নবিগণের চোখ বন্ধ থাকতো কিন্তু হৃদয় জাগ্রত থাকতো।
ঙ. আল্লাহর সরাসরি বাক্যালাপ : হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ন্যায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি বাক্যালাপ করার গৌরব অর্জন করেন। তিনি জাগ্রত অবস্থায় মিরাজের সময় সরাসরি ওহির বিশেষ মর্যাদা লাভ করেন।
চ. ওহি হৃদয়ে ফুঁকে দেয়া : কখনো কখনো হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম কোনো অস্তিত্ব ধারণ না করেই অদৃশ্যে থেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়ে ওহি ফুঁকে দিতেন।
এ ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ওহি নাজিলের ধরণ ও পদ্ধতি। যা আমাদের জন্য দুনিয়ার জিন্দেগিতে জীবন ব্যবস্থা ও আখিরাতের সুসংবাদ ও সতর্ককারী বিষয়।
সুতরাং কুরআন নাজিল হয়েছে মানুষের জন্য জীবনবিধান হিসেবে। যার ওপর আমল করা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ওপর ফরজ। হে আল্লাহ! আপনি কুরআন ও হাদিসের ওপর আমল করে ওহির জ্ঞান অর্জনের তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবি দান করুন। আমিন।
জাগো ইসলামে লেখা পাঠাতে ই-মেইল : [email protected]
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/আরআইপি